এক জোড়া মহিষকে পুকুরে গোসল করাতে নামিয়েছিলেন মালিক। হঠাৎ জোড়া ভেঙে একটি মহিষ পুকুর থেকে উঠে দৌড় দেয়। সেটা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের ঘটনা। সারা দিন মহিষটা এ গ্রাম থেকে সে গ্রামে দৌড়ে বেড়ায়। মালিক ধরতে পারেন না। এভাবে সারা রাত যায়। মহিষটি এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় যায়। শেষ পর্যন্ত আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার দুটি বিলের অন্তত ১০ বিঘা ভুট্টাখেত নষ্ট করার পরে দড়ির ফাঁদ পেতে গ্রামবাসী মহিষটাকে আটকাতে সক্ষম হন। ততক্ষণে মহিষের গুঁতায় ও লাথিতে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আনারুল ইসলাম ও মাজেদুল ইসলাম নামের দুজনকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আনারুল কোমরে আঘাত পেয়েছেন আর মাজেদুলের নাক ফেটে গেছে।

মহিষের মালিকের নাম এমদাদুল হক। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আরিপপুর গ্রামে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে আরিপপুর মাঠে একটি সরকারি পুকুরে তিনি জোড়া বেঁধে দুটি মহিষকে গোসল করাতে নামান। হঠাৎ জোড়া ভেঙে দড়ি ছিঁড়ে একটি মহিষ দৌড়াতে শুরু করে। এমদাদুলও মহিষের পেছন পেছন দৌড়াতে শুরু করেন।

এমদাদুল হকের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহিষটা কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না—এই খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনেরাও তাঁর সঙ্গে মহিষের পেছনে যেতে শুরু করেন। সারা দিন বাঘা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে মহিষটি রাতের বেলায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর গ্রামের ভেতরে ঢুকে পড়ে। রাতের অন্ধকারে তাঁরা মহিষটার নিশানা আর খুঁজে পাননি। সারা রাত গ্রামের আশপাশে তাঁরা মহিষের অপেক্ষায় থাকেন। তিন-চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে আরও কয়েকজন বিভিন্ন এলাকায় মহিষের খোঁজ করতে থাকেন।

পুঠিয়া উপজেলার দইপাড়া ও দুলবপুর গ্রামের লোকজন সন্ধ্যার একটু আগে মহিষটিকে ধরে ফেলেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’

ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।

হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।

আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’

গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’

আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ