বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘোষিত গ্যাসের নতুন মূল্যহারকে বৈষম্যমূলক আখ্যায়িত করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)। সংগঠনটি বৈষম্যমূলক মূল্যহার অতিসত্বর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে।
এদিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (ইউরোচ্যাম) নতুন ঘোষিত গ্যাসের দাম বৈষম্যমূলক, অন্যায় এবং বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারাও দ্রুত এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া গতকাল বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরীর সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ ইকােনমিক জােনস ইনভেস্টর অ্যাসােসিয়েশন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে। সমিতির নেতারা জানান, এ সিদ্ধান্ত বিনিয়াগ, উৎপাদন ব্যায় এবং রপ্তানি প্রতিযােগিতার সক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তারাও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন। 

গত রোববার নতুন শিল্পে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ঘনমিটারপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা করা হয়। নতুন শিল্পের পাশাপাশি এখন যারা অনুমোদিত লোডের বেশি গ্যাস ব্যবহার করছেন, সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকেও ৩০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা দরে বিল দিতে হবে। পাশাপাশি নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ৩১ দশমিক ৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 
ফিকি বলেছে, নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন গ্রাহক, নতুন গ্যাস সেলস এগ্রিমেন্ট, অনুমোদিত লোডের চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারকারী এবং প্রতিশ্রুত গ্রাহকদের বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে, এমনকি তা একই খাতের কোম্পানি হলেও। এই দ্বৈত মূল্যনীতি শুধু ন্যায্য প্রতিযোগিতার নীতি লঙ্ঘন করে না, বরং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি অনিশ্চিত করে।
এতে বলা হয়, ভিন্ন ভিন্ন দামের মডেল নজিরবিহীন এবং এর কারণে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে। একই খাতে পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে আলাদা জ্বালানি খরচের কারণে উৎপাদন খরচে পার্থক্য তৈরি হবে এবং এ ধরনের মূল্য কাঠামো সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির নীতির পরিপন্থি। সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকার যখন বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন শুধু নতুন শিল্প কিংবা নতুন বিনিয়োগকারীদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত একটি বিপরীতমুখী আচরণ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করবে, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে এবং বিনিয়োগ সম্মেলনের মতো ইতিবাচক পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্জনকে ধ্বংস করবে।
ফিকি সভাপতি জাভেদ আখতার বলেন, ‘আমরা জ্বালানির চাহিদা ও তা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে বিইআরসিকে নতুন গ্যাসের মূল্য কাঠামো পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ইউরোচ্যামের প্রতিক্রিয়া 
গ্যাসের নতুন দামের মডেলটিকে বৈষম্যমূলক, অন্যায় এবং বিভ্রান্তিকর উল্লেখ করে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর ব্যবসায়ী সংগঠন ইউরোচ্যাম বাংলাদেশ জানিয়েছে, এটি বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে এবং নতুন ও সম্প্রসারণশীল শিল্পের ওপর উচ্চমূল্য আরোপের মাধ্যমে বিনিয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করে। 
ইউরোচ্যাম বাংলাদেশের চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের আস্থা নিশ্চিত এবং শিল্প সম্প্রসারণে সহায়তা করার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ জ্বালানি শুল্ক কাঠামো বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। প্রস্তাবিত এই কাঠামো ব্যবসার ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত করার হুমকি তৈরি করছে এবং সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের কাছে নেতিবাচক বার্তা পাঠাচ্ছে।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউর চ য ম র জন য ব যবহ

এছাড়াও পড়ুন:

পাইকারি বিদ্যুতের দামে সমতা চায় ডেসকো-ওজোপাডিকো

পাইকারি বিদ্যুতের মূল্যহার সমন্বয়ের আবেদন করেছে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ও ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। অন্য বিতরণ কোম্পানির তুলনায় ৩৩ কেভিতে বেশি দর কমিয়ে সমান করার জন্য কোম্পানি দুটি সম্প্রতি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন-বিইআরসিতে এ আবেদন করে। তবে বিইআরসি বলেছে, গণশুনানি ছাড়া মূল্য পরিবর্তন করার কোনো সুযোগ নেই। 

ঢাকা শহরের উত্তরাংশ ও টঙ্গী এলাকায় বিতরণের দায়িত্বে থাকা ডেসকো ঢাকার অপর বিতরণ কোম্পানি ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ-ডিপিডিসির সমান করার জন্য চিঠি দেয়। পশ্চিম-দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওজোপাডিকো রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি-নেসকোর সমান করার আবেদন করেছে। 

৩৩ কেভিতে ডিপিডিসির তুলনায় ইউনিটপ্রতি প্রায় ৩ পয়সা হারে বাড়তি বিল দিচ্ছে ডেসকো। এ লাইনের বিদ্যুতে ডিপিডিসি ইউনিটপ্রতি বিল দিচ্ছে ৮ দশমিক ৫৬ পয়সা হারে। একই স্তরে ডেসকোকে পরিশোধ করতে হচ্ছে ৮ দশমিক ৫৮৮০ টাকা। অন্যদিকে নেসকোর তুলনায় ৪২ পয়সা হারে বেশি বিল দিতে হচ্ছে ওজোপাডিকোকে। ৩৩ কেভিতে নেসকো ইউনিটপ্রতি ৭ দশমিক ০৪ টাকা হারে বিল দিলেও ওজোপাডিকোর দিতে হচ্ছে ৭ দশমিক ৪৬ টাকা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি সরকারি-বেসরকারি কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনে ছয়টি বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।

জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যুতের পাইকারি দরে এ পার্থক্য বিদ্যমান। তখন কোম্পানিগুলোর রাজস্ব চাহিদা এবং গ্রাহকসংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে একই ধাপের ভিন্ন ভিন্ন পাইকারি মূল্য নির্ধারণ করে বিইআরসি। তখন ডিপিডিসির রাজস্ব আয় কম হওয়ায় ডেসকোর তুলনায় ৩৩ কেভি লাইনের বিদ্যুতের পাইকারি দাম কম নির্ধারণ করা হয়। একইভাবে নেসকো তখন নতুন কোম্পানি হওয়ায় তাকে স্বনির্ভর হতে দাম কম ধরা হয়। তার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও কোম্পানিভেদে ৩৩ কেভির পার্থক্য থেকে গেছে।

বিইআরসিকে দেওয়া চিঠিতে কোম্পানি দুটি জানায়, বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনায় তাদের লোকসান হচ্ছে। ডেসকো গত অর্থবছরে ৫০৫ কোটি টাকা এবং ওজোপাডিকো ২০৮ কোটি টাকা নিট লোকসান গুনেছে।  

ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ হায়দার বলেন, নেসকো ও আমাদের গ্রাহকের মান একই হলেও ৩৩ কেভি বিদ্যুতের পাইকারি দর তাদের তুলনায় বেশি। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাইকারি বিদ্যুতের দামে সমতা চায় ডেসকো-ওজোপাডিকো
  • বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস বিচ্ছিন্ন, ৯০ কারখানা বন্ধ