পিছিয়ে থেকে সিরিজ নির্ধারণী টেস্ট খেলতে নামা নাজমুল হোসেন শান্তদের মনের অবস্থা এখন অনেকটা এসএসসি পরীক্ষার্থীর মতোই। প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার আগে পরীক্ষার্থীদের মনে যে ধুকপুকানি থাকে, চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু না হওয়া পর্যন্ত স্বাগতিক দলের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থাও অনেকটা সে রকম থাকতে পারে। এই পরিস্থিতি ক্রিকেটাররাই আমদানি করেছেন সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজের প্রথম টেস্ট হেরে গিয়ে। ছোট দলের কাছে সিরিজ হারের শঙ্কা ও ভয় থাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। শান্তরা এখান থেকে যত দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারবেন, ততই মঙ্গল।
ছোট দলের কাছে হেরে যাওয়ার শঙ্কা বাংলাদেশকে সব সময় ব্যাকফুটে রাখে। তাই তো টি২০ ক্রিকেটে পাপুয়া নিউগিনি, আফগানিস্তানের কাছেও হেরেছেন মুশফিকুর রহিমরা। সেখানে জিম্বাবুয়ে তো চেনা এবং নিয়মিত সিরিজ খেলার সঙ্গী। তাদের বিপক্ষে যে কোনো সংস্করণে চাপ নিয়ে ম্যাচ খেলেন। সিলেট টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার বড় কারণ মনে করা হয় চাপকে। চট্টগ্রাম টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জের সঙ্গে সিরিজ হারের শঙ্কা হাত ধরাধরি করে থাকবে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে। এই পরিস্থিতিতে শান্তরা কতটা পেশাদারিত্ব দেখাতে পারবেন জানা নেই।
জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ বিপরীত। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার সুবিধা নিয়ে খেলতে পারবে তারা। তাদের অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিন গতকাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সিরিজ জয়ের চাপ নেই। সিলেটের মতো চট্টগ্রামেও ভালো ক্রিকেট খেলার পরিকল্পনা জিম্বাবুয়ের। এই কমফোর্ড জোনে নেই বাংলাদেশ। ব্যাটাররা ভালো শেপে না থাকায় দুশ্চিন্তা রয়েছে। তবে সিরিজ বাঁচাতে নিজেদের পছন্দের উইকেট গড়া হয়ে থাকতে পারে। যদিও উইকেট দেখে টাইগার কোচ ফিল সিমন্সের কাছে ভালোই মনে হয়েছে, ‘উইকেট খুবই ভালো মনে হচ্ছে। বেশ শক্ত, মসৃণ এবং কিছুটা শুষ্ক। ম্যাচের পরের দিকে কিছুটা টার্ন আশা করতে পারি, যা আমাদের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।’ নেট সেশনের অভিজ্ঞতা থেকে সিমন্সের মনে হয়েছে, ‘নেটের উইকেটগুলো আমাদের কাছ কিছুটা মন্থর মনে হয়েছে। খেলা যত এগোবে, হয়তো স্পিন বেশ বড় ভূমিকা রাখবে এই টেস্টে।’
স্পিন ট্র্যাক হলে একাদশে দু’জন বিশেষজ্ঞ স্পিনার দেখা যেতে পারে। বাঁহাতি তাইজুল ইসলামের সঙ্গে খেলতে পারেন অফ স্পিনার নাঈম হাসান। সে ক্ষেত্রে মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে তিন স্পিনার জিম্বাবুয়ের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারেন প্রথম দিন থেকে। স্পিনার যে বেশি খেলবে, তা বোঝা গেছে পেসার নাহিদ রানার জায়গায় বাঁহাতি তানভীর ইসলামকে স্কোয়াডে নেওয়ায়। একাদশ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কোচ বলেন, ‘তিন সিমার দুই স্পিনারের একাদশ হতে পারে, আবার দুই সিমার তিন স্পিনারও হতে পারে। দুটির যে কোনোটি হতে পারে। আপনাকে সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। অবশ্যই আমাদের ভাবনায় আছে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব কাল (আজ) পরে।’ ফাস্ট বোলার নাহিদ রানা সিলেট টেস্ট শেষ করে পিএসএল খেলতে যাওয়া বোলিং ইউনিটে একটি পরিবর্তন অনিবার্য। ব্যাটিং লাইনআপেও দেখা যেতে পারে একটি পরিবর্তন। জাতীয় লিগে সাত ম্যাচে ৭০০ রান করা এবং ঢাকা লিগে দারুণ ছন্দে থাকা এনামুল হক বিজয়কে চট্টগ্রাম টেস্টের দলে নেওয়া হয়েছে। আজ খেলালে টেস্ট ক্রিকেটে পুনর্জন্ম হবে তাঁর। টপঅর্ডার তথা ওপেনিং জুটি টানা ফেল করায় বিজয়ের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। এ রকম দুয়েকটি পরিবর্তন নিয়ে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম আজ শুরু হচ্ছে সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় টেস্ট।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষের ‘দ্বিতীয় ঘুম’এর যুগ সম্পর্কে কতটা জানেন
তেলের বাতি, গ্যাসের বাতি এবং বৈদ্যুতিক বাতি ক্রমে সভ্যতায় যোগ হয়েছে। এর আগে মানুষ প্রাকৃতিক আলোর সঙ্গে মানিয়ে জীবন যাপন করতো। প্রাক-শিল্প যুগের সমাজে ‘দ্বিতীয় ঘুম’-এর অভ্যাস ছিলো মানুষের।
দ্বিতীয় ঘুম বলতে ঐতিহাসিকভাবে প্রচলিত এমন এক ধরনের ঘুমের ধরণকে বোঝায়, যেখানে মানুষ রাতে একটানা আট ঘণ্টা না ঘুমিয়ে ঘুমকে দুটি ভাগে ভাগ করে নিত। একে দ্বি-পর্যায়ের ঘুম বা খণ্ডিত ঘুম বলা হয়। দেখা যেত যে— সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পর মানুষজন বিছানায় যেত এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত।
আরো পড়ুন:
রক্তস্বল্পতা দূর করতে এই শাক খেতে পারেন
টানা ৬ মাস রাতের খাবার দেরিতে খেলে যা হয়
প্রথম ঘুমের পর তারা প্রায় এক ঘণ্টা জেগে থাকত। এই সময়ে বাড়ির হালকা কাজ করা, প্রার্থনা করা, পড়াশোনা করা, প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করা বা অন্তরঙ্গ কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার মতো কাজগুলো করতো।
তারা আবার বিছানায় ফিরে যেত এবং ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত আরও ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা ঘুমাত, যাকে ‘দ্বিতীয় ঘুম’ বা ‘ভোরের ঘুম’ বলা হত।
গত দুই শতাব্দী ধরে সামাজিক জীবনে আসা পরিবর্তনের কারণে মানুষের দ্বিতীয় ঘুমের অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেসব কারণে মানুষ দ্বিতীয় ঘুমের অভ্যাস হারিয়ে ফেলেছে, তার একটি হলো ‘কৃত্রিম আলো ব্যবহার।’
১৭০০ এবং ১৮০০ এর দশকে, প্রথমে তেলের বাতি, তারপর গ্যাসের আলো এবং অবশেষে বৈদ্যুতিক আলো রাতকে আরও ব্যবহারযোগ্য করে তুলেছে। ফলে রাতও মানুষের কাছে জাগ্রত সময়ে পরিণত হতে শুরু করে।
সূর্যাস্তের কিছুক্ষণ পরে ঘুমাতে যাওয়ার পরিবর্তে, মানুষ প্রদীপের আলোতে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেগে থাকতে শুরু করে। জৈবিকভাবে, রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়িগুলোকে (আমাদের সার্কাডিয়ান ছন্দ) পরিবর্তন করে এবং কয়েক ঘণ্টা ঘুমের পরে আমাদের শরীরকে জাগ্রত করার প্রবণতা কমিয়ে দেয়।
ঘুমানোর আগে সাধারণ ‘ঘরের’ আলো মেলাটোনিনকে দমন করে এবং বিলম্বিত করে। শিল্প বিপ্লব কেবল মানুষের কাজ করার পদ্ধতিই নয় বরং তারা কীভাবে ঘুমায় তাও বদলে দিয়েছে।
২০১৭ সালে বিদ্যুৎবিহীন মাদাগাস্কান কৃষি সম্প্রদায়ের ওপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে লোকেরা এখনও বেশিরভাগ সময় দুই ভাগে ঘুমায়, প্রায় মধ্যরাতে ঘুম থেকে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস অবলম্বনে
ঢাকা/লিপি