রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) আপাতত আর কোনো প্লট বরাদ্দ দেবে না বলে বলে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল ইসলাম।

আজ সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘সমস্যার নগরী ঢাকা: সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক নগর সংলাপে অংশ নিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন। সংলাপের আয়োজক নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশ।

সংলাপে রিয়াজুল ইসলাম বলেন, অনেকে তাঁকে ফোন দিয়ে জানতে চান, প্লট বরাদ্দ হবে কি না? তিনি বলেছেন, ‘নো’ বরাদ্দ। আপাতত তাঁরা আর কোনো প্লট বরাদ্দ দেবেন না। যে জায়গাগুলো আছে, সেগুলোতে তাঁরা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করবেন।

নগরে বস্তি তৈরি হওয়ার জন্য মানুষই দায়ী বলে মন্তব্য করেন রাজউক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমরা কাজের লোকে অভ্যস্ত। উন্নত বিশ্বে কয়টা বাড়িতে কাজের লোক আছে? কাজের মানুষদের আমরাই ঢাকা শহরে এনেছি। বস্তিগুলো তৈরি হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। তাই আমরা নিজেরাই নিজেদের কাজগুলো কীভাবে করতে পারি, এ বিষয়েও পরিকল্পনা থাকা উচিত।’

ঢাকা শহরের সমস্যাগুলোর সমাধানে ঢাকাকে একটি ‘সিটি গভর্নমেন্ট’-এর অধীনে নেওয়ার পরামর্শ দেন রিয়াজুল ইসলাম।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান। প্রবন্ধে তিনি বলেন, ঢাকা নগরের সমস্যাগুলো সমাধানে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয় না। ঢাকার বেশির ভাগ সমস্যা সমাধানে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ফলে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিকল্পনাগুলোও শেষ হয়ে যায়, সমাধান আসে না।

ঢাকার সমস্যাগুলো সমাধানে মহল্লাভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দেন মেহেদী আহসান। থাইল্যান্ডের একটি প্রকল্পের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, মহল্লাভিত্তিক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হলে আগামী পাঁচ বছরে ঢাকা শহরের ৫০ ভাগ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য পেশাজীবীদের গুরুত্ব তুলে ধরেন মেহেদী আহসান। তিনি বলেন, কারিগরি বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় সকল পর্যায়ে পেশাজীবীদের পদায়ন না করায় ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে বহুতল ভবনসহ অপরিকল্পিত নগর সম্প্রসারণ হচ্ছে।

সংলাপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগর পরিকল্পনাবিদ মো.

ফজলে রেজা সুমন। স্বাগত বক্তব্য দেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মতিন আব্দুল্লাহ। সংলাপে আরও বক্তব্য দেন রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন-চলতি দায়িত্ব) মো. নুরুল ইসলাম, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ মো. নুরুল্লাহ, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, স্থপতি সুজাউল ইসলাম খান প্রমুখ। ঢাকার নাগরিক জীবন, অবকাঠামো, পরিবেশ, খাল ব্যবস্থাপনা, যানজট বিষয়ক সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেন বক্তারা। সংলাপ শেষে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে ঢাকাই ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম র জন য সমস য র জউক

এছাড়াও পড়ুন:

এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না

অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।

এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।

ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।

এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।

তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।

দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।

আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।

কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।

এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।

আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।

এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।

মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।

‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ