Prothomalo:
2025-06-16@11:19:07 GMT

ডলারের সিংহাসন কি কেঁপে উঠছে

Published: 28th, April 2025 GMT

গত জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে ফেরার পর বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান মনে করিয়ে দিয়েছেন চার্লস পি কিন্ডলবার্গারের সেই কথা, ‘আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ে বেশি ভাবলে মানুষ পাগল হয়ে যায়।’ এমন অস্থির সময়েই ইয়েল ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে ডলারের আধিপত্য নিয়ে দুটি বই—পল ব্লুস্টেইনের ‘কিং ডলার’ এবং কেনেথ রগফের ‘আওয়ার ডলার, ইয়োর প্রবলেম’। 

দুটি বই-ই ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনের পর প্রকাশিত। ব্লুস্টেইনের বইটি বেরিয়েছিল ট্রাম্পের বিশ্ব অর্থনীতির বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর আগে। রগফ ও আমি ১৯৮৩ সাল থেকে একসঙ্গে গবেষণা করেছি। ব্লুস্টেইন ছিলেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্ট–এর সাংবাদিক। 

এমআইটিতে পড়ার সময় আমরা শিখেছিলাম, আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে সবকিছু একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই ডলারের আধিপত্য বোঝার জন্য বৈশ্বিক রাজনীতি, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক চিন্তায় পরিবর্তনের দিকে নজর দিতে হয়। রগফ ও ব্লুস্টেইনের বই এই বিষয়গুলো সহজ করে ব্যাখ্যা করেছে। ডলার ১৯৪৪ সালের ব্রেটন উডস সম্মেলনের মাধ্যমে আধুনিক বিশ্বের প্রধান রিজার্ভ মুদ্রা ও বাণিজ্যের মাধ্যম হয়ে ওঠে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি ডলারের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছিল। 

সে সময় অধিকাংশ দেশ নিজেদের মুদ্রাকে ডলারের সহযোগী হিসেবে দাঁড় করায়। আর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দেয়, চাইলে প্রতি আউন্স সোনার বিনিময়ে তারা ৩৫ ডলার ফেরত দেবে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ছিল অপেক্ষাকৃত স্বাধীন; তবে তাকে বিশ্বব্যবস্থার স্থিতিশীলতার দিকেও খেয়াল রাখতে হতো।

১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধব্যয়, বাজেট–ঘাটতি ও মূল্যস্ফীতির চাপে পড়ে। প্রেসিডেন্ট নিক্সন তখন ডলারে স্বর্ণ বিনিময় বন্ধ করেন এবং আমদানি শুল্ক বসান। ট্রেজারি সেক্রেটারি জন কনলি তখন বলেছিলেন, ‘ডলার আমাদের মুদ্রা, কিন্তু এটা তোমাদের সমস্যা।’ এরপর বড় বড় দেশগুলো নিজেদের মুদ্রাকে জাগিয়ে তুলতে শুরু করে। অনেকেই ভেবেছিলেন, ডলারের আধিপত্য কমবে, কিন্তু তা হয়নি।

বিশ্বব্যাপী আর্থিক তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমে যাচ্ছে। ফেডের ডলার সোয়াপ লাইনের ওপরও আস্থা দুর্বল হচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি অতিরিক্ত উদার হলেও ডিজিটাল ডলার বা সিবিডিসি চালুর উদ্যোগ বন্ধ করেছে। এটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একঘরে করছে।

ডলার নানা চ্যালেঞ্জের মধ্যেও টিকে থেকেছে। ১৯৭০-এর দশকে আইএমএফ বিশেষ ড্রয়িং রাইটস (এসডিআর) চালু করলেও, ডলার বিকল্প হারায়নি। ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান পল ভলকারের কঠোর নীতিতে মূল্যস্ফীতি কমে আসে, আর্থিক বাজারের উদারীকরণ হয় এবং মার্কিন ট্রেজারি বন্ড বিশ্বের কাছে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে জনপ্রিয় হয়। 

বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ৮৮ শতাংশে এখনো ডলার বিজড়িত। তবে ডলারের শক্তির ভিত্তি (আইনের শাসন, মুক্তবাজার, মূল্য স্থিতিশীলতা) ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। আমেরিকার আর্থিক অব্যবস্থাপনা এত বেড়েছে যে কংগ্রেসের কাছ থেকে দায়িত্বশীল বাজেট প্রত্যাশা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। 

ব্লুস্টেইন কিছুটা আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু রগফ মনে করেন, ডলারের আধিপত্যের সময় ফুরিয়ে আসছে এবং পতনের মূল কারণ আমেরিকার নিজের ভেতর থেকেই আসছে।

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমিয়ে দিয়েছে, মিত্রদের আস্থা হারিয়েছে এবং দেশের ভেতর ফেডারেল রিজার্ভ ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছে। এতে ডলারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

আরও পড়ুনএকটি কাগজের নোট যেভাবে অস্ত্র হয়ে উঠল০২ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বব্যাপী আর্থিক তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কমে যাচ্ছে। ফেডের ডলার সোয়াপ লাইনের ওপরও আস্থা দুর্বল হচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রতি অতিরিক্ত উদার হলেও ডিজিটাল ডলার বা সিবিডিসি চালুর উদ্যোগ বন্ধ করেছে। এটি বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রকে আরও একঘরে করছে।

এপ্রিলের শুরুতে ট্রাম্প যখন ‘মুক্তির দিন’ ঘোষণা করে নতুন শুল্ক আরোপ করেন, তখন মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার বেড়ে যায়, আর ডলার পড়ে যায়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মার্কিন সম্পদের ওপর আস্থা কমে যায় এবং শেয়ারবাজারও বড় ধাক্কা খায়।

এই এপ্রিল মাস সত্যিই টি এস এলিয়টের ভাষায় ‘সবচেয়ে নিষ্ঠুর মাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ডলারের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। যদি বর্তমান প্রবণতা চলতে থাকে, তাহলে হয়তো বিশ্ব মুদ্রাব্যবস্থায় ডলারের একক আধিপত্যের যুগ শেষ হয়ে আসছে।

মরিস অবস্‌ফেল্ড আইএমএফের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বার্কলে)-এর অর্থনীতির ইমেরিটাস অধ্যাপক

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ল স ট ইন ব যবস থ য় আর থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুরে সাত পরিবারকে ‘একঘরে’, মাইকিং করে পণ্য না বেচতে হুঁশিয়ারি

জামালপুর শহরের দাপুনিয়া এলাকায় সাতটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এলাকার কোনো দোকানদার পণ্য বিক্রি করলে কিংবা কোনো প্রতিবেশী কথা বললে গুনতে হবে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা। মাইকিং করে এমন ঘোষণা দিয়ে এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল পরিবারগুলোকে একঘরে করে রেখেছে। একঘরে হওয়া একটি পরিবার প্রতিকার চেয়ে গতকাল শনিবার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে।

লিখিত অভিযোগ ও পরিবারগুলো সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার শহরের দাপুনিয়া এলাকার বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দেওয়ার বিষয় নিয়ে মো. মন্টু ও ইলেকট্রিশিয়ান মো. মুনছুরের মধ্যে প্রথমে ঝগড়া হয়। এরপর শুক্রবার এলাকার মসজিদে দুজনে নামাজ পড়তে যান। নামাজের পর আবারও মন্টু ও মুনছুরের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এ সময় মুনছুরের ছেলে মন্টুকে ঘুষি মারেন। এ ঘটনার জেরে শুক্রবার রাতেই এলাকায় সালিস বসে। সালিসে স্থানীয় শামীম আহমেদ, আমিনুল ইসলামসহ কয়েকজন মুনছুরকে জরিমানা করেন। জরিমানার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মুনছুরদের সাতটি পরিবারকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ওই রাতেই এলাকায় মাইকিং করে সাতটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই সাত পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে প্রতিবেশী কেউ ওঠবস করলে তাঁদেরও একঘরে করে রাখার হুমকি দেওয়া হয়। ওই সাত পরিবারের কাউকে মসজিদ, দোকান, স্কুল, বাজার ও প্রকাশ্যে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে দেখা গেলে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হবে।

সাত পরিবারের মধ্যে এক পরিবারের মো. ইসমাইল থানায় ওই লিখিত অভিযোগ দেন। তাঁর ছেলে মৌকিব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাতটি পরিবার আমরা একই গোষ্ঠীর। মুনছুর আমার বাবার চাচাতো ভাই। তাঁর (মুনছুর) সঙ্গে মন্টুর সামান্য ঝগড়া হয়। এ ঘটনার সঙ্গে আমাদের সাত পরিবারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শুধু একই গোষ্ঠীর হওয়ার কারণে আমাদের একঘরে করা হয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, একঘরে করার রাতে লোকজন একত্র হয়ে বাড়িতে ঢিল ছুড়ে মারেন। কোনো দোকানদার তাদের কাছে কিছু বিক্রি করছেন না।

সালিসে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন শামীম আহমেদ। তিনি দাবি বলেন, একঘরে করার সিদ্ধান্তের সময় তিনি ছিলেন না। এটা সবাই জানেন। তারপরও থানায় অভিযোগ দেওয়ার সময় তাঁর নাম দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি পরিবারগুলো সম্পর্কে বলেন, সমাজের মানুষের সঙ্গে তাঁদের ওঠা–বসা ভালো না। সমাজের সবার বক্তব্য, তাঁরা খারাপ লোক। তাঁদের সঙ্গে এলাকার মানুষের বনাবনি নেই। তাঁরা দু-এক দিন পরপর ঘটনা ঘটায়। সেটার প্রশ্রয় না দেওয়ায় সমাজের মানুষ এখন তাঁদের কাছে খারাপ। মন্টু ও মুনছুরের বিষয় নিয়ে সমাজে ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ বিচার করেছে। কিন্তু থানার অভিযোগে শুধু তাঁর পরিবারের পাঁচজনের নাম দেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগী মমিন শেখ অভিযোগ করেন, ‘আমাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে। আমরা বাড়ির বাহিরে গেলেই ওরা লাঠি নিয়ে আসে। প্রতিটি দোকানে বলেছে, আমাদের কাছে কিছু যাতে বিক্রি না করে। আমাদের শিশুরা দোকানে গিয়েছিল। কিন্তু দোকান থেকে কোনো পণ্য বিক্রি করেনি। আমরা বাড়িতে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছি।’

জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) আনিসুর আশেকীন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। পরে ওই এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। উভয় পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। আজ তাঁদের বসে বিষয়টি সমাধান করার কথা আছে। বিষয়টির সমাধান না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জামালপুরে ‘একঘরে’ করা সাত পরিবার প্রশাসনের হস্তক্ষেপে স্বাভাবিক জীবনে
  • জামালপুরে সাত পরিবারকে ‘একঘরে’, মাইকিং করে পণ্য না বেচতে হুঁশিয়ারি