শুল্কযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে তুষ্ট রাখতে চাওয়া দেশগুলোর প্রতি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি চীনের
Published: 21st, April 2025 GMT
চলমান শুল্কযুদ্ধে যেসব দেশ চীনের স্বার্থের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করছে, তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং। আজ সোমবার চীনা কর্তৃপক্ষ এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও অনেক চীনা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছেন। এর জবাবে বেইজিং মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের বিরুদ্ধে যখন পুরোদমে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ চলছে, তখন বেশ কয়েকটি দেশ শুল্ক কমানোর জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলোর একটি দক্ষিণ কোরিয়া। চলতি সপ্তাহে দেশটির অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রীর ওয়াশিংটনে উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা আছে বলে জানিয়েছে সিউল কর্তৃপক্ষ। হোয়াইট হাউস যদি তাদের ঘোষণা অনুযায়ী শুল্ক কার্যকর করে, তবে দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও হুন্দাইয়ের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা গত শনিবার বলেছেন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার আলোচনা বিশ্বের জন্য একটি মডেল হতে পারে। টোকিওর শুল্কবিষয়ক প্রতিনিধি রিয়োসি আকাজাওয়া গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফরে যান এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আজ জাপানের পার্লামেন্টে ইশিবা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগ্রহের (জাপানের দূতের সঙ্গে আলোচনার জন্য) মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, তিনি জাপানের সঙ্গে আলোচনাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন।’
নিজের দেশকে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে উল্লেখ করে ইশিবা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী ও কর্মসংস্থানকারী দেশ জাপান।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স আজ থেকে ভারতে চার দিনের সফর শুরু করছেন। তিনি এমন সময়ে সফর করছেন, যখন কিনা দুই দেশ একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কাজ করছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আপস না করতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীন।
এক বিবৃতিতে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘তুষ্ট করার মধ্য দিয়ে শান্তি আসবে না এবং আপসকে সম্মানজনক দৃষ্টিতে দেখা হবে না।’
বেইজিং আরও বলেছে, ‘অন্যের স্বার্থের বিনিময়ে নিজের সাময়িক স্বার্থ হাসিল করাটা বাঘের চামড়া চাওয়ার শামিল।’
এ ধরনের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষই ব্যর্থ হয় এবং অন্যরা ক্ষতির শিকার হয় বলে সতর্ক করেছে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, চীনের স্বার্থের বিনিময়ে যেকোনো পক্ষের চুক্তিতে পৌঁছানোর তীব্র বিরোধিতা করে তাঁর দেশ। যদি এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়, তাহলে চীন কখনোই তা মেনে নেবে না এবং দৃঢ়ভাবে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রকে পাল্টা শুল্ক ‘সম্পূর্ণ বাতিল’ করার আহ্বান চীনের১৪ এপ্রিল ২০২৫ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক পরাশক্তিগুলোর মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাজারগুলোয় অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
ট্রাম্প গত সপ্তাহে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা করছে। তিনি আত্মবিশ্বাসী যে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশ দুটি তিক্ত বাণিজ্যযুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি চুক্তি করতে পারবে।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা চীনের সঙ্গে কথা বলছি।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমরা চীনের সঙ্গে মিলে খুব ভালো একটি চুক্তি করতে পারব।’
তবে শেষ পর্যন্ত শুল্কযুদ্ধের বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হওয়ার বিষয়ে তারা কিছু বলেনি। তবে তারা সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচন সামনে রেখে ৭ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাদে অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্কে এটাই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। আগামীকাল ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক নগরে মেয়র পদে ভোট গ্রহণ হতে যাচ্ছে।
গতকাল রোববার ছিল আগাম ভোট দেওয়ার শেষ দিন। এদিন প্রায় ১ লাখ ৫১ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছেন। নগরের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, আগাম ভোট গ্রহণ শুরুর পর থেকে এটি এক দিনে সর্বোচ্চ ভোট পড়ার ঘটনা। তা ছাড়া এদিন ৩৫ বছরের কম বয়সী ভোটারদের উপস্থিতিও বেশি ছিল। এর মধ্য দিয়ে আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের গড় বয়সও কমে এসেছে। গড় বয়স ৫০ বছরে নেমে এসেছে।
আগের সপ্তাহের প্রথম দিকে কম বয়সী ভোটারের উপস্থিতি কম ছিল। ওই সপ্তাহের রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ হাজার নিউইয়র্কবাসী ভোট দিয়েছিলেন। তবে গত শুক্রবার থেকে রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ৩৫ বছরের কম বয়সী ১ লাখের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন, যার মধ্যে শুধু গতকাল রোববারই এ বয়সী ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজারের বেশি।
আরও পড়ুনমামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা০২ নভেম্বর ২০২৫নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।
নিউইয়র্কে চলতি বছর মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনের তুলনায় চারগুণের বেশি। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো ও কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে এগিয়ে আছেন।নিউইয়র্কে সর্বপ্রথম মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়ার সুযোগ তৈরি হয় ২০২১ সালে। ওই নির্বাচনে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যায়নি। ওই নির্বাচনে এরিক অ্যাডামস তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্লিওয়াকে দ্বিগুণের বেশি ভোটে হারিয়েছিলেন।
অবশ্য চলতি বছর নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগাম ভোটকে ছাড়াতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ১০ লাখ মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তুলনায় মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের বয়স তুলনামূলক কম। এটা অবাক করা বিষয়। কারণ, সাধারণত যারা আগাম ভোট দেন তাঁদের গড় বয়স মোট নিবন্ধিতদের গড় বয়সের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনব্যালটে মামদানি, অদৃশ্য ‘প্রার্থী’ ট্রাম্প১ ঘণ্টা আগেচলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।
চলতি বছরের মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটের সংখ্যা ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক বেশি। ওই সময় নিউইয়র্কে প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষ আগাম ভোট দিয়েছিলেন। সে সময় আগাম ভোট দেওয়া ভোটারদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫৫ বছরের বেশি।গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগাম ভোট দেওয়া মানুষের গড় বয়স ছিল ৫১ বছর। তবে এবার মেয়র নির্বাচনে আগাম ভোটারদের গড় বয়স আরও কমে ৫০ বছরে নেমেছে।