হাওরে পুরুষের পাশাপাশি শ্রম দিচ্ছেন নারীরাও
Published: 25th, April 2025 GMT
সকাল থেকেই ধূসর রঙের মেঘ ভাসছিল আকাশে। হাওরের পথে যেতে দু-চার ফোঁটা বৃষ্টিও ঝরেছে। হঠাৎ ঝলমলে রোদ বুকে নিয়ে হেসে ওঠে নীল আকাশ। বেলা বাড়লে বৈশাখের তপ্ত রোদে ঘামে ভিজে ওঠে শরীর। একসময় মনে হয়, চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। তবে কৃষক পরিবারের সদস্যদের কারও চোখেমুখে ক্লান্তি নেই, আছে কেবল তৃপ্তির রেশ। তাঁরা জানান, এবার বেশ ভালো ফলন হয়েছে হাওর এলাকায়। ঝড়বৃষ্টি না থাকায় ঝামেলা ছাড়াই এসব ফসল ঘরে তোলার আয়োজন চলছে এখন।
গত রোববার সকালের ওই গরমে মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের কাদিপুর এলাকায় ধান শুকানোর কাজ করছিলেন ময়না রানী সরকার। তিনি বলেন, ‘দিন খুব ভালা। ঝড়বিষ্টি নাই।’
কাউয়াদীঘি হাওরপারের কাদিপুর এলাকাটি তুলনামূলকভাবে নিচু। সেখানে তৈরি করা হয়েছে ধানের খোলা। এই খোলায় ধানমাড়াই, ঝাড়াই, সেদ্ধ থেকে শুকানো সবই করা হয়। পাশাপাশি খড়ও শুকানো হয় সেখানে। এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাওর এলাকার কৃষক পরিবারগুলোর নারী সদস্যরা। দিনের বেশির ভাগ সময় তাঁদের এসব কাজেই ব্যয় হচ্ছে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাদিপুর, রাজনগর উপজেলার অন্তেহরিসহ কাউয়াদীঘি হাওরপারে এই সময়ে এমন ছোট–বড় অনেক খোলা দেখা যায়। গ্রাম বা লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে এসব স্থানে ময়না রানীর মতো আরও অনেক নারী শ্রম দিচ্ছেন পুরুষদের পাশাপাশি।
ধান সেদ্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এক নারী.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র এল ক
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।