দুই বংশের ৫৬ বছরের বিরোধ মেটাতে ‘শান্তি কমিটি’ গঠনের পরও সংঘর্ষ, আহত ৩০
Published: 15th, April 2025 GMT
আধিপত্য ধরে রাখাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির বিরোধ ৫৬ বছরের। এই বিরোধে দুই পক্ষের ১৪ জন নিহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে শতাধিক। একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়া বছর পার হয়েছে—এমন সময় মনে করতে পারেন না গ্রামবাসী।
সর্বশেষ দুই বংশের বিরোধ মেটাতে গ্রামবাসীর উদ্যোগে ‘শান্তি কমিটি’ করা হয়েছিল। এর মধ্যেই আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজনকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁরা হলেন মিলন মিয়া (৫৫), তানিম মিয়া (২০), পাভেল মৃধা (৩০), আলী আহমদ (৭৫), মাশুকুর মিয়া (৪৫), আঙ্গুর মিয়া (৬০), বুলবুল মিয়া (৩২), রুবেল মিয়া (৩৫), শাওন মিয়া (১৯) ও মো.
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির বিরোধ মূলত এলাকায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শন নিয়ে। আধিপত্য ধরে রাখাকে উভয় বংশের লোকজন আভিজাত্য মনে করেন। বর্তমানে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। সরকারবাড়ির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ সরকার।
গত ঈদুল আজহার আগের দিন ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত কর্তাবাড়ির নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জুলাই মারা যান। ওই ঘটনার সূত্র ধরে কয়েক দিন পর হওয়া সংঘর্ষে সরকারবাড়ির ইকবাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি মারা যান। দুই বাড়ির দুজন খুন হওয়ার পর পাল্টাপাল্টি হত্যা মামলা হয়। দুই মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন গ্রামের বাইরে অবস্থান করছিলেন। কয়েক মাস আগে উভয় পক্ষ জামিন পায়।
গ্রামের বাসিন্দারা আরও জানান, জামিন পাওয়ার পর সরকারবাড়ির লোকজন গ্রামে ফিরলেও কর্তাবাড়ির লোকজন ফিরতে পারছিলেন না। দুই সপ্তাহ আগে কয়েক গ্রামের লোকজন দলবদ্ধ হয়ে দুই বংশের লোকদের নিয়ে গ্রামে শান্তি কমিটি করেন। শান্তি কমিটিকে দুই বংশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ না হওয়ার বিষয়ে নজর রাখা এবং দুই পক্ষকে গ্রামে ফিরিয়ে শান্তিতে বসবাস নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। শান্তি কমিটি হওয়ার পর কর্তাবাড়ির লোকজন দুই দিন আগে গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সোমবার থেকে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। এ অবস্থায় আজ বিকেলে উভয় পক্ষ দা ও বল্লম নিয়ে কৃষিজমিতে নেমে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুনভৈরবে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত৩১ অক্টোবর ২০২৪জানতে চাইলে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে থাকা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘জামিনে মুক্ত হয়েছি দুই মাস আগে। অথচ বাড়ি যেতে পারেনি। শান্তি কমিটি করার পর আজ বাড়িতে যাই। বাড়িতে যাওয়ার পর হামলার শিকার হলাম।’
সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সরকারবাড়ির নেতৃত্বে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ এলাকাছাড়া। তাঁকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। শেফায়েত উল্লাহর অবর্তমানে নেতৃত্বে থাকা আল আমিন বলেন, ‘শান্তি কমিটি হয়েছে সত্য। কর্তাবাড়ির লোকজন গ্রামে ফেরার কথা—তা–ও সত্য। কথা ছিল শান্তি কমিটির মাধ্যমে তারা গ্রামে আসবে। কিন্তু শান্তি কমিটির লোকজন ছাড়া নিজেরা ইচ্ছেমতো গ্রামে আসতে শুরু করে। গ্রামে এসে আমাদের উসকাতে থাকে এবং হামলা চালায়।’
সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেল) নাজমুস সাকিব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি গ্রামের দুটি বংশের শত্রুতা কয়েক প্রজন্মের। গ্রাম দুটিকে নিয়ে পুলিশকে সর্বদা তটস্থ থাকতে হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ড় র ল কজন কর ত ব ড় র স ঘর ষ হওয় র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দেশবাসী দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়: আমীর খসরু
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশের মানুষ ২০ বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি এবং নতুন প্রজন্মও ভোট দিতে পারেনি। তাই, তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণ চায়।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে লন্ডন থেকে দেশে ফিরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক পথেই এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামে জনগণের যে ত্যাগ, সে পথেই দেশ অগ্রসর হবে।
প্রধান উপদেষ্টার মতো বিএনপিও রোজার আগে বিচার ও সংস্কারের অগ্রগতি চায় কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দলটির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সংস্কারের বিষয়টি ঐকমত্যের ওপর নির্ভরশীল। এ বিষয়ে ড. ইউনূস, তারেক রহমান এবং বিএনপির সকল নেতৃবৃন্দ আগেই বলেছেন।
তিনি মনে করেন, ঐকমত্য হতে এক থেকে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বিচার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্ভর করে। বিচার বিভাগ বিচার করবে এবং বিচারের আওতায় আনারও বিষয় আছে। যারা বিচারের আওতায় আসবে, তার জন্য আরো প্রায় ছয় মাস সময় আছে। আর যারা এর মধ্যে আসবে না, তাদের জন্য তো আগামী সরকার আছে।
সরকারের কি এখন নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ডের দিকে এগিয়ে যাওয়া দরকার আছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন ছাড়া গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক এবং জনগণের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আর কোনো পথ নেই। এ বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করছেন।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিশেষ সম্পর্ক করছে, বিএনপি বিষয়টি কীভাবে দেখছে? এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, “আমি একটা জিনিস মনে করি, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, তাহলে এখানে সবার মতামত নেওয়ার সুযোগ আছে। সুতরাং, সবাই তাদের মতামত দিতে পারে। আমার মনে হয়, এটাই আমাদের গণতন্ত্রের বড় পাওয়া, সবাই নিজেদের মতামত দেবে। এর মধ্যে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”
বিএনপি এত দিন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বললেও এখন কেন ফেব্রুয়ারিতে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনেক সময়। এবং এত সময়ও লাগার কোনো কারণ নেই। বিএনপি আগে ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব সমস্যার সমাধান করে নির্বাচনের কথা বলেছে। সুতরাং, ফেব্রুয়ারি আরো দীর্ঘ সময়। তবে, যদি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হয়, তাতেও কোনো সমস্যা নেই।
আমীর খসরু বলেন, “আমি আগেও বলেছি, যত বেশি ঐকমত্যের মাধ্যমে আমরা নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারব, সেটা জাতির জন্য তত ভালো। আমরা যে ঐকমত্যের মধ্যে এসেছি, এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়।”
তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য থাকার ফলেই আমরা স্বৈরাচারকে বিদায় করতে পেরেছি। সুতরাং, আমরা চেষ্টা করব, যেখানেই সম্ভব ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব।”
তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার ওয়ান-টু-ওয়ান বৈঠকে নির্বাচনে নিরপেক্ষতার বিষয়ে কোনো আলোচনা বা বার্তা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখনই নির্বাচন শুরু হবে, তখনই সরকার নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের ধারণা হলো— একটি নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং, নির্বাচনে সেই নিরপেক্ষতা সরকার নিশ্চিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে আমীর খসরু বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমান বলেছেন, এখানে যতটুকু ঐকমত্য হবে, সংস্কারও ততটুকুই হবে। বাকি অংশটা নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির কাছে নিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটি এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না, নির্বাচনের পরেও এটি চলমান থাকবে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক