সবাই গায়ের উপর উঠে পড়ে, ইউটিউবার ও ভ্লগারদের উদ্দেশ্যে স্বস্তিকা
Published: 28th, April 2025 GMT
ফেসবুক ও ইউটিউবের ভিডিওতে আয়ের জন্য সিনেমার প্রেস মিট বলেন কিংবা প্রচারণার যে কোনা আয়োজনে এখন ইউটিউবার ও ব্লগারদের উৎপাত তুমুলভাবে বেড়েছে। তারকাদের মোবাইল ও ক্যামেরা হাতে তারকাদের গায়ের উপরে উঠে যেতেও দ্বিধা করছেন না তারা। এমন পরিস্থিতির কারণে আগামীতে আর কোনো সিনেমার প্রিমিয়ার শোতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে স্বস্তিকার যুক্তি হল, সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনীতে আয়োজকরা টিমের সব কলাকুশলীদের আমন্ত্রণ জানায় না। এছাড়া প্রিমিয়ারে তারকাদের প্রতিক্রিয়া জানতে ভিড় করেন ইউটিউবাররা। ওই ভিড় এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আরেকটি কারণ।
স্বস্তিকা অভিনীত ‘দুর্গাপুর জংশন’ সিনেমা কদিন আগে মুক্তি পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে। সিনেমায় তিনি একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রিমিয়ার শোয়ের আয়োজন এবং এই সময়ের সাংবাদিকতা নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন স্বস্তিকা। এছাড়া ফেইসবুকেও এক পোস্টে নিজের মতামত জানিয়েছেন স্বস্তিকা।
স্বস্তিকা লিখেছেন, আমি এখন থেকে আর কোনো সিনেমা প্রিমিয়ারে যাব না। নিজের সিনেমার না, অন্যের সিনেমারও না। এমনিও কম যাই, সে নিজের হোক বা পরের।
প্রিমিয়ার আয়োজকদের সমালোচনা করে স্বস্বিকা বলেন, ‘অর্ধেক সময়েই কলাকুশলীদের ডাকা হয় না। যে প্রোডাকশন দাদারা মুখের কাছে জল, চা, খাবার ধরল, গরমের দিনে গ্লুকোজ় গুলে নিয়ে এল, তাদের প্রিমিয়ারে নিমন্ত্রণ করাটা অনেক বেশি প্রয়োজনীয়।’
প্রিমিয়ার শো নিয়ে অতীত স্মৃতি তুলে ধরেছেন এই অভিনেত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘বাবার সঙ্গে বাবার অনেক সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনে গিয়েছি। টগরি দেখতে গিয়েছিলাম নবীনা প্রেক্ষাগৃহে। বাবা এবং সন্ধ্যা রায় ছিলেন সেই সিনেমায়। সেখানে সব কলাকুশলীকেই ডাকা হয়েছিল। শুধু দেখনদারিতে এসে ঠেকেছে সব। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বাড়ি ফেরার চেয়ে পরে না হয় টিকিট কেটে দেখে নেব ’
সিনেমার প্রিমিয়ারে ইউটিউবারদের ভিড় নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে স্বস্তিকা বলেছেন, সবার হাতে ফোন, সবাই ভিডিও বা ছবি তোলেন। তাই বোঝার উপায় নেই আসল সাংবাদিক আসলে কে। অভিনেত্রীর ভাষ্য, কেনই বা তাদেরকে বাইট দেব বা তাদের ফোনে বন্দী হব জানি না। হঠাৎ করে এই শহরে সবাই ছবিশিকারি। আর কোনো নিয়ম নেই, কোনো নির্ধারিত জায়গা নেই, যেখানে মোবাইল হাতে চিত্রগ্রাহকেরা দাঁড়াবেন। সবাই গায়ের ওপর উঠে পড়ে। পারলে নাকের ফুটোর মধ্যে মোবাইল গুঁজে দিতে পারলেই ব্যস!
নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ছবি তুলতে গিয়ে সেদিন কেউ একজন আমাকেই ধাক্কা মেরে ফেলে দিল। এত ঠেলাঠেলি ধাক্কাধাক্কি পোষায় না। আমি দেহরক্ষী নিয়ে ঘুরতে অক্ষম, সক্ষম হতে চাই না। রাস্তাঘাটে শুটিং করতে লাগে ঠিকই; কিন্তু তার বাইরে নিজের ছবি দেখতে গিয়ে যদি পেছনে দেহরক্ষী নিয়ে যেতে হয় (কারণ, মানুষ গায়ে উঠে পড়বেই) তাহলে সেখানে না যাওয়াই ভালো।’
হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই সময়ের সাংবাদিকতা নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন স্বস্তিকা। তার কথায়, সাংবাদিকদের উচিত 'ফ্যাক্ট চেক করা যে আদৌ ঘটনাটা ঘটেছে কি না' সে খোঁজ নেওয়া।
স্বস্তিকা বলেন, ‘সবাই এখন ব্রেকিং নিউজের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছে। হাজারটা পোর্টাল সবাই ব্রেকিং নিউজের পেছনে ছুটছে। কে কার আগে পোস্ট করবে। কিন্তু আদৌ কি ঘটনাটা ঘটছে, সেটা জানে না। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, নেতিবাচক খবর বেশি ভাইরাল হয় পজিটিভ খবরের থেকে।একবার ভুল তথ্য ভাইরাল হলে হইচই পড়ে যায়। এটা দুর্ভাগ্যের যে আমরা যে সময় এখন আছি, সেখানে সবাই ছুটে চলেছে। কেউ পিছু ফিরে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করে না।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স বস ত ক ম খ র জ অভ ন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ