কাপড় চুরির অপবাদ দিয়ে যুবককে কাঁঠাল গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের পরে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে প্রাণভিক্ষা চেয়ে রেহাই মেলে যুবকের। মধ্যযুগীয় কায়দার এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদি ইউনিয়নের খালপাড়া এলাকায়। নির্যাতনের ছবি ও ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ওই যুবককে কাঁঠাল গাছে বেঁধে নির্যাতন চালানো হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ওই যুবককে ওসমানপুর ফাঁড়ি পুলিশের নিকট তুলে দেন।

নির্যাতনের শিকার উপজেলার কুমারী ইউনিয়নের ফারাজীপাড়ার পচা ফারাজীর ছেলে বজলু ফারাজী (৩৫)। 

স্থানীয়রা জানায়, হারদি গ্রামের খালপাড়ার কালু হোসেনের বাড়ি থেকে তার স্ত্রীর কাপড় চুরি হয়। ওই কাপড় নির্যাতনের শিকার ওই যুবক নিজেই পরে বিভিন্ন বাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দেন। বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ভুক্তভোগী কালু প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠেন। পরে তিনি লক্ষ্য করে প্রতিবেশী জসির বসতবাড়ির জানালা দিয়ে মেক্সি পরিহিত একজন উঁকি দিচ্ছে। এসময় তিনি পেছন থেকে চোর সন্দেহে বজলুকে জাপটে ধরেন। তার চিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে এসে বজলুকে আটকে কালুর বাড়ির পাশের একটি কাঁঠাল গাছে বেঁধে সারারাত নির্যাতন করে। মারধরের একপর্যায়ে বজলুর পরিহিত মেক্সিতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে আগুন লাগাতে দেখা যায়। এসময় বজলু প্রাণ বাঁচাতে চিৎকার দিতে থাকেন।

এ ব্যাপারে নির্যাতনকারীদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে হারদি ইউনিয়নের খালপাড়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, রাতের এধারে চুরি করতে এলে বজলু নামে একজনকে আটক করে এলাকাবাসী। তবে তাকে ধরে অনেকে মারধর করেছে। সকাল ৬টার দিকে আমি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফাঁড়ির পুলিশকে খবর দিয়ে তাকে প্রশাসনের জিম্মায় তুলে দিয়েছি।

আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুর রহমান সমকালকে জানান, চুরি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক ও নির্যাতনের শিকার হওয়া যুবক বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ র র অভ য গ য বকক

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন

তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের। 

দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত। 

আরো পড়ুন:

রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন

টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়

প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।

তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।

গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে। 

সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়। 

ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে। 

২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।

সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ