মডেল মেঘনা আলমকে আটক এবং তাঁকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একজন মন্তব্য করেছিলেন, এ ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ‘পচা শামুকে পা কাটা’র মতো হতে পারে। ব্যক্তিপর্যায়ের একটি ‘সাধারণ’ বিষয়কে ‘জাতীয় ইস্যু’তে পরিণত করা এবং এর ফলে সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া—এমন কিছু বোঝাতেই তিনি হয়তো মন্তব্যটি করেন। বাস্তবে তেমনটাই ঘটেছে আর এর মধ্য দিয়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং খোদ সরকারসংশ্লিষ্ট কারও কারও ‘অপরিণামদর্শিতা’ আবারও জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে।

২.

একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মডেল মেঘনা আলমের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের একটি শক্তিশালী দেশের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। পরে সেই সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়। এর জেরেই মেঘনা আলমকে আটক করা হয়।

গত বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে আটক করতে যায় ডিবি পুলিশ। এ সময় তিনি ফেসবুক লাইভে ছিলেন। সেই লাইভে তিনি বলছিলেন, তাঁর দরজার বাইরে পুলিশ পরিচয়ধারীরা তাকে নিতে এসেছে। মেঘনা আলমের ফেসবুক লাইভ চলার সময়ই তাঁর বাসায় পুলিশ প্রবেশ করে এবং তখন লাইভ বন্ধ হয়ে যায়।

আটক হওয়ার আগমুহূর্তে সেই লাইভে মেঘনা আলম বলছিলেন, ‘বাসায় কিছু মানুষ আক্রমণ করেছে। তারা নিজেদেরকে পুলিশ পরিচয় দিচ্ছে। আমি বলেছি থানায় এসে কথা বলব, তারা কথা শুনছে না।’ লাইভ ভিডিওতে মেঘনা আলমকে দরজার বাইরে থাকা লোকদের উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা আমার দরজা ভাঙার চেষ্টা করছেন।...’ (বিবিসি বাংলা, ১১ এপ্রিল ২০২৫)

ঘটনাক্রম থেকে স্পষ্ট, পুলিশ সদস্যরা জোরপূর্বক বাসায় প্রবেশ করে মেঘনা আলমকে তুলে নিয়ে যান। তাঁকে তুলে নেওয়ার বিষয়টি থানা ও ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। এর ফলে তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে কি না, এমন একটি আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।

বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে তুলে নেওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় তাঁকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মেঘনা আলমকে কারাগারে পাঠানো হয়। আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারের পাঠানোর পরও পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কোনো কিছু জানানো হয়নি।

মেঘনা আলমকে যেভাবে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেই ঘটনাটি জানাজানি হলে দেশে-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। দেশের মানবাধিকারকর্মীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-নিন্দা জানায়। এতে সরকারের ওপর একরকম দৃশ্যমান চাপ তৈরি হয়।

মেঘনা আলমের গ্রেপ্তার নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিট্রন পুলিশ (ডিএমপি) শুক্রবার তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেয়। এতে মেঘনা আলমকে অপহরণ করার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সম্পর্ক মিথ্যাচার ছড়ানোর মাধ্যমে আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক অবনতির অপচেষ্টা করা এবং দেশকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে মেঘনা আলমকে সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে।...’

পুলিশের এ ‘বিবৃতি’টি ছিল অস্পষ্ট ও অসংগতিপূর্ণ । এতে একধরনের ঢালাও অভিযোগ করা হয়েছে, যেখানে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে মেঘনা আলমকে কারাগারে পাঠানোর বিষয়টিকে তারা ‘নিরাপত্তা হেফাজত’ বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে; ‘সকল আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ’ করার দাবিটি ছিল অসত্য ও বানোয়াট।

লক্ষণীয় হলো, পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া ওই পোস্টটি শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এর ফলে মেঘনা আলমকে আটক ও কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্তে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সায় বা সম্মতি আছে, এমনটাই প্রতীয়মান হয়েছিল। তবে শফিকুল আলম পরে সেই পোস্টটি সরিয়ে নেন।

৩.

মেঘনা আলমকে যেভাবে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেই ঘটনাটি জানাজানি হলে দেশে-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। দেশের মানবাধিকারকর্মীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিষয়টি নিয়ে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা-নিন্দা জানায়। এতে সরকারের ওপর একরকম দৃশ্যমান চাপ তৈরি হয়।

এ রকম অবস্থায় রোববার (১৩ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) প্রধানের পদ থেকে রেজাউল করিম মল্লিককে সরিয়ে দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এরপর দুপুরের দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, সেটা সঠিক হয়নি। (প্রথম আলো অনলাইন, ১৩ এপ্রিল ২০২৫)

আইন উপদেষ্টার এ বক্তব্যের পর যে প্রশ্নগুলো সামনে আসে তা হলো, যে প্রক্রিয়ায় আটক করা হয়েছে, সেটা সঠিক না হলে মেঘনা আলমকে আটক রাখা হচ্ছে কেন? এ আটকাদেশ কি বেআইনি বা অবৈধ নয়? তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে সেই অভিযোগে কেন মামলা করা হয়নি?

মেঘনা আলমকে আটকের প্রক্রিয়া ও আটকাদেশের বৈধতা নিয়ে তাঁর বাবা বদরুল আলম হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মেঘনা আলমকে পরোয়ানা ছাড়া গ্রেপ্তার, কারণ উল্লেখ না করে গ্রেপ্তার, ২৪ ঘণ্টার বেশি গোয়েন্দা কার্যালয়ে হেফাজতে রাখা এবং তাঁর মুক্তি প্রশ্নে রুল দেন হাইকোর্ট। বিশেষ ক্ষমতা আইনে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে মেঘনা আলমকে দেওয়া আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়। (মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশ কেন অবৈধ নয়: হাইকোর্ট, প্রথম আলো অনলাইন, ১৩ এপ্রিল ২০২৫)

৪.

মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে সুনির্দিষ্ট সেই অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যেত এবং ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করে কারাগারে পাঠানোর ফলে এটি ‘জাতীয় ইস্যু’তে পরিণত হয়েছে। এর কারণ, বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত ও সমালোচিত আইনগুলোর একটি হলো বিশেষ ক্ষমতা আইন।

একটি বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৭৪ সালে এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ আইনের বড় সমস্যা হলো, এ আইনে আটক ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পান না; আইনের পরিধি এতটাই বিস্তৃত, সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই যে কাউকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে আটকে রাখা যায়। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দমনের জন্য বিভিন্ন সময়ে এ আইনটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, এ রকম বহু অভিযোগ রয়েছে।

আরও পড়ুনগণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতি প্রশ্নবিদ্ধ১৩ এপ্রিল ২০২৫

অতীতে বিশেষ ক্ষমতা আইন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে; সাধারণ নাগরিকের ক্ষেত্রে এর প্রয়োগ ছিল বিরল। তা ছাড়া নানা রকম সমালোচনার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে এ আইন প্রায় ‘অব্যবহৃত’ ছিল। এ রকম অবস্থায় একজন নারীর বিরুদ্ধে এ আইনের প্রয়োগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে মেঘনা আলমকে আটকের পর কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, ‘এ কালো আইন ঐতিহাসিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে অভিযোগ ও বিচারিক তত্ত্বাবধান ছাড়াই নির্বিচার আটকের জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াগত সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান ও প্রয়োগ গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।’ (প্রথম আলো অনলাইন, ১২ এপ্রিল ২০২৫)

মেঘনা আলমকে যেভাবে বা যে প্রক্রিয়ায় আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তা নাগরিক অধিকার হরণে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির চরম অভাবকে স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে তা আমাদের আইনি কাঠামোর বিশ্বাসযোগ্যতা, মানবিকতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের গণতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতিকে ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমের আটকাদেশকে ফ্যাসিবাদী তৎপরতা ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ বলে অভিহিত করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। তারা বলেছে, বিশেষ ক্ষমতা আইন একটি ফ্যাসিবাদী আইন। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্রে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ নিপীড়নমূলক কোনো আইন থাকতে পারে না। জুলাইয়ে ছাত্র–জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার আবার ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। (প্রথম আলো অনলাইন, ১২ এপ্রিল ২০২৫)

৫.

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমকে আটক করা নিয়ে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরী বলেন, ‘মেঘনা আলমের সঙ্গে এই আইন প্রথম ব্যবহৃত হচ্ছে, বিষয়টা তা নয়।’ (প্রথম আলো অনলাইন, ১৫ এপ্রিল ২০২৫)। তাঁর এ বক্তব্যের পর প্রশ্ন ওঠে, একটি বিতর্কিত আইন আগে ব্যবহৃত হয়েছে, শুধু এই যুক্তিতেই কি সেটা বৈধ বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে? এ রকম হলে বিগত স্বৈরাচারী আমলের অনেক কিছুই এখন বৈধ বা গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিতে হবে!

গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে আট মাসের বেশি সময় আগে দায়িত্ব নিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এ সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা হলো, তারা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর বা সংস্কার করবে। এ রকম অবস্থায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মতো একটি ‘স্বৈরাচারী’ আইনের প্রয়োগ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আইন–আদালতসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সংস্কৃতি যে এখনো বহাল রয়েছে, এটা খুবই স্পষ্ট।

লক্ষণীয় হলো, বেশ কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁরা দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের এ রকম প্রয়োগ খুবই হতাশাজনক।

এ আইন গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি হুমকিস্বরূপ, এটা তাঁদের অজানা নয়। এই আইন বাতিল না করলে মানবাধিকার নিয়ে তাঁদের অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং জনমনে এমন ধারণাই পোক্ত হবে, ‘যে যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ’।

মনজুরুল ইসলাম প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব শ ষ ক ষমত ব যবহ র কর ন উপদ ষ ট র আটক দ শ প রথম আল ব যবহ ত সরক র র অবস থ য় র জন য ত হয় ছ ফ সব ক আটক ক এ আইন আইন র আলম র এ রকম ব ষয়ট আটক র

এছাড়াও পড়ুন:

রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের রাউজানে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফেরার পথে যুবদল কর্মী আলমগীর আলমকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার যুবক আলমগীর আলমের সহযোগী ছিলেন। গতকাল শনিবার রাতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার যুবকের নাম মুহাম্মদ রাজু (২৮)। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার মৃত নুর নবীর ছেলে। পুলিশ জানিয়েছে, আলমগীর আলমকে গুলি করার সময় তাঁর পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন মুহাম্মদ রাজু।

গত ২৫ অক্টোবর বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। আলমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঢালারমুখ এলাকায়।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আলম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেছেন। নিহত আলমের শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া যায়।

রাউজান থানা-পুলিশ জানায়, আলম নিহত হওয়ার দুই দিন পর তাঁর বাবা আবদুস সাত্তার বাদী হয়ে ২১ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৬ থেকে ৭ জনকে আসামি করে রাউজান থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে রাজুর নাম নেই। তবে ঘটনার তদন্তে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে এ মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁরা হলেন রাউজান কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ রাসেল খান (৩২) ও পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতপাড়ার বাসিন্দা ও যুবদল কর্মী মুহাম্মদ হৃদয় (৩০)।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, যখন অস্ত্রধারীরা আলমগীর আলমকে গুলি করার জন্য কবরস্থানে লুকিয়ে ছিলেন, তখন আলমগীর আলমের পেছনে একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন রাজু। তিনি আলমগীরের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। তবে হত্যাকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। রোববার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন আলম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ রেহানার বিরুদ্ধে করা প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় রাজউকের সদস্য খুরশীদ গ্রেপ্তার
  • রাউজানে যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তাঁর সহযোগী গ্রেপ্তার