উপদেষ্টা পরিষদের কতজন ১৬ বছরে ১৬ দিন রাজপথে ছিল, প্রশ্ন নুরের
Published: 24th, April 2025 GMT
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে। এই উপদেষ্টা পরিষদের কয়জন গত ১৬ বছরে ১৬ দিন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে ছিল, আওয়াজ দিয়েছিল। আপনারা দেখান, আছে? নাই।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ফলে রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের ঘৃণা-অবিশ্বাস-সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে রাজনীতিবিদরা আসলে ভালো কিছু করতে পারবে না। তবে বাস্তবতাও মনে রাখতে হবে, একটা অরাজনৈতিক সরকার বেশিদিন থাকলেও সেদেশেও নানা সংকট তৈরি হয়। গৃহযুদ্ধ, আভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ—এ বিষয়গুলো মেমোরিতে নিতে হবে। আমরা বলছি, নির্বাচন হবে। অবশ্যই নির্বাচনে আগে সংস্কার হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণহত্যাকারীদের গ্রেফতার-বিচার, বিচারপূর্বক আওয়ামীলীগের নিবন্ধন বাতিল ও রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে’ সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে জুলাই মঞ্চ। এতে তিনি এসব কথা বলেন।
নুর আরও বলেন, সরকারকে বলতে চাই, ছাত্রলীগকে যেভাবে নিষিদ্ধ করেছেন, অনতিবিলম্বে আওয়ামীলীগের অন্তত বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপরে নির্বাহী নিষিধাজ্ঞা দিতে পারেন। এরপর যদি বিচারিক প্রক্রিয়ায় তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
সমাবেশে শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলেন, আমার ছেলে ভালো রেজাল্ট করে বনানী নৌবাহিনীর কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু ৪ আগস্ট চারটায় ফার্মগেটে পুলিশের গুলিতে সে শাহাদাত বরণ করে। আমরা আজ সব হারিয়ে নিঃস্ব। এ সরকারের সময়ে যদি শহীদদের বিচার না হয়, তাহলে কোন সরকারের সময় বিচার পাব আমরা জানি না। প্রধান উপদেষ্টারকে অনুরোধ করি, এ সরকারের সময় বিচার না হলে জাতি আপনাদের ছাড়বে না।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের মিটিং মিছিল বন্ধ করতে হবে। যারা আওয়ামীলীগকে পুনর্বাসন করবে, তাদেরকে খুঁজে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আপনারা দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে যান যেন আর কোনো দল এমন আচরণ করতে না পারে।
শাহরিয়ার আলভীর বাবা আবুল হাসান বলেন, গত আগস্টের চার তারিখ মিরপুর আমার ছেলে শহীদ হয়। আমার একমাত্র ছেলে। আজকে আট মাস হয়ে গেল, বিচারের ন্যুনতম চিত্র দেখছি না। বিচারের নামে প্রহসন চলতেছে। ট্রাইবুনালকে রঙ্গমঞ্চ করে রাখা হয়েছে, তারা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও গ্রেফতার হয় না।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ, লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব শরাফত হোসেন, জাগপার মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, শাহবাগ থানা জামায়াতের আমির শাহ মুহাম্মদ মাহফুজুল হক, রোড টু রিফর্মের তামজীদ হোসেনসহ শহীদ পরিবার এবং আহতরা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ল হক ন র আওয় ম ল গ উপদ ষ ট র জন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।