পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলির শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বুধবার রাজধানীসহ সমগ্র দেশেই ভোগান্তি তৈয়ার করে। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় ৯ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করিয়া রাখিবার কারণে সাধারণ মানুষ তো বটেই, রোগীগণও দুর্ভোগে পড়িয়াছিলেন। ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’ ছয় দফা দাবিতে রাজধানীর অন্যান্য এলাকাসহ যেইভাবে সমগ্র দেশে বিক্ষোভ প্রদর্শন করিয়া সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করিয়া রাখিয়াছিলেন, উহাতেও মানুষের ভোগান্তি সহজেই অনুমেয়। প্রশ্ন হইল, যেই সকল দাবিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করিতেছেন, সেইগুলি ন্যায্য হইলে এতদিনেও কেন বাস্তবায়ন হয় নাই? তদ্ব্যতীত নাগরিকদের জিম্মি করিয়া দুর্দশা বৃদ্ধির এহেন প্রতিবাদ কি চলিতেই থাকিবে?
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বৃহস্পতিবারও চলমান ছিল। সমগ্র দেশে তাহাদের ‘রেল ব্লকেড’ বা রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি শিথিল করিয়া শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার প্রশাসনের সহিত আলোচনায় বসেন। আলোচনার পর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা জানাইয়াছেন, তাহারা বৈঠকে সন্তুষ্ট নন; পুনরায় আন্দোলন আহ্বান করিবেন। আন্দোলনের নামে যদি পুনরায় মানুষদের ভোগান্তিতে ফেলা হয়, উহা হইবে দুঃখজনক। আমরা মনে করি, এই ক্ষেত্রে উভয় পক্ষকেই আন্তরিক হওয়া জরুরি। সমকালের প্রতিবেদনে স্পষ্ট, পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা যেই ছয় দফা দাবিতে আন্দোলন করিতেছেন, ইহার চার দফা মানিয়া লইতে সরকার একমত। বাকি দুই দফার বিষয়েও প্রশাসনের আন্তরিকতা স্পষ্ট। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে যাহা এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা কঠিন।
পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি ‘ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টর’ বিষয়ে। সেইখানে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করিয়াছে, ভবিষ্যতে উক্ত নামে কোনো পদ থাকিবে না। কিন্তু ২০২১ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণ বাতিল করিবার বিষয়ে জটিলতা হইল, সরকারি চাকুরির বয়স চার বৎসর হইয়া গেলে বাদ দিতে আইনগত বাধ্যবাধকতা রহিয়াছে। আন্দোলনকারীদেরও উহা বিবেচনা করা দরকার।
স্বস্তির বিষয়, কর্তৃপক্ষ ‘ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিষয়ে যেই কোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল, উন্নত বিশ্বের আদলে চার বৎসর মেয়াদি মানসম্পন্ন পাঠ্যক্রম চালু এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করিবার বিষয়ে একমত হইয়াছে। শিক্ষার্থীরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দশম স্তরে নিয়োগের যেই দাবি জানাইয়াছেন, উহা যৌক্তিক এবং সরকার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই বিবেচনা করিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস। কারিগরি খাত পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ দেওয়া এবং সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও গবেষণাগার সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিও যৌক্তিক। পর্যায়ক্রমে বিষয়টি বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক হইলে উহা কারিগরি শিক্ষার উন্নতিতে ভূমিকা পালন করিবে। স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠনের দাবিরও যৌক্তিকতা রহিয়াছে। পাশাপাশি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের যেই সীমাবদ্ধতা, তথায় তাহাদের দাবি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা লইতেই হইবে।
দুঃখজনক হইলেও সত্য, দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা যতটা গুরুত্ব পাওয়া জরুরি ছিল, ততটা পায় নাই। কারিগরি শিক্ষা বহুমাত্রিক সংকটে পড়িয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেই আকর্ষণীয় হয় নাই। এই শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করিতে হইলে আমূল সংস্কার জরুরি এবং এই ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা যেই সকল দাবি উপস্থাপন করিয়াছেন, সেইগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে কারিগরি শিক্ষায় অগ্রাধিকার নিশ্চিত করিতে হইবে। পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরও বাস্তবতা অনুধাবন করিতে হইবে। প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতা তাহারা যদ্রূপ বুঝিবার চেষ্টা করিবেন তদ্রূপ অবরোধের মতো কর্মসূচিতে জনভোগান্তির বিষয়ও চিন্তা করিতে হইবে। বৃহস্পতিবারের আলোচনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট না হইলেও তাহাদের আলোচনা চালাইয়া যাইতে হইবে এবং আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজিতে হইবে। আন্দোলনের মাধ্যমে জনভোগান্তির উপলক্ষ গ্রহণযোগ্য হইতে পারে না। বিষয়টি অনুধাবন করিয়া প্রশাসনও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সহিত পুনরায় আলোচনায় বসুক এবং সমাধানের পথ উন্মুক্ত করুক।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার, বাড়ি ফিরছেন লাখো মানুষ
রাশিয়ার পূর্ব উপকূলে গতকাল বুধবার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানার পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চারপাশে যে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এরপরই বিভিন্ন দেশে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া লাখো মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।
রাশিয়ার কামচাতকা উপদ্বীপের কাছে ৮ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ওই ভূমিকম্পের পর প্রশান্ত মহাসাগরের কিছু অংশে চার মিটার (১২ ফুট) পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাসের পূর্বাভাস দেওয়া হয়। জাপান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইকুয়েডর পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি দেশের নাগরিকদের সতর্ক করে উপকূলীয় অঞ্চল থেকে সরে উঁচু স্থানে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়।
সুনামি সতর্কতা জারির পর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের ১২১টি বন্দরের মধ্যে ৬৫টির কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যের মাউই দ্বীপ কর্তৃপক্ষ এ দ্বীপে সব ফ্লাইটের চলাচল বাতিল করে।
তবে যতটা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল, তেমনটা ঘটেনি। সুনামি দেখা গেলেও ঢেউয়ের উচ্চতা কম ছিল। পরে একের পর এক দেশ সুনামি সতর্কতা প্রত্যাহার করে বা হ্রাস করে এবং উপকূলবাসীদের জানিয়ে দেয় যে তাঁরা ঘরে ফিরতে পারেন।
জাপানে প্রায় ২০ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছিল। পরে সতর্কতা কমানো বা বাতিল করা হয়।
জাপানে সুনামি সতর্কতা জারির পর এক নারী গাড়ি চালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় সেটি পাহাড়ের খাড়িতে পড়ে গেলে তিনি মারা যান। সেখানে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাপানের গণমাধ্যম।জাপানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সাময়িকভাবে খালি করে ফেলা হয়েছিল। ২০১১ সালে শক্তিশালী ভূমিকম্প ও ভয়ংকর সুনামিতে কেন্দ্রটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জাপানে সুনামি সতর্কতা জারির পর এক নারী গাড়ি চালিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় গাড়ি পাহাড়ের খাড়িতে পড়ে গেলে তিনি মারা যান। সেখানে এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাপানের গণমাধ্যম।
চিলিতে ১৪ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেত বলা হয়েছিল। সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। চিলির উত্তর উপকূলে মাত্র ২ ফুট উচ্চতার ঢেউ দেখা গেছে।
সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাশিয়ায়। রুশ কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেখানে জলোচ্ছ্বাস সেভেরো-কুরিলস্ক শহরের বন্দর প্লাবিত হয়েছে এবং স্থানীয় মাছ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র পানিতে ডুবে গেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখানো ভিডিও ফুটেজে ভবন ও ধ্বংসাবশেষ সমুদ্রের পানির তোড়ে ভেসে যেতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুনরাশিয়ার পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি৩০ জুলাই ২০২৫মেয়র আলেক্সান্ডার ওভস্যাননিকভ বলেছেন, জলোচ্ছ্বাসের পানি শহরের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত পৌঁছায়, যা তটরেখা থেকে প্রায় ৪০০ মিটার দূরে অবস্থিত।
তবে এবারের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১১ সালে হওয়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির তুলনায় সামান্য। ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামিতে জাপানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হন।
গতকালের ভূমিকম্পের কিছুক্ষণ পরই ক্লিউচেভস্কয় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত হয় বলে জানিয়েছেন রুশ বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুনরাশিয়ায় শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামির আঘাত৩০ জুলাই ২০২৫আঞ্চলিক ভূকম্পন পর্যবেক্ষণ সংস্থা বলেছে, গতকালের ভূমিকম্প ছিল কামচাতকা অঞ্চলে ১৯৫২ সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী। সংস্থাটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রা পর্যন্ত পরাঘাতের বিষয়ে সতর্ক করে।
চিলিতে ১৪ লাখ মানুষকে উঁচু স্থানে সরে যেত বলা হয়েছিল। সেখানে কোনো ক্ষতি বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। চিলির উত্তর উপকূলে মাত্র ২ ফুট উচ্চতার ঢেউ দেখা গেছে।এদিকে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) বলেছে, গতকালের ভূমিকম্প ১৯০০ সালের পর রেকর্ডকৃত ১০টি সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্পের মধ্যে একটি।
এই ভূমিকম্পের পর রাশিয়ার জনবিরল দূর পূর্বাঞ্চলে একাধিক পরাঘাত অনুভূত হয়। এর একটি ছিল ৬ দশমিক ৯ মাত্রার।
ইউএসজিএস বলেছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অন্তত একটি পরাঘাত ৭ মাত্রার বেশি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৫৯ শতাংশ।
আরও পড়ুনশক্তিশালী ১০ ভূমিকম্পের দুটিই আঘাত হানে রাশিয়ায়, আজকেরটি কততম২১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনরাশিয়ার পূর্ব উপকূলে ভূমিকম্প: সরিয়ে নেওয়া হলো ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীদের৩০ জুলাই ২০২৫