দেশে হিমোফিলিয়া রোগীর মাত্র ১০ শতাংশ শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্ত ও চিকিৎসার বাইরে রয়ে গেছেন ৯০ শতাংশ রোগী। শনাক্ত রোগীদের সবাই পরিপূর্ণ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। কিছু ক্ষেত্রে ওষুধের সংকট আছে। দেশের হিমোফিলিয়া রোগীরা কষ্টে আছেন।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে হিমোফিলিয়া আক্রান্ত ব্যক্তি, তাঁদের পরিবারের সদস্য ও চিকিৎসকেরা এ কথা বলেন। বাংলাদেশে হিমোফিলিয়া ব্যবস্থাপনা, সমাজে এ রোগের প্রভাব ও চ্যালেঞ্জবিষয়ক এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশ। বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি রোশ এ গোলটেবিল আয়োজনে সহায়তা করে। বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিসব ২০২৫ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আজ বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস।

হিমোফিলিয়া হচ্ছে জিনগত ত্রুটিজনিত রক্তরোগ। এ ত্রুটি থাকলে রক্ত জমাট বাঁধে না। ক্ষত হলে বা কেটে গেলে রক্ত ঝরতেই থাকে। সামান্য আঘাতে প্রচুর রক্তপাত হতে পারে। সন্ধিতে বা মাংশপেশির ভেতরেও রক্তপাত হয়। রোগটি মূলত পুরুষের।

গোলটেবিল বৈঠকে মূল উপস্থাপনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল সেবা ব্যবস্থাপনা শাখার লাইন ডিরেক্টর জয়নাল আবেদিন বলেন, বৈশ্বিকভাবে পাঁচ হাজার মানুষের মধ্যে একজনের এ রোগ দেখা দেয়। দেশে নিবন্ধিত হিমোফিলিয়ারা রোগী ৩ হাজার ২২৭ জন। রোগের ধরন ও বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনুসারে দেশে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের অনুমিত সংখ্যা ৩০ হাজার। এর অর্থ, বিপুলসংখ্যক রোগী এখনো শনাক্ত হননি। তাঁরা চিকিৎসাও নিচ্ছেন না।

এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে খুব কমসংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা বা সেবা দেওয়া হচ্ছে। ঠিকমতো শনাক্ত করা হলে রোগীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। দেশে হিমোফিলিয়া রোগের চিকিৎসাকেন্দ্র খুবই কম। এসব রোগীর কেন্দ্রীয় কোনো নিবন্ধনব্যবস্থাও নেই।

এ রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা ও কুসংস্কার আছে বলে মন্তব্য করেন হিমোফিলিয়া সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি নাজমুল আলম। নাজমুল আলম নিজে এবং তাঁর পরিবারের আরও ১২ জন হিমোফিলিয়ার রোগী। তিনি জানান, গত এক বছরে ১০ জন হিমোফিলিয়া রোগীর মৃত্যু হয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে দুজনের। আর আত্মহত্যা করেছেন দুজন। তিনি অভিযোগ করেন, দেশে হিমোফিলিয়া রোগীদের তথ্য-উপাত্তে ভুল আছে।

রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের রক্তরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক অখিল রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, হিমোফিলিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ নয়। দক্ষতা থাকলে এ রোগ সহজে শনাক্ত করা যায়। তবে এ রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্রতি মাসে ৬-৭ লাখ টাকা থেকে ৪৬ লাখ টাকা খরচ হতে পারে। খরচ কমিয়ে মান ঠিক রেখে চিকিৎসা দেওয়া যায় কি না, এমন একটি গবেষণা তিনি করছেন বলে জানান।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক আমিন লুৎফুল কবীর। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক সালাউদ্দিন শাহ ও একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গুলজার হোসেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহ মো.

হেলাল উদ্দিন, রোশ বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার মার্ক হিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক জাকির হোসেন, হেমাটোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক মো. আদনান হাসান মাসুদ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়রা নাজরীন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রোশ বাংলাদেশের হেড অব অ্যাকসেস অ্যান্ড পলিসি মো. মফিজুল ইসলাম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন স স ইট

এছাড়াও পড়ুন:

৪৪তম বিসিএসের ৪০০ রিপিট ক্যাডার বাদ দিচ্ছে সরকার, নতুন সিদ্ধান্ত আসছে

৪৪তম বিসিএসে পুনরাবৃত্তি হওয়া ৪০০ ক্যাডারকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তারা ৪৩তম বিসিএসে বা আগের বিসিএসে যে ক্যাডারে আছেন ৪৪তম বিসিএসেও একই ক্যাডার পেয়েছিলেন। এই ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে সিদ্ধান্ত দ্রুতই হবে বলে জানিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা।

প্রথম আলোকে ওই কর্মকর্তা আজ বৃহস্পতিবার বলেন, ৪০০ ক্যাডারকে নিয়ে পিএসসির কিছু সুপারিশ আমরা পেয়েছি। এগুলো বাদ দিতে সরকার কাজ করছে। বাদ দিলে কি করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে সরকার। এখন পিএসসিকে এ বিষয় নিয়ে একটি মতামত দিতে বলা হয়েছে। পেলেই তা পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে প্রজ্জাপন দেওয়া হবে। এটি যাতে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি।

আরও পড়ুন৪৯তম বিসিএস: অনলাইন আবেদন ও ফি জমাদানে পিএসসির নতুন নির্দেশনা৩০ জুলাই ২০২৫

৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন প্রকাশিত হয়। এতে বিভিন্ন ক্যাডারে ১ হাজার ৬৯০ জনকে নিয়োগের জন্য সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) সাময়িকভাবে মনোনীত করেছে।

প্রকাশিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১ হাজার ৬৯০ জনের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন প্রার্থী একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন (রিপিট ক্যাডার)। এই ৪০০ জনের তালিকা পেয়েছে পিএসসি। এই রিপিট ক্যাডার বন্ধে বিধি সংশোধন করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় পিএসসি।

পিএসসি জনপ্রশাসনের চিঠিতে বলছে, এই রিপিট ক্যাডারের ফলে নতুন ও অপেক্ষমাণ মেধাবীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি প্রশাসনিক কাঠামো ও জনসম্পদের সদ্ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করছে। এখন এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

একাধিকবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই ক্যাডারে পুনরায় সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা ২০১৪–এর বিধি-১৭ এর শেষে নিম্নোক্ত শর্ত যুক্ত করার প্রস্তাব করেছে পিএসসি।

আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের ৩৪০০০ শূন্য পদ পূরণে উদ্যোগ২৯ জুলাই ২০২৫শর্তে কী আছে—

পিএসসির চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা আছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিবার প্রাক্কালে, কিংবা কোনো বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রস্তুতকালে, সংশ্লিষ্ট প্রার্থী কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত তথ্যের ভিত্তিতে কিংবা কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে যদি কমিশনের নিকট প্রতীয়মান হয় যে এই বিধির আওতাধীন মনোনয়নযোগ্য কিংবা মনোনীত কোনো প্রার্থী একই ক্যাডার পদ, সমপদ কিংবা প্রার্থীর আগ্রহ নেই এমন কোনো সার্ভিস বা ক্যাডার পদে পুনরায় মনোনীত হইবার কারণে মনোনীত সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে যোগদান করিতে অনিচ্ছুক, এইরূপ ক্ষেত্রে কমিশন অনাগ্রহ প্রকাশকারী প্রার্থীকে এই বিধির আওতাধীন সরকারের নিকট সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিতে পারিবে; আরও শর্ত থাকে যে প্রথম শর্তাংশে বর্ণিত বিধান অনুযায়ী কোনো প্রার্থীকে সুপারিশ করা হইতে বিরত থাকিবার কারণে উদ্ধৃত শূন্য পদে নিয়োগের লক্ষ্যে সুপারিশ প্রেরণ করিবার জন্য উত্তীর্ণ প্রার্থিগণের মধ্য হইতে মেধাক্রম অনুযায়ী প্রার্থী নির্বাচনপূর্বক কমিশন সম্পূরক ফলাফল প্রকাশ এবং সার্ভিসে বা ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ করিতে পারিবে;আরও অধিকতর শর্ত থাকে যে দ্বিতীয় শর্তাংশে উল্লিখিত সম্পূরক ফলাফল দ্বারা বা উহার পরিণতিতে প্রথম ঘোষিত ফলাফলে সার্ভিস বা ক্যাডার পদের জন্য মনোনীত কোনো প্রার্থীর প্রতিকূলে কোনো পরিবর্তন ঘটানো কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাইবে না।’

আরও পড়ুনবস্ত্র অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, চাকরির সুযোগ ১৯০ জনের২৯ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ