সাতছড়ির তেলমাছড়ায় পানি সংকটে বন্যপ্রাণী
Published: 27th, April 2025 GMT
মাধবপুরে সাতছড়ি বনাঞ্চলের তেলমাছড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট।
এতে সংরক্ষিত পাহাড়ি অঞ্চলে খাবার পানি পাচ্ছে না বন্যপ্রাণীরা।
সম্প্রতি বনের তেলমাছড়া অংশে গিয়ে দেখা যায়, বন্যশূকর, বানর, মায়া হরিণ, সজারুসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী উন্মুক্ত স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছড়া থেকে নেমে আসা সরু নালায় তৃষ্ণা মেটানর চেষ্টা করছে। অনেক প্রাণী পানির সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রাণী চলে আসে তেলমাছড়া বিট অফিসের সামনে। সেখানে তারা ভিড় জমায় একটু পানির আশায়।
বনরক্ষীরা জানান, সাতছড়ি তেলমাছড়া সংরক্ষিত বনভূমিকে বন্যপ্রাণীদের জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণার পর থেকে এ বনে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ভালো রকম বেড়েছে। ২০০৪ সাল থেকে লোকালয়ে ধরা পড়া বন্যপ্রাণী সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বনে অবমুক্ত করা হচ্ছে। এসব কারণে বনে এখন বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর বিচরণ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পানির উৎসে যথেষ্ট পানি পাচ্ছে না তারা।
তারা জানান, বন্য পশুপাখির খাবারের উৎস সৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। পানির সংকট দূর করতে করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন বিট অফিসের সংশ্লিষ্টরা। খরা মৌসুমে এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বনের ভেতরে বড় কোনো জলাধার নেই। তেলমাছড়া বিটের ফরেস্টার সাদিকুর রহমান জানান, বনে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর দেখা মিলছে। পশুপাখির জন্য অনেক ফলদ গাছ লাগানো আছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে এখন পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বনের ভেতর জলাধার তৈরি করতে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সিলেট অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুধু বন্য শূকরই নয়; মায়া হরিণ, বানর, সজারু, এমনকি সাপও পানির সংকটে আছে। বনের ভেতর খালি জায়গায় জলাধার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন ধরন র স তছড়
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।