ঢাবির ‘ক্ষণিকা’ বাসে হামলা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর নিন্দা
Published: 29th, April 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষণিকা’ বাসে মঙ্গলবার দুপুরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। একই সঙ্গে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরা আজমপুর এলাকায় টঙ্গী-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী ‘ক্ষণিকা’ বাসে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। হামলায় বাসচালকসহ পাঁচ–ছয়জন আহত হন। আহত ব্যক্তিরা বর্তমানে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলপাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ভিসি চত্বর ঘুরে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। সেখানে তাঁরা সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মাহমুদ হামলাকারীদের দুর্বৃত্ত উল্লেখ করে বলেন, কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি সারা দেশে বায়বীয় বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকের ঘটনায় শিক্ষার্থী সেজে কারা হামলা করেছে, তাদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব আল ইসলাম বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আঘাত করার চেষ্টা করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ ক্ষণিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। অভ্যুত্থানের ৮ মাস পার হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আমরা দ্রুত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাই।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান মঙ্গলবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সড়কে একদল স্কুলশিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা হলে তারা হঠাৎ গাড়ি ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসটিও ভাঙচুর করা হয়। এতে সাতজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। হামলার সঙ্গে জড়িত সব অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে তারা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘একটি কুচক্রী মহল জুলাই গণ–অভ্যুত্থানপরবর্তী বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের অভূতপূর্ব ঐক্যে ফাটল সৃষ্টির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী রেজিমেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনৈক্যের বীজ বপণের এমন চেষ্টা আমরা দেখেছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নতুন বাংলাদেশে এমন যেকোনো কূটচাল ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।’
হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শুধু শিক্ষার পরিবেশকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিরও ইঙ্গিত করে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বহীনতা ও নিষ্ক্রিয়তা অত্যন্ত হতাশাজনক। এসব ঘটনা প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও বেশি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানায় দলটি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে নানাভাবে দোষারোপ করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে কেউ কাউকে কিছু না বললেও ছাড় দিতে নারাজ তারা।
গত ৩০ অক্টোবর জবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা জকসু নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করে।
আরো পড়ুন:
জবি প্রশাসনের কাছে ২০ দাবি জানাল ইউটিএল
পিএইচডি গবেষকদের জন্য বৃত্তি চালু করা হবে: জবি উপাচার্য
রবিবার (২ নভেম্বর) ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জকসু নির্বাচন পেছাতে নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম।
পরে সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি অভিযোগ করে, জকসু নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে এবং আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
রবিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ কারো ইশারায়, বাইরের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। আমাদের দাবি, ২৭ নভেম্বরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে জকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। নির্বাচন কমিশনের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ। তারা ২৭ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতো। কিন্তু তবু ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এতে একটি গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে অন্যদের ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “প্রশাসন ও কমিশন আগে জানিয়েছিল, আইন প্রণয়নের পরই প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা নতুনভাবে সব কাজ করতে চাচ্ছে—যেন নির্বাচন বিলম্বিত হয়। আলোচনার টেবিলে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।”
তিনি আরো বলেন, “একটা পক্ষের সব কথা শোনা হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে স্পষ্ট, নির্বাচন পেছানোর মানসিকতা নিয়েই তারা আলোচনায় বসছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের কর্মসূচির কারণে সে সময় নির্বাচন গ্রহণ করা সম্ভব নয়।”
“এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ১৬ ডিসেম্বরের পর ভোট আয়োজন করতে চাইছে। কিন্তু তখন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বা ছুটি শুরু হলে জকসু নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে,” যুক্ত করেন শিবির সভাপতি।
আপ বাংলাদেশের সঙ্গে প্যানল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইনক্লুসিভ প্যানেল করতে চাচ্ছি। আমাদের প্যানেলে কারা থাকবেন সেটা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল আলিম আরিফ, অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ও বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি।
অপরদিকে, ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, “একটি সংগঠন নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে, আরেকটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে দিতে চাইছে। আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীরা অবাধভাবে অংশ নিতে পারবে এবং সবাই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশন যেন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য সময়সূচি ঘোষণা করে এবং কোনো পক্ষের প্রভাবে না পড়ে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যে সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখানোর কথা, আজকের মতবিনিময় সভায় আমরা তা দেখতে পাইনি।”
জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। আমরা চাই না যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে হঠাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, ছাত্রশিবির দ্রুত নির্বাচন চায়, আর ছাত্রদল সেটি পেছাতে চায়—যা নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করে তুলছে। জাতীয় নির্বাচন ও জকসু নির্বাচন একই সময়ে পড়লে তা প্রশাসনিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”
এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেছিলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”
তিনি বলেছিলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী