গাজায় যুদ্ধ বন্ধ ও ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে ইসরায়েলের ভেতরেই দেখা দিচ্ছে এক শক্তিশালী আন্দোলন। ইসরায়েলের সামরিক, একাডেমিক ও চিকিৎসা পেশার হাজার হাজার মানুষ এই যুদ্ধবিরোধী আহ্বানে একাত্মতা প্রকাশ করছেন।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু। 

‘রিস্টার্ট ইসরায়েল’ ওয়েবসাইট অনুসারে, ইসরায়েলে ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং বন্দী বিনিময়ের দাবিতে ৪৩টি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

আরো পড়ুন:

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় নিহত আরো ৩৯ ফিলিস্তিনি

‘মার্চ ফর গাজা’ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঐক্য: সারজিস

‘রিস্টার্ট ইসরায়েল’ প্ল্যাটফর্মটি অনলাইনে ইসরায়েলিদের পিটিশন পর্যালোচনা এবং স্বাক্ষর করার সুযোগ দিচ্ছে।বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার ৫২২ জন, ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং অবিলম্বে যুদ্ধ সমাপ্তির আহ্বান জানিয়ে পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

পিটিশনগুলোর মধ্যে ১৬টিতে সামরিক বাহিনীর ১০ হাজারেও বেশি সদস্য স্বাক্ষর করেছেন, যার মধ্যে একাধিক ব্রিগেড, অভিজাত ইউনিট এবং গোয়েন্দা শাখার অভিজ্ঞ, রিজার্ভিস্ট ও সৈনিক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বাকি ২৭টি পিটিশন এবং চিঠিতে শিক্ষাবিদ, লেখক, কবি, শিল্পী, প্রকৌশলী এবং অন্যান্য পেশাদারসহ বেসামরিক পেশাদাররা স্বাক্ষর করেছেন।

স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাক, সাবেক চিফ অব স্টাফ ড্যান হালুৎজ, চারজন সাবেক নৌ কমান্ডার- আমি আয়ালন, ইয়েদিদিয়া ইয়ারি, অ্যালেক্স তাল ও দুদু বেন-বেশত, ফ্লোটিলা ১৩ ইউনিটের সাবেক তিনজন কমান্ডার- রান গ্যালিঙ্কা, উজি লিভান্ট ও তজভিকা এরেজ এবং দুজন সাবেক আর্টিলারি কমান্ডার আভ্রাহাম বার ডেভিড ও ডোরন কাদমিয়েল।

এছাড়া, আমরাম মিৎজনা, আভি মিজরাহি, আমোস মালকা, আমনন রেশেফ, মোশে সুকেনিক, নিমরোদ শেফার এবং ইলান বিরান-এর মতো আরো অনেক ঊর্ধ্বতন সামরিক ব্যক্তিত্ব পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন।

পিটিশনগুলোতে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে।

গত শুক্রবার, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু পিটিশনে স্বাক্ষরকারী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অবাধ্যতার অভিযোগ এনে তাদের বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বিদেশি অর্থায়নে পরিচালিত গোষ্ঠীগুলো ২০২২ সালের শেষের দিকে ক্ষমতা গ্রহণকারী তার জোট সরকারকে পতনের প্রচেষ্টায় সমর্থন দিচ্ছে।

তিনি পিটিশনে স্বাক্ষরকারীদের ‘একটি ছোট, কোলাহলপূর্ণ, নৈরাজ্যবাদী এবং বিচ্ছিন্ন পেনশনভোগী দল’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেছেন, কেউ অবাধ্যতাকে উস্কে দিলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।

ইসরায়েলের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় এখনো ৫৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ২৪ জন জীবিত। চলতি বছরের মার্চ মাসে গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। তবে এই শর্তে ইসরায়েলের গাজা থেকে পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার ও যুদ্ধের স্থায়ী সমাপ্তি প্রয়োজন ছিল।

কিন্তু হামাস যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী মেনে চললেও, নেতানিয়াহু তার অতি-ডানপন্থি জোটের চাপে দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে অস্বীকৃতি জানায়। গত ১৮ মার্চ থেকে, গাজায় ফের সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর ফলে জানুয়ারি মাসে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ভেস্তে গেছে। এতে করে অনেক ইসরায়েলি এমনকি সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও নেতানিয়াহু সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছেন। 

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারেও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

গত নভেম্বরে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

গাজায় তাদের কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও রয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র র কর ছ ন ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।

গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ