ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক কলহের জেরে প্রবাসীর স্ত্রীকে নারকেল গাছে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সেই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সোমবার বিকেলে সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের সুলতানপুর মধ্যপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী শারমিন আক্তারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এলাকাবাসী জানান, সুলতানপুর ইউনিয়নের মধ্যপাড়া গ্রামের মন্তাজ মিয়ার ছেলে মো.

হায়দার আলীর সঙ্গে প্রায় ১৭ বছর আগে শারমিন আক্তারের বিয়ে হয়। সাবিনা আক্তার ও জাহিদা হাসান নামে তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। হায়দার দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সৌদি আরবে ছিলেন। ৯ মাস আগে হায়দার দেশে আসেন এবং পরে সৌদি আররে চলে যান। শারমিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে মধ্যপাড়া গ্রামে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করেন। তবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে শারমিনের ঝগড়া হতো। এরই জেরে সোমবার বিকেলে শারমিনের ভাসুরসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন ঝগড়ার একপর্যায়ে তাকে একটি নারিকেল গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। এ সময় তার দুই সন্তানকেও মারধর করা হয়। মারধরের ঘটনাটি স্থানীয়রা ভিডিও করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেন। তাতে দেখা যায়, অভিযুক্তরা শারমিনসহ তার সন্তানদের মারধর করছেন। পরে ভাসুর মঙ্গল মিয়া নারিকেল গাছে শারমিনকে বেঁধে মারধর করেন। 

শারমিনের মা নূর জাহান বেগম বলেন, ‘কোনো নারীকে এভাবে গাছে বেঁধে পেটানো হবে? এটা কোন দেশের আইনে আছে? আমি আমার মেয়ের নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’ 

ভুক্তভোগী নারী শারমিন আক্তারের অভিযোগ করে বলেন, ‘শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমার স্বামীর কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়েছিল কিন্তু সেই টাকা তারা ফেরত দেননি। আমার স্বামী বারণ করায় আমি তাদের কাছে টাকা চাইনি। কিন্তু শ্বশুর-ভাসুরসহ অন্যান্যরা প্রতিনিয়ত ঝগড়া করায় আমি সোমবার বিকেলে অন্য জায়গায় বাসা ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে স্বামীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় দুই ভাসুর মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনসহ জা ও ভাতিজারা এসে আমাকে ঘর থেকে ধরে এনে মারধর করে গাছে বেঁধে রাখেন। গ্রামের মানুষ তাদের নিষেধ করলেও তারা তা শুনেননি। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য এসে আমাকে উদ্ধার করেন। পরে আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। এ ঘটনায় আমি মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীন, মর্জিনা ও ময়না বেগম, জুবায়ের, আকাশ ও সাইফুলকে আসামি করে রাতেই থানায় অভিযোগ দেই। আজ মঙ্গলবার সকালে মামলা নথিভুক্ত হয়। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার চাই।’ 

সুলতানপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রিপন মিয়া বলেন, ‘শুনেছি শারমিন তার শ্বশুরকে মারধর করেন। এরই জেরে তারা শারমিনকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেন। তবে আমি খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে যাই ও শারমিনকে উদ্ধার করি। তবে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা অত্যন্ত ঘৃণ্য।’

তবে শারমিনের শ্বশুর মন্তাজ মিয়া দাবি করে বলেন, ‘শারমিন বিভিন্ন সময় ঘরে তালা দিয়ে বাইরে চলে যেত। তাকে নিষেধ করায় শারমিন আমাকে মারধর করে। এরই জেরে এ ঘটনা ঘটেছে।’ 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে শারমিনের ভাসুররা তাকে গাছে বেঁধে রাখে। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মঙ্গল মিয়া ও জয়নাল আবেদীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় র কর ন এ ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার

প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা। 

কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।

মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ। 

এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা। 

কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে। 

কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে। 

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ