সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের বিষয়টি নতুন নয়। এ দেশে ঠিকাদারি যতটা পেশাদারি ব্যবসা, তার চেয়েও যেন রাজনৈতিক। বিভিন্ন প্রকল্প বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যে নানা অব্যবস্থাপনা আমরা দেখতে পাই, তার অন্যতম কারণও এটি। এতে যেমন জনগণের অর্থ ও সময়ের অপচয় হয়, চরম ভোগান্তির মুখেও তাদের পড়তে হয়। যেমনটি আমরা দেখছি কুড়িগ্রামের রৌমারীতে। সেখানে একটি রাস্তা উন্নয়নের কাজ ফেলে ঠিকাদার পালিয়ে গেছেন। বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙা ইউনিয়নের একটি সড়কের কাজ ফেলে এক বছরের বেশি সময় ধরে লাপাত্তা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কাজাইকাটা, চর কাজাইকাটা, শান্তির চর, খরানিয়ার চর, ফুলকার চর, সোনাপুর, গেন্দার আলগসহ ২৫ গ্রামের অন্তত ৫০ হাজার বাসিন্দা। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ইউনিয়নটির বন্দের মোড় থেকে পশ্চিম দিকে আনন্দবাজার হয়ে তেলির মোড় পর্যন্ত ওই সড়ক পাকাকরণের কাজ শুরু হয়েছিল। গত বছরের এপ্রিল মাসে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল।

সড়ক সংস্কারের কাজটি পায় মেসার্স ফোর কিং ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর স্বত্বাধিকারী সুজাউল ইসলাম সাবেক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলে জানা গেছে। সে সূত্রে সুজাউলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি সরকারি বিভিন্ন কাজ বাগিয়ে নিতে পারত বলে স্থানীয় ব্যক্তিদের ভাষ্য। প্রতিমন্ত্রীর আত্মীয় হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে সেসব কাজ বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতাও তৈরি করতেন তিনি। দাঁতভাঙা ইউনিয়নের সড়কটির ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটেছে। যথাসময়ে কাজ শেষ তো করেননি, পরবর্তী সময়ে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে পালিয়ে যান তিনি। সরকার পতনের পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনও গ্রেপ্তার হন।

এলাকাবাসী বলছেন, সংস্কারের আগে সড়কটি দিয়ে তবু চলাচল করা যেত। এখন চলাই কঠিন হয়ে গেছে। খোয়া ভেঙে ধুলায় পরিণত হয়েছে। ধুলাময় পথ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের ব্রেক চাপলে অনেক সময় চাকা পিছলে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

রৌমারী উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলীর বক্তব্য, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারীর ছেলেকে ডেকেও কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কাজ করছেন না। শুধু কার্পেটিং বাকি থাকায় কাজটি অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকেও দেওয়া যাচ্ছে না।

এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কারণ, বৃষ্টির মৌসুমে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে। এখন কীভাবে ঠিকাদারকে রাজি করানো যায়, রাস্তার কাজটি দ্রুত শেষ করা যায়, সে ব্যাপারে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। পরবর্তী সময়ে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সোনাপুর-নোবিপ্রবি সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণে অংশীজন সভা

নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গামী (নোবিপ্রবি) সড়কটি বাংলাবাজার পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণ বিষয়ে অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে নোবিপ্রবি উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রোসয়েল ফাউন্ডেশন কনসালটেন্ট এর আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজিদ হোছাইন চৌধুরী ও নোবিপ্রবি প্রধান প্রকৌশলী মো: জামাল হোসেন।

আরো পড়ুন:

নোবিপ্রবির পুকুরে ছাত্র-ছাত্রীদের গোসলের ছবি ভাইরাল, ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন

গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল করেছে নোবিপ্রবি

এছাড়াও নোয়াখালী জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, নোয়াখালী পৌরসভা, গণপূর্ত অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, উপকূলীয় বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, নোয়াখালী সদর/সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, নোয়াখালী সদর/সুবর্ণচর উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সোনাপুর, নোয়াখালী প্রেসক্লাব, সোনাপুর পৌরবাজার কমিটি, সোনাপুর পৌর সুপার মার্কেট পরিচালনা কমিটি এবং প্রোসয়েল ফাউন্ডেশন কনসালট্যান্ট এর কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “এই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলা বাসগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। ফলে এ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা যেন এ সড়কের কাজ দ্রুত শুরু করতে পারি, তার জন্য আপনাদের সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “এই সড়ক চার লেনে উন্নীত করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে যতটুকু সহযোগিতা লাগে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি আপনাদের সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।”

সভায় সোনাপুর থেকে নোবিপ্রবি (বাংলাবাজার) সড়কাংশ চার লেনে উন্নীতকরণসহ বাংলাবাজার-সুবর্ণচর উপজেলা হেডকোয়ার্টার সড়ক (জেড-১৪৫১) যথাযথ মানে উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি’র এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রণয়নে মতামত প্রদান করেন বক্তারা। 

এছাড়া বক্তারা ওই সড়ক চার লেনে উন্নীত করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন এবং নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়কটি নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাধাগ্রস্ত হবেনা বলে জানানো হয়।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সোনাপুর-নোবিপ্রবি সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণে অংশীজন সভা
  • ‘মরণ রাস্তার মোড়ে’ সড়ক দুর্ঘটনা, বিক্ষোভ
  • ২৪ কিলোমিটারের দুঃখ দুই উপজেলাবাসীর