‘হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন’
Published: 17th, April 2025 GMT
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীকে অপহরণের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পরও উদ্ধার করা যায়নি। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অপহৃত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাহাড়ি শিক্ষার্থীরা।
অপহরণের শিকার দিব্যি চাকমার মা ভারতী চাকমা গতকাল বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, ‘প্লিজ, মায়ের বুক খালি করবেন না। সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। আমি হাত জোড় করছি। ফিরিয়ে দিন আমাদের সন্তানদের।’
অপহরণের ঘটনায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (সন্তু লারমা–সমর্থিত) পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছে। পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিসিপি চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা ও তাঁর চার বন্ধুকে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। ইউপিডিএফ–প্রসীত পক্ষ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। আমরা তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। একই সঙ্গে তাঁদের সুস্থ অবস্থায় মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
রিশন চাকমা ছাড়া অপহরণের শিকার শিক্ষার্থীরা হলেন চবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো.
এদিকে পাঁচ শিক্ষার্থীকে দ্রুত উদ্ধারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভুবন চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপহরণের ঘটনা মানবাধিকার পরিপন্থী। তা ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীকে অতি দ্রুত সুস্থ শরীরে মুক্তির দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। পাশাপাশি তাঁদের উদ্ধারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানানো হয়।
তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপিডিএফের অন্যতম জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, ‘অপহরণের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আমরা করি না। আমরা সব সময় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের পক্ষে।’
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপহৃত শিক্ষার্থীরা বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। বিজু উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তাঁরা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় তাঁরা খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছু দূরে পানছড়ি খাগড়াছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত যাপন করেন। গতকাল সকালে কুকিছড়া থেকে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামের এক জায়গায় তাঁদের অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহরণ করা হয় অটোরিকশাচালককেও। তবে পরবর্তী সময়ে অটোরিকশাচালককে ছেড়ে দেওয়ার খবর পাওয়া গেলেও সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার পর এখন পর্যন্ত পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ পাওয়া যায়নি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার
আড়াইহাজার উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল ও তার সহযোগী ফজলুল হক ওরফে ফজুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১।
শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার দাউদকান্দি ব্রিজের টোল-প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল (৩৮) আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার মোঃ মকবুল হোসেনের পুত্র। অপরদিকে ফজলুল হক ওরফে ফজু (৩০) একই এলাকার আউয়ালের পুত্র।
গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সূকৌশলে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর বিরুদ্ধে নারয়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী ও মাদক, অপহরণ, চুরি, হত্যা চেষ্টাসহ ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফজলুল হক ফজু এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী, অপহরণ, ছিনতাইসহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদ্বয়কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে র্যাব-১১ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বালিয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল বিগত ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠে।
পরবর্তীতে সে অবৈধ মাদক সেবন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এক সময় সে এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। তখন থেকে সবাই ফেন্সি সোহেল হিসাবে ডাকে। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রির সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। তার পুরো পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ফজলুল হক ফজু এই শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর একান্ত সহযোগী। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত। যারাই তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে তাদেরকেই সোহেল ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে।