আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা চায় জামায়াতে ইসলামী। সিসি ক্যামেরা বসাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতা চেয়েছে দলটি।

রোববার রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকা নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। এ সময় ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য সহযোগিতা চাওয়া হয়। 

চলতি মাসের শুরুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদরদপ্তর ব্রাসেলসে সফর করেন জামায়াত আমির এবং নায়েবে আমির ডা.

সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা. তাহারে। 

তিনি বলেন, ব্রাসেলস সফরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নারী অধিকার, সংখ্যালঘু এবং প্রধান রপ্তানি খাত গার্মেন্টস বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান জানতে চেয়েছিল। জামায়াত তাদের স্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছে। 

রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে ডা. তাহের বলেছেন, আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক ইইউকে অনুরোধ করেছে জামায়াত। প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে সহযোগিতা চেয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি এবং এক ব্যক্তি যেন দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন- এসব বিষয়ে জামায়াতের অবস্থান জানানো হয়েছে।
 
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে জামায়াত। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ডা. তাহের বলেছেন, কমিশনের সুপারিশে যৌনকর্মীদের পেশাকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা হয়েছে। যা নারীর মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি চরম আঘাত। ইইউ রাষ্ট্রদূত জামায়াতের এই অবস্থানের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ৪৩ শতাংশই নারী। এ বিষয়কেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। 

বৈঠকে বাংলাদেশ ও ইউরোপের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে আলোচনা হয়েছে বলে জামায়াতের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। 

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ, আমিরের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ