আধিপত্য ধরে রাখাকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির বিরোধ ৫৬ বছরের। এই বিরোধে দুই পক্ষের ১৪ জন নিহত হয়েছেন। মামলা হয়েছে শতাধিক। একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়া বছর পার হয়েছে—এমন সময় মনে করতে পারেন না গ্রামবাসী।

সর্বশেষ দুই বংশের বিরোধ মেটাতে গ্রামবাসীর উদ্যোগে ‘শান্তি কমিটি’ করা হয়েছিল। এর মধ্যেই আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দুই পক্ষ। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে সাতজনকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁরা হলেন মিলন মিয়া (৫৫), তানিম মিয়া (২০), পাভেল মৃধা (৩০), আলী আহমদ (৭৫), মাশুকুর মিয়া (৪৫), আঙ্গুর মিয়া (৬০), বুলবুল মিয়া (৩২), রুবেল মিয়া (৩৫), শাওন মিয়া (১৯) ও মো.

তৌহিদ (২২)। তাঁরা কর্তাবাড়ির পক্ষের। ৩০ জনের মধ্যে সরকারবাড়ির সাতজন আহত হন। সরকারবাড়ির আহত ব্যক্তিরা ভৈরবের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্তাবাড়ি ও সরকারবাড়ির বিরোধ মূলত এলাকায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শন নিয়ে। আধিপত্য ধরে রাখাকে উভয় বংশের লোকজন আভিজাত্য মনে করেন। বর্তমানে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও সাদেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন। সরকারবাড়ির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ সরকার।

গত ঈদুল আজহার আগের দিন ফুটবল খেলা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আহত কর্তাবাড়ির নাদিম চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জুলাই মারা যান। ওই ঘটনার সূত্র ধরে কয়েক দিন পর হওয়া সংঘর্ষে সরকারবাড়ির ইকবাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি মারা যান। দুই বাড়ির দুজন খুন হওয়ার পর পাল্টাপাল্টি হত্যা মামলা হয়। দুই মামলার আসামিরা দীর্ঘদিন গ্রামের বাইরে অবস্থান করছিলেন। কয়েক মাস আগে উভয় পক্ষ জামিন পায়।

গ্রামের বাসিন্দারা আরও জানান, জামিন পাওয়ার পর সরকারবাড়ির লোকজন গ্রামে ফিরলেও কর্তাবাড়ির লোকজন ফিরতে পারছিলেন না। দুই সপ্তাহ আগে কয়েক গ্রামের লোকজন দলবদ্ধ হয়ে দুই বংশের লোকদের নিয়ে গ্রামে শান্তি কমিটি করেন। শান্তি কমিটিকে দুই বংশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ না হওয়ার বিষয়ে নজর রাখা এবং দুই পক্ষকে গ্রামে ফিরিয়ে শান্তিতে বসবাস নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। শান্তি কমিটি হওয়ার পর কর্তাবাড়ির লোকজন দুই দিন আগে গ্রামে ফিরতে শুরু করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সোমবার থেকে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হয়। এ অবস্থায় আজ বিকেলে উভয় পক্ষ দা ও বল্লম নিয়ে কৃষিজমিতে নেমে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুনভৈরবে দুই বংশের মধ্যে সংঘর্ষে একজন নিহত৩১ অক্টোবর ২০২৪

জানতে চাইলে কর্তাবাড়ির নেতৃত্বে থাকা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘জামিনে মুক্ত হয়েছি দুই মাস আগে। অথচ বাড়ি যেতে পারেনি। শান্তি কমিটি করার পর আজ বাড়িতে যাই। বাড়িতে যাওয়ার পর হামলার শিকার হলাম।’

সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর সরকারবাড়ির নেতৃত্বে থাকা ইউপি চেয়ারম্যান শেফায়েত উল্লাহ এলাকাছাড়া। তাঁকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি। শেফায়েত উল্লাহর অবর্তমানে নেতৃত্বে থাকা আল আমিন বলেন, ‘শান্তি কমিটি হয়েছে সত্য। কর্তাবাড়ির লোকজন গ্রামে ফেরার কথা—তা–ও সত্য। কথা ছিল শান্তি কমিটির মাধ্যমে তারা গ্রামে আসবে। কিন্তু শান্তি কমিটির লোকজন ছাড়া নিজেরা ইচ্ছেমতো গ্রামে আসতে শুরু করে। গ্রামে এসে আমাদের উসকাতে থাকে এবং হামলা চালায়।’

সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (ভৈরব-কুলিয়ারচর সার্কেল) নাজমুস সাকিব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একটি গ্রামের দুটি বংশের শত্রুতা কয়েক প্রজন্মের। গ্রাম দুটিকে নিয়ে পুলিশকে সর্বদা তটস্থ থাকতে হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ড় র ল কজন কর ত ব ড় র স ঘর ষ হওয় র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ