প্রবাসীর স্ত্রীকে নারকেল গাছে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল
Published: 22nd, April 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক কলহের জেরে প্রবাসীর স্ত্রীকে নারকেল গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সেই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী শারমিন আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এলাকাবাসী জানান, সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের মন্তাজ মিয়ার ছেলে মো.
শারমিনের মা নূর জাহান বেগম বলেন, ‘কোনো নারীকে এভাবে গাছে বেঁধে পেটানো হবে? এটা কোন দেশের আইনে আছে? আমি আমার মেয়ের নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী নারী শারমিন আক্তারের অভিযোগ করে বলেন, ‘শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার স্বামীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছিল কিন্তু সেই টাকা তারা ফেরত দেননি। আমার স্বামী বারণ করায় আমি তাদের কাছে টাকা চাইনি। কিন্তু শ্বশুর-ভাসুরসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত ঝগড়া করায় আমি সোমবার বিকেলে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় দুই ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনসহ জা ও ভাতিজারা এসে আমাকে ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করে গাছে বেঁধে রাখেন। গ্রামের মানুষ তাদের নিষেধ করলেও তারা তা শুনেননি। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য এসে আমাকে উদ্ধার করেন। পরে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এ ঘটনায় আমি মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীন, মর্জিনা ও ময়না বেগম, জুবায়ের, আকাশ ও সাইফুলকে আসামি করে রাতেই থানায় অভিযোগ দেই। আজ মঙ্গলবার সকালে মামলা নথিভুক্ত হয়। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।’
সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘শুনেছি শারমিন তার শ্বশুরকে মারধর করেন। এরই জেরে তারা শারমিনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেন। তবে আমি খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে যাই ও শারমিনকে উদ্ধার করি। তবে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত ঘৃণ্য।’
তবে শারমিনের শ্বশুর মন্তাজ মিয়া দাবি করে বলেন, ‘শারমিন বিভিন্ন সময় ঘরে তালা দিয়ে বাইরে চলে যেত। তাকে নিষেধ করায় শারমিন আমাকে মারধর করে। এরই জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে শারমিনের ভাসুররা তাকে গাছে বেঁধে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় র কর ন এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।