সেফগার্ডিং নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন
Published: 26th, April 2025 GMT
উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে সেফগার্ডিং কার্যক্রমের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদানের লক্ষ্যে উন্নয়ন খাতের পেশাজীবী ও নীতিনির্ধারকদের নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল ব্রিটিশ কাউন্সিল। সবার জন্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে উদ্যোগী দাতা সংস্থাগুলোর বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘ফান্ডার সেফগার্ডিং কোলাবোরেটিভের (এফএসসি)’ অংশীদারত্বে ব্রিটিশ কাউন্সিল অডিটরিয়ামে গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
গুরুত্বপূর্ণ এ আয়োজন নিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস বলেছেন, ‘আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রমে ক্রমেই সেফগার্ডিং–সংক্রান্ত প্রতিকূলতা ও ঝুঁকি বাড়ছে। তাই আমাদের প্রয়োজন, সেফগার্ডিং নিয়ে বোঝাপড়া ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে জরুরি ও সম্মিলিতভাবে সেফগার্ডিং–সংক্রান্ত কার্যকরী পদক্ষেপ প্রতিষ্ঠা করা। সে লক্ষ্যেই ব্রিটিশ কাউন্সিল ফান্ডার সেফগার্ডিং কোলাবোরেটিভের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে, যেন সেফগার্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে কর্মরত অংশীদারদের একত্র করা যায়। আমি আশা করি, এই আয়োজন সেফগার্ডিং নিয়ে চলমান উদ্যোগকে আরও সমৃদ্ধ করবে এবং আমরা এই আয়োজন ভবিষ্যতেও চলমান রাখতে সচেষ্ট থাকব।’
এই গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো, বহুপক্ষীয় সংস্থা, বেসরকারি খাত, দাতা সংস্থা, আয়োজক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার ২৫ প্রতিনিধি।
অনুষ্ঠানে ফান্ডার সেফগার্ডিং কোলাবোরেটিভের সিনিয়র রিজিওনাল অ্যাডভাইজর (দক্ষিণ এশিয়া) অনুরাধা মুখার্জি বলেন, ‘ফান্ডার সেফগার্ডিং কোলাবোরেটিভ এমন একটি পৃথিবী নির্মাণে বদ্ধপরিকর, যেখানে প্রতিটি সংগঠনের কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে নিরাপত্তা ও কল্যাণ। নিরাপদ সাংগঠনিক পরিবেশ ও তা টিকিয়ে রাখতে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে আমরা বিভিন্ন দাতাদের সঙ্গে কাজ করে থাকি। বাংলাদেশের উন্নয়ন ক্ষেত্রে সেফগার্ডিংয়ের চলমান ধারা ও ভবিষ্যতের কর্মপন্থা বিষয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে এই যৌথ আয়োজন করতে পেরে আমরা খুব আনন্দিত।’
সবার জন্য সুরক্ষিত ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যেন শিশু কিংবা প্রাপ্তবয়স্ক কেউই তাঁদের বয়স, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা, আর্থসামাজিক পটভূমি, জাতিগত পরিচয়, লিঙ্গ, ধর্ম বা বিশ্বাসের কারণে কোনো ঝুঁকি কিংবা হয়রানির শিকার না হন। মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে সচেষ্ট ব্রিটিশ কাউন্সিল সেফগার্ডিং–সম্পর্কিত চর্চা নিশ্চিতকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ, যেন ঝুঁকিতে থাকা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা নিরাপদ বোধ করার পাশাপাশি ব্রিটিশ কাউন্সিলের সংস্কৃতিবিষয়ক কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকৃত হন।
সেফগার্ডিং সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে ভিজিট করুন
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তির বাধা দূর করতে হবে
দেশে রোগমুক্ত সুস্থ প্রজন্ম গড়ে তুলতে ভিটামিনসমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল প্রাপ্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ড্রামে খোলা ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ একটি বড় বাধা। একইসাথে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ ও গুণগত প্যাকেজিং অত্যন্ত জরুরি।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে সোমবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত “সবার জন্য ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ ভোজ্যতেল: অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়” শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ ২০১১-১২ অনুযায়ী, প্রাক্-বিদ্যালয়গামী প্রতি পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন ভিটামিন ‘এ’ এবং দুইজন শিশু ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিতে ভুগছে। ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন, ২০১৩ অনুযায়ী ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ ব্যতীত ভোজ্যতেল বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। আইসিডিডিআর,বি-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাজারে মোট ভোজ্যতেলের ৬৫ শতাংশই ড্রামে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ তেলে কোনো ভিটামিন ‘এ’ নেই, আর ৩৪ শতাংশ তেলে রয়েছে প্রয়োজনের চেয়ে কম মাত্রায়। মাত্র ৭ শতাংশ ড্রামের খোলা তেলে আইন অনুসারে ভিটামিন ‘এ’–এর নির্ধারিত পরিমাণ পাওয়া গেছে। ফলে সাধারণ মানুষ আইনটির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, নন-ফুড গ্রেড উপকরণে তৈরি ড্রাম দিয়ে ভোজ্যতেল পরিবহন করা হয়-যেগুলো আগে কেমিক্যাল, লুব্রিকেন্ট/মবিল বা অন্যান্য শিল্পপণ্য সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়েছে। এ ধরনের ড্রামে সংরক্ষিত খোলা ভোজ্যতেল জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, পাশাপাশি এতে ভেজাল মেশানোর আশঙ্কাও থাকে। এই পুরোনো ড্রামগুলোতে কোনো লেবেল বা উৎস সম্পর্কিত তথ্য না থাকায় তেলের উৎপত্তিস্থল বা সরবরাহকারীকে শনাক্ত করা যায় না। তাই খোলা ড্রামে ভোজ্যতেল বাজারজাতকরণ আইন বাস্তবায়নে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কর্মশালায় জানানো হয়, জুলাই ২০২২ এর পর থেকে ড্রামে খোলা সয়াবিন তেল এবং ডিসেম্বর ২০২২ এর পর থেকে খোলা পাম তেল বাজারজাতকরণ বন্ধে শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি। তাই নিরাপদ ভোজ্যতেল ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতি অন্ধত্ব, গর্ভকালীন মাতৃমৃত্যুসহ নানা শারীরিক সমস্যার কারণ হতে পারে। অন্যদিকে, ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাব রিকেটস ও হাড় ক্ষয়ের পাশাপাশি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ প্রেক্ষাপটে, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সমৃদ্ধকরণ একটি সাশ্রয়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিদিনের খাবারের মাধ্যমে সহজেই এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন পেতে পারে।
এছাড়াও কর্মশালায় ভোজ্যতেলে গুণগতমানের প্যাকেজিং নিশ্চিতের উপরও জোর দেওয়া হয়। সাধারণত সূর্যরশ্মিসহ যেকোন আলোর সংস্পর্শে ভিটামিন ‘এ’ নষ্ট হতে থাকে এবং একপর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। ভোজ্যতেল বাজারজাত হয় যেসব বোতলে সেগুলোর অধিকাংশই আলো প্রতিরোধী না হওয়ায় ভোজ্যতেলের গুণগত ও পুষ্টিমান হ্রাস পায়। সে কারণে ভোজ্যতেলের প্যাকেজিংয়ের জন্য আলো প্রতিরোধী অস্বচ্ছ উপাদান ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর-এর কার্যক্রম ও গবেষণাগার বিভাগের পরিচালক (উপসচিব) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের কনসালটেন্ট সাবেক অতিরিক্ত সচিব মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার; ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর অ্যাসোসিয়েট সায়েন্টিস্ট আবু আহমেদ শামীম; দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।
কর্মশালায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের লার্জ স্কেল ফুড ফর্টিফিকেশন কান্ট্রি এডভোকেসি বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. রীনা রাণী পাল এবং প্রজ্ঞা'র কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।
ঢাকা/হাসান/সাইফ