অবিলম্বে ‘গাজাযুদ্ধ’ বন্ধের দাবিতে ইসরায়েলিদের গণস্বাক্ষর
Published: 17th, April 2025 GMT
গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলের ভেতরেই দেখা দিচ্ছে এক শক্তিশালী আন্দোলন। ইসরায়েলের সামরিক, একাডেমিক ও চিকিৎসা পেশার হাজার হাজার মানুষ এই যুদ্ধবিরোধী আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করছেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু।
‘রিস্টার্ট ইসরায়েল’ ওয়েবসাইট অনুসারে, ইসরায়েলে ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং বন্দী বিনিময়ের দাবিতে ৪৩টি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।
আরো পড়ুন:
গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরো ৩৯ ফিলিস্তিনি
‘মার্চ ফর গাজা’ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঐক্য: সারজিস
‘রিস্টার্ট ইসরায়েল’ প্ল্যাটফর্মটি অনলাইনে ইসরায়েলিদের পিটিশন পর্যালোচনা এবং স্বাক্ষর করার সুযোগ দিচ্ছে।বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার ৫২২ জন, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং অবিলম্বে যুদ্ধ সমাপ্তির আহ্বান জানিয়ে পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।
পিটিশনগুলোর মধ্যে ১৬টিতে সামরিক বাহিনীর ১০ হাজারেও বেশি সদস্য স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে একাধিক ব্রিগেড, অভিজাত ইউনিট এবং গোয়েন্দা শাখার অভিজ্ঞ, রিজার্ভিস্ট ও সৈনিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বাকি ২৭টি পিটিশন এবং চিঠিতে শিক্ষাবিদ, লেখক, কবি, শিল্পী, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য পেশাদারসহ বেসামরিক পেশাদাররা স্বাক্ষর করেছেন।
স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক, সাবেক চিফ অব স্টাফ ড্যান হালুৎজ, চারজন সাবেক নৌ কমান্ডার- আমি আয়ালন, ইয়েদিদিয়া ইয়ারি, অ্যালেক্স তাল ও দুদু বেন-বেশত, ফ্লোটিলা ১৩ ইউনিটের সাবেক তিনজন কমান্ডার- রান গ্যালিঙ্কা, উজি লিভান্ট ও তজভিকা এরেজ এবং দুজন সাবেক আর্টিলারি কমান্ডার আভ্রাহাম বার ডেভিড ও ডোরন কাদমিয়েল।
এছাড়া, আমরাম মিৎজনা, আভি মিজরাহি, আমোস মালকা, আমনন রেশেফ, মোশে সুকেনিক, নিমরোদ শেফার এবং ইলান বিরান-এর মতো আরো অনেক ঊর্ধ্বতন সামরিক ব্যক্তিত্ব পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।
পিটিশনগুলোতে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত শুক্রবার, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পিটিশনে স্বাক্ষরকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অবাধ্যতার অভিযোগ এনে তাদের বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলো ২০২২ সালের শেষের দিকে ক্ষমতা গ্রহণকারী তার জোট সরকারকে পতনের প্রচেষ্টায় সমর্থন দিচ্ছে।
তিনি পিটিশনে স্বাক্ষরকারীদের ‘একটি ছোট, কোলাহলপূর্ণ, নৈরাজ্যবাদী এবং বিচ্ছিন্ন পেনশনভোগী দল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, কেউ অবাধ্যতাকে উস্কে দিলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।
ইসরায়েলের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় এখনো ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ২৪ জন জীবিত। চলতি বছরের মার্চ মাসে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তবে এই শর্তে ইসরায়েলের গাজা থেকে পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি প্রয়োজন ছিল।
কিন্তু হামাস যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী মেনে চললেও, নেতানিয়াহু তার অতি-ডানপন্থি জোটের চাপে দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। গত ১৮ মার্চ থেকে, গাজায় ফের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর ফলে জানুয়ারি মাসে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ভেস্তে গেছে। এতে করে অনেক ইসরায়েলি এমনকি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
গাজায় তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র র কর ছ ন ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
ইসিকে নিশানা করে ‘অ্যাটম বোমা’ ফাটালেন রাহুল গান্ধী, এখনো বাকি ‘হাইড্রোজেন বোমা’
ভারতের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ভোটচুরির অভিযোগ এনে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, এটা ‘অ্যাটম বোমা’। তবে আরও ভয়ংকর তথ্য তিনি পরে আনবেন, যা ‘হাইড্রোজেন বোমার সমতুল্য’।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আবার বিস্ফোরক অভিযোগ এনে রাহুল বলেন, নির্বাচন কমিশনের মদদে কিছু লোক, সংস্থা ও কল সেন্টার সংগঠিতভাবে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বেছে বেছে কংগ্রেস, দলিত, আদিবাসী ভোটারদের নাম বাদ দিচ্ছে।
আজ সংবাদ সম্মেলন করে রাহুল বলেন, নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের মাধ্যমে নকল আবেদন করে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
‘অ্যাটম বোমা’ ফাটানোর দিন রাহুল কর্ণাটকের মহাদেবপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের ‘ভোট চুরির’ নমুনা পেশ করেছিলেন। আজ তিনি উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন কর্ণাটকেরই আলন্দ কেন্দ্রকে।
রাহুলের অভিযোগ, নকল আবেদনের মাধ্যমে ওই কেন্দ্রের ৬ হাজার ১৮ জন ভোটারের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যেসব কেন্দ্রে কংগ্রেস শক্তিশালী, বেছে বেছে সেসব কেন্দ্রকেই নিশানা করা হয়েছে। ভুয়া ভোটারের নাম তোলার পাশাপাশি বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটা সংগঠিতভাবে করা হচ্ছে। কর্ণাটক পুলিশ সেই বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলেও নির্বাচন কমিশন কোনো তথ্য দিচ্ছে না।
রাহুলের অভিযোগ, যাঁদের নামে আবেদন জানানো হচ্ছে এবং যাঁদের নাম মোছার আরজি জানানো হচ্ছে, তাঁদের কেউ–ই তা জানতে পারছেন না। সংবাদ সম্মেলনে এই ধরনের কিছু মানুষকে রাহুল হাজিরও করান।
কিছু নম্বরও দাখিল করে রাহুল বলেন, এসব নম্বর থেকে ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। তাঁর প্রশ্ন, ওই নম্বরগুলোয় ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ‘ওটিপি’ কীভাবে গেল?
কংগ্রেস নেতা বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ঠিকানা থেকে নির্দিষ্ট ‘আইপি’ অ্যাড্রেস ব্যবহার করে নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে দেখতে কর্ণাটক পুলিশের গোয়েন্দারা ইসির কাছে কিছু তথ্য চেয়েছিলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জ্ঞানেশ কুমার কোনো তথ্যই দেননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে, ইসি ভোটচোরদের আড়াল করছে।
রাহুল বলেন, কর্ণাটক সিআইডি ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া বিষয়ে তথ্য জানতে চেয়ে ইসিকে ১৮ বার চিঠি লিখেছে। অথচ একটি চিঠিরও জবাব ইসি দেয়নি। ইসিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাহুল বলেন, কমিশন স্বচ্ছ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে কর্ণাটক সিআইডিকে যাবতীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করুক।
রাহুল মহারাষ্ট্রের রাজুরা বিধানসভা আসনের ভোটার তালিকা তুলে ধরে বলেন, সেখানে অনলাইনে ৬ হাজার ৮৫০ জনের নাম অবৈধভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন রাজ্যে ভোটার তালিকায় এভাবে সংযোজন–বিয়োজন চলছে।
এর আগেও রাহুল নিশানা করেছিলেন সিইসি জ্ঞানেশ কুমারকে। আজও তিনি তাঁকে কাঠগড়ায় তোলেন। রাহুল বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ করার বদলে তিনি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেই চলেছেন। ভোট চুরি করাচ্ছেন। ভোটচোরদের রক্ষাও করছেন।
রাহুলের অভিযোগ এবারও খারিজ করে দিয়েছে ইসি। রাহুলের ডাকা সংবাদ সম্মেলনের পর আজ ইসি এক বিবৃতি দেয়। তাতে রাহুলের অভিযোগ ‘অসত্য ও ভিত্তিহীন’ জানিয়ে বলা হয়, অনলাইনে কেউ কোনো ভোটারের নাম বাদ দিতে পারেন না। নাম বাদ দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বক্তব্য শোনা হয়।