সরকারের ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দামের সাপেক্ষে দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তবে এই মূল্যবৃদ্ধি সাময়িক। তিনি বলেন, বাজারে সরবরাহ ও প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অদূর ভবিষ্যতে দাম কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

আজ মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ভোজ্যতেলের আমদানি ও সরবরাহসহ সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা-সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

এদিকে আজ সচিবালয়ে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর সয়াবিন তেল ও পাম তেলের নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে, সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৮৯ টাকায় বিক্রি হবে।

অন্যদিকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৫৭ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৬৯ টাকা। খোলা পাম তেলের দামও লিটারে ১৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬৯ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯২২ টাকা, আগে যা ছিল ৮৫২ টাকা।

ভোজ্যতেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে। দাম সহনীয় রাখতে অন্তর্বর্তী সরকার গত ১৭ অক্টোবর ভ্যাটের এই হার কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে। পরে নভেম্বরে আরও ৫ শতাংশ ভ্যাট ছাড় দেওয়া হয়। ভ্যাট ছাড়ের এই মেয়াদ ছিল গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ভ্যাট ছাড়ের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ভোজ্যতেল কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়ানোর আবেদন জানায়।

আজ সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এত দিন সরকার প্রতি মাসে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা রাজস্ব ছাড় দিয়েছে। রমজান পর্যন্ত গত কয়েক মাসে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার পরিচালনার ব্যয়ের কথা বিবেচনা করে এভাবে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারদর, ট্যারিফ কমিশনের ফর্মুলা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাদের হিসাবে (ফর্মুলা) তেলের দাম হওয়ার কথা প্রায় ১৯৭ টাকা। যদিও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬৯ টাকা।

মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘ভোক্তাপর্যায়ে আজ যে মূল্য বৃদ্ধি করতে বাধ্য হলাম, আমি মনে করছি, এই বাধ্যবাধকতা সাময়িক। অদূর ভবিষ্যতে এই দাম কমানো সম্ভব হবে।’

দেশে ৩০ লাখ টন ভোজ্যতেলের চাহিদা আছে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এর মধ্যে ৭ লাখ টন স্থানীয় শর্ষে থেকে আসে। সেই সঙ্গে নতুন করে ৬ লাখ টন রাইসব্র্যান বা কুঁড়ার তেল বাজারে আনতে পেরেছি আমরা। প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে সেনাকল্যাণ সংস্থার তেলও বাজারে আসছে।

শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আরও দুটি তেল কোম্পানি সম্প্রতি উৎপাদনে এসেছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে আরও দু-তিনটি কোম্পানি ভোজ্যতেল উৎপাদনে আসবে। এভাবে বাজারে পরিসর বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা অতিরিক্ত প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এ ছাড়া গরমকালে বাজারে পাম তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।’ ফলে সয়াবিনের ওপরে চাপ কমবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সয়াবিনের দাম নিয়ে বিভিন্ন বিশ্লেষণ করতে সরকার একটু সময় নিয়ে ফেলেছে বলে মন্তব্য করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। ভ্যাট অব্যাহতি আরেকটু দীর্ঘায়িত করা যেত কি না, সরকার সেই চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেষমেশ দেখা গেল, এ মুহূর্তে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া সরকারের জন্য খুবই সংবেদনশীল বিষয়।

বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এ নিয়ে সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, চালের দাম বেশ কিছুদিন ধরেই বাড়তি। আর সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে বোরো ধান বাজারে আসবে। মূলত চিকন চাল, যেটা মিনিকেট বা নাজির বলা হয়, সেটা বোরো ধান থেকে আসে। সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই নতুন বোরো ধান বাজারে এলে চালের দাম আরও সহনীয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ব ণ জ য উপদ ষ ট ভ জ যত ল ব যবস য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বেঙ্গালুরুতে ভারতের, কলম্বোতে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ

বাছাই পর্ব পেরিয়ে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ। আট দলের এই প্রতিযোগিতা হচ্ছে হাইব্রিড মডেলে। ভারতের চারটি ভেনু‌্যতে হবে সাত দলের সব ম‌্যাচ। পাকিস্তান নিজেদের ম‌্যাচগুলো খেলবে কলম্বোতে। 

৩০ সেপ্টেম্বর ভারত ও শ্রীলঙ্কার ম‌্যাচ দিয়ে শুরু হবে নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ম‌্যাচটি হবে বেঙ্গালুরুর চিন্নাসোয়ামি স্টেডিয়ামে। একই ভেনু্যতে বাংলাদেশ ও ভারত খেলবে। ২৬ অক্টোবর ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিপক্ষে কলম্বোতে খেলবে ২ অক্টোবর। 

রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে আট দলের টুর্নামেন্টে প্রথম পর্বে ম্যাচ হবে মোট ২৮টি। ভারতসহ ২০২২-২৫ আইসিসি নারী চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ ছয় দল সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে বিশ্বকাপে। অন্য পাঁচ দল হলো- অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা। বাছাই পর্ব পেরিয়ে মূল পর্বের টিকেট পেয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান।

আইসিসি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সূচি প্রকাশ করেনি।

পাকিস্তান পরের ধাপে কোয়ালিফাই করার ওপর নির্ভর করবে নক আউটের ভেনু্য। পাকিস্তান নক আউট পর্বে উঠলে শ্রীলঙ্কায় ম্যাচ হবে। নয়তো নক আউট পর্বের সব ম্যাচই হবে ভারতে। সাম্ভাব্য সূচিও চূড়ান্ত হয়েছে। ২৯ অক্টোবর গৌহাটি কিংবা কলম্বোয় প্রথম সেমিফাইনাল। পরদিন ৩০ অক্টোবর দ্বিতীয় সেমিফাইনাল বেঙ্গালুরুতে। ২ নভেম্বর বেঙ্গালুরু বা কলম্বোয় হবে ফাইনাল। 

প্রসঙ্গত, সবশেষ আইসিসির ইভেন্ট চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচও হয়েছিল হাইব্রিড মডেলে। পাকিস্তানে বসেছিল সব ম্যাচ। ভারত সফর না করায় তাদের ম্যাচ হয়েছিল দুবাইয়ে।
 

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ