শান্তিরক্ষা মিশনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
Published: 20th, April 2025 GMT
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আরো বেশি বাংলাদেশি নারী নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, রবিবার (২০ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন-বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জঁ-পিয়েরে ল্যাক্রোয়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে এ আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা ও নিরাপত্তা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জঁ-পিয়েরে ল্যাক্রোয়া বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর নীতিতে অটল। আমরা নারীদের নির্দিষ্ট কিছু ভূমিকায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না।
শান্তিরক্ষার সব স্তরে নারীদের নিয়োগে জাতিসংঘ সহায়তা করবে বলেও জানান জঁ-পিয়েরে ল্যাক্রোয়া।
বাংলাদেশ অতিরিক্ত সেনা ও পুলিশ সদস্য মোতায়েনে প্রস্তুত আছে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জাতিসংঘের ‘পিসকিপিং ক্যাপাবিলিটি রেডিনেস সিস্টেম’-এর (পিসিআরএস) র্যাপিড ডিপ্লয়মেন্ট লেভেলে পাঁচটি ইউনিট প্রদানের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
জাতিসংঘের সদর দপ্তর ও মাঠ পর্যায়ে শান্তিরক্ষায় নেতৃত্বে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জানান, এ ব্যাপারেও বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে জাতিসংঘ।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জানান, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী যাচাইকরণ প্রক্রিয়া বাংলাদেশ কঠোরভাবে অনুসরণ করে এবং মানবাধিকার নিশ্চিতে প্রশিক্ষণ ও জবাবদিহিতা জোরদারে জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ।
বৈঠকে জানানো হয়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষাবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নিতে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্র উপদেষ্টার নেতৃত্বে আগামী ১৩ থেকে ১৪ মে জার্মানির বার্লিনে যাবে।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাত এবং সীমান্তে গুলিবর্ষণ, বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা ও নাফ নদীর আশপাশে জীবন-জীবিকায় বিঘ্ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, চলমান অস্থিরতা আরো বাড়তে পারে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করবে।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরো কার্যকর উদ্যোগের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন রোহিঙ্গাদের মনে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের আশা সঞ্চার করেছে।
ঢাকা/হাসান/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।