ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বছরে চীনা শিক্ষার্থী দ্বিগুণ
Published: 23rd, April 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এক বছরে চীনা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২৪ সালে চীন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলেন ৯ জন শিক্ষার্থী। আর চলতি ২০২৫ সালে পড়তে এসেছেন ১৮ জন। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ৬ জন। এসব শিক্ষার্থী আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের অধীনে বাংলা বিভাগে পড়াশোনা করছেন। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষা-গবেষণা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময়ের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য চীনের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে। চীনের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনান মিনজু বিশ্ববিদ্যালয় ও বেইজিং ফরেন বিশ্ববিদ্যালয়।
আরও পড়ুনচীনের প্রেসিডেনশিয়াল স্কলারশিপ, প্রথম বছরে ১০ হাজার চায়নিজ ইউয়ান ২০ এপ্রিল ২০২৫এসব সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আওতায় এবং চীন সরকারের বৃত্তি নিয়ে এই বছর চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ জন শিক্ষার্থী। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৭ জন। সম্প্রতি চিকিৎসা গবেষণা ও প্রশিক্ষণকে এগিয়ে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে চীনের ইউনান পিকিং ক্যানসার হাসপাতাল এবং কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনের শিক্ষার্থীদের আবাসিক সমস্যা দূর করার জন্য স্যার পিজে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে ১০টি কক্ষের সমন্বয়ে একটি ব্লক তৈরি করা হয়েছে। চীন থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান করছেন। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসন সংকট নিরসনে চীন সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী নামে একটি আবাসিক হল নির্মাণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
আরও পড়ুননিউজিল্যান্ডের ‘টঙ্গারেওয়া স্কলারশিপ’, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের সুযোগ১৯ এপ্রিল ২০২৫আগামী আগস্ট মাসে চীনের শিক্ষার্থীরা দুই সেমিস্টারের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রফেশনাল মাস্টার্স কোর্সে পড়ারও আগ্রহ দেখিয়েছেন তাঁরা। এ লক্ষ্যে চীনের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করতে চায়। সেজন্য উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। খুব শিগগির বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে বলে আশা করা যাচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষা-গবেষণা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময়ের ক্ষেত্রটি আরও সম্প্রসারিত হবে।
এদিকে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষা বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের একটি শক্তিশালী দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী এই ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে শুধু ভাষাগত দক্ষতাই অর্জন করছে না, বরং চীনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গেও পরিচিত হচ্ছে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চীনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যোগাযোগ বেড়েছে। গত বছরের নভেম্বরে ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান সাত দিনের সফরে চীনে যান। সফরকালে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান ইউনান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হন এবং পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান যৌথ সহযোগিতামূলক শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করার ব্যাপারে মতবিনিময় করেন। এ ছাড়া উপাচার্য চীনের সেন্টার ফর ল্যাংগুয়েজ এডুকেশন অ্যান্ড কো-অপারেশন, চাইনিজ ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন ফাউন্ডেশন এবং ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর চায়নিজ ল্যাংগুয়েজ টিচিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে যৌথ সহযোগিতামূলক কার্যক্রম চালুর সম্ভাব্যতা নিয়ে মতবিনিময় করেন। সর্বশেষ ১৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সফর করেন চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের একাডেমিক বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরও পড়ুনসবচেয়ে বেশি বই পড়েন মার্কিনরা, বাংলাদেশিদের অবস্থান কততম১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমঝ ত
এছাড়াও পড়ুন:
সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বাণিজ্য-বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে: ঢাকা চেম্বার
বাংলাদেশ ব্যাংকের ধারাবাহিক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। সংস্থাটি বলছে, কড়াকড়ি মুদ্রানীতির প্রভাবে ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে ডিসিসিআই জানায়, ২০২৫ সালের জুনের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে ৬.৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ ধারা অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক। চেম্বার মনে করে, ব্যবসায়িক পরিবেশে অনিশ্চয়তা, আইন-শৃঙ্খলার চ্যালেঞ্জ, জ্বালানি সরবরাহে ঘাটতি এবং কঠোর মুদ্রানীতির কারণে ঋণ প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী ধারা আরো তীব্র হচ্ছে।
ডিসিসিআই আরো জানায়, ঋণ প্রবাহ সংকুচিত হওয়ার ফলে খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায়, যা ব্যাংকিং খাতে মোট বকেয়া ঋণের প্রায় ২৭.০৯ শতাংশ। এ পরিস্থিতি আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ব্যবসায়িক আস্থা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিসূদ হার ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে-যা ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট ও মাঝারি শিল্পসহ উৎপাদনমুখী খাতগুলোর জন্য বড় চাপ তৈরি করছে বলে মনে করে ডিসিসিআই। সংস্থাটির ভাষ্য, দীর্ঘমেয়াদি উচ্চ সুদের হার উৎপাদন ও বিনিয়োগ খাতে ঋণের ভার বাড়াচ্ছে, ফলে সামগ্রিক অর্থনীতির গতিশীলতা ব্যাহত হচ্ছে।
চলতি মুদ্রানীতিতে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৫) বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরো কমিয়ে ৭.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে আগের ছয় মাসে তা ছিল ৯.৮ শতাংশ। বিপরীতে সরকার খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ২০.৪ শতাংশ করা হয়েছে। ঢাকা চেম্বারের মতে, এ ব্যবস্থায় সরকারি খাতের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বেসরকারি খাতের জন্য আর্থিক খরচ ও প্রতিযোগিতা উভয়ই বেড়ে যাবে।
এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে নীতিসূদ হার হ্রাস এবং ঋণ গ্রহণের শর্তাবলি সহজ করার আহ্বান জানিয়েছে ডিসিসিআই। তারা সৎ ঋণগ্রহীতাদের রক্ষায় সহায়তা এবং তাৎক্ষণিক খেলাপি শ্রেণিতে পড়া এড়াতে ঋণ শ্রেণিবিন্যাসে সময়সীমা ছয় মাস বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
সংস্থাটি মনে করে, টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করতে হলে আর্থিক খাতে কাঠামোগত সংস্কার, ঋণ বরাদ্দে স্বচ্ছতা এবং বাজারে তারল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।
চূড়ান্তভাবে ডিসিসিআই বলছে, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা, বেসরকারি খাতে আস্থা পুনরুদ্ধার ও বিনিয়োগ বাড়াতে আরো নমনীয়, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও খাতভিত্তিক প্রতিক্রিয়াশীল মুদ্রানীতির বিকল্প নেই।
ঢাকা/নাজমুল/সাইফ