মাধবপুরে সাতছড়ি বনাঞ্চলের তেলমাছড়া বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র পানির সংকট। 
এতে সংরক্ষিত পাহাড়ি অঞ্চলে খাবার পানি পাচ্ছে না বন্যপ্রাণীরা।
সম্প্রতি বনের তেলমাছড়া অংশে গিয়ে দেখা যায়, বন্যশূকর, বানর, মায়া হরিণ, সজারুসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণী উন্মুক্ত স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছড়া থেকে নেমে আসা সরু নালায় তৃষ্ণা মেটানর চেষ্টা করছে। অনেক প্রাণী পানির সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রাণী চলে আসে তেলমাছড়া বিট অফিসের সামনে। সেখানে তারা ভিড় জমায় একটু পানির আশায়।
বনরক্ষীরা জানান, সাতছড়ি তেলমাছড়া সংরক্ষিত বনভূমিকে বন্যপ্রাণীদের জন্য অভয়ারণ্য ঘোষণার পর থেকে এ বনে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা ভালো রকম বেড়েছে। ২০০৪ সাল থেকে লোকালয়ে ধরা পড়া বন্যপ্রাণী সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বনে অবমুক্ত করা  হচ্ছে। এসব কারণে বনে এখন বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর বিচরণ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পানির উৎসে যথেষ্ট পানি পাচ্ছে না তারা।
তারা জানান, বন্য পশুপাখির খাবারের উৎস সৃষ্টিতে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। পানির সংকট দূর করতে করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছেন বিট অফিসের সংশ্লিষ্টরা। খরা মৌসুমে এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বনের ভেতরে বড় কোনো জলাধার নেই। তেলমাছড়া বিটের ফরেস্টার সাদিকুর রহমান জানান, বনে বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর দেখা মিলছে। পশুপাখির জন্য অনেক ফলদ গাছ লাগানো আছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে এখন পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বনের ভেতর জলাধার তৈরি করতে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। 
সিলেট অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুধু বন্য শূকরই নয়; মায়া হরিণ, বানর, সজারু, এমনকি সাপও পানির সংকটে আছে। বনের ভেতর খালি জায়গায় জলাধার তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন ধরন র স তছড়

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ