কোনো টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তখনই দেওয়া যেতে পারে, যখন এর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রযুক্তি জ্ঞান ও লোকবলের ঘাটতি থাকে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল তৈরি হয়েছে দেশীয় অর্থায়নে, বহু বছর ধরে সেখানে পণ্য খালাসের কাজটিও ভালোভাবে করে আসছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান। তারপরও সেটি বিদেশিদের হাতে ন্যস্ত করার যুক্তি থাকতে পারে বলে মনে হয় না।  

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে বা এনসিটিতে গ্যান্ট্রি ক্রেন আছে ১৪টি, যা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া পণ্য খালাসের পর কনটেইনার স্থানান্তরের যন্ত্রপাতিও সেখানে আছে। দেশীয় অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালের মার্চে টার্মিনালটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের আওতায় পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এই প্রকল্প অনুমোদন হয়। আগামী মে মাসের মাঝামাঝি আইএফসি এই প্রকল্পের ট্রানজেকশন স্ট্রাকচারিং রিপোর্ট বা টিএসআর প্রদান করবে এবং তা অনুমোদনের পর ডিপি ওয়ার্ল্ডকে আরএফপি (রিকুয়েস্ট ফর প্রপোজাল) দেওয়া হবে। প্রকল্প অনুযায়ী, চুক্তির পর টার্মিনালটি পুরোপুরি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে চলে যাবে। তারাই মাশুল আদায় করবে, লোকবল নিয়োগ দেবে। 

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এ বছর লালদিয়ায় কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনার চুক্তি হবে ডেনমার্কের এপি-মুলার মায়েরস্কের সঙ্গে। এ ছাড়া বে টার্মিনাল প্রকল্পে দুটি টার্মিনাল সিঙ্গাপুরে পিএসএ ইন্টারন্যাশনাল ও আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড নির্মাণ ও পরিচালনার চুক্তি হতে পারে এ বছর। এই তিন টার্মিনালে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই বিনিয়োগ করে টার্মিনাল নির্মাণ ও পরিচালনা করবে। 

এসব বিদেশি বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু নিউমুরিং টার্মিনাল তো স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। তারপরও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার উদ্যোগ রহস্যজনক। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এর সঙ্গে বন্দরের লাভালাভের চেয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। 

চট্টগ্রাম বন্দরে বর্তমানে যে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল চালু আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ৯৫০ মিটার লম্বা নিউমুরিং টার্মিনাল। গত বছর বন্দরের মোট কনটেইনারের ৪৪ শতাংশ ওঠানো-নামানো হয়েছে এই টার্মিনালে। অপর তিনটি টার্মিনাল চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনালে (সিসিটি) গত বছর ১৯ শতাংশ এবং জেনারেল কার্গো বার্থ বা জিসিবিতে ৩৭ শতাংশ কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়।

বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তাঁদের উদ্বেগ, বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দেওয়া হলে অনেক শ্রমিক চাকরি হারাবেন এবং জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। যদিও নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। দেশের স্বার্থের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। কারও চাকরিও যাবে না। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যানও অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বক্তব্যে পুরোপুরি আশ্বস্ত হওয়া যায় না। 

সে ক্ষেত্রে নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া চলছে, সেটা পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে। আমরা যদি দেশের বৃহত্তম বন্দরের সব টার্মিনাল পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে ছেড়ে দিই; নিজেদের সক্ষমতা তৈরি হবে কী করে? বাংলাদেশের সব সমুদ্রবন্দরকে স্বাবলম্বী করতে হবে, যাতে আমাদের ব্যবসায়ীদের পণ্য রপ্তানির জন্য অন্য দেশের কাছে ধরনা দিতে না হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব সরক র প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি

জনপ্রশাসনে এখন নিয়মিত উপসচিব পদ রয়েছে এক হাজারের মতো। কিন্তু এই পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ১ হাজার ৫৯৬ জন। পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা আগে থেকেই বেশি ছিল। তারপরও গত মাসে ২৬৮ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

পদোন্নতি দেওয়ার পর কর্মকর্তাদের দ্রুত পদায়ন করা যায় না। কারণ, পদায়নের মতো জায়গা কম, খালিও থাকে না। তখন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে আগের পদেই রেখে দেওয়া হয়, তাঁরা আগের কাজই করেন। শুধু বাড়ে বেতন ও ভাতা। পাশাপাশি উপসচিব পদে তিন বছর চাকরির পর গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদের ঋণসুবিধা পাওয়া যায়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ১ সেপ্টেম্বরের প্রজ্ঞাপনে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ৫২ জন কর্মকর্তাকে আগের পদেই পদায়ন (ইনসিটু) করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গত ২৮ আগস্ট উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া এ রকম ২৬৮ জন কর্মকর্তার বেশির ভাগের দায়িত্বে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

পদের চেয়ে কর্মকর্তার সংখ্যা আগে থেকেই বেশি ছিল। তারপরও গত মাসে ২৬৮ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।বাংলাদেশ সচিবালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এই সরকারও পুরোনো পথে, প্রশাসনে পদ ছাড়াই পদোন্নতি