কর ফাঁকি দিতে চান অনেকেই। কিন্তু করদাতাদের অর্থ দেশের কাজে ‘সহিহ কায়দায় নিজের এখতিয়ারে’ নিতেও জানেন না অনেক ভদ্রলোক। যেমনটা জানতেন না পতিত সরকারের অধিকাংশ সংসদ সদস্যরা। কারণ, ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’—এর ইতিহাস এ দেশে বেশ সমৃদ্ধ।

তাহলে দিনদুপুরে রাষ্ট্রীয় তহবিলের আশপাশে থাকা ‘ভূতের’ মেরে দেওয়া থেকে জনগণের টাকা রক্ষা ও দেশবাসীর সর্বোত্তম কল্যাণে ব্যবহারের উপায় কী?

আইন প্রণয়নের পর বাজেট তৈরি যাঁদের প্রধান দায়িত্ব, সেই এমপি সাহেবদের বাদ দিয়ে এ কাজ হওয়ার নয়। কেননা এই কর্তৃত্ব তাঁদেরই; যদি তাঁরা সত্যিই জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন।

অথচ রাষ্ট্রের আয়-ব্যয়ের হিসাব–নিকাশের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিতে বরাবরই ততটা আগ্রহী দেখা যায়নি তাঁদের, যেন নিজেদের জীবনেও তাঁদের কখনো সংসার চালাতে হয়নি।

আমরা আদিম যুগে নেই বলে আয়–ব্যয় ছাড়া আধুনিক বিশ্বের যেকোনো পরিবার অচল। তবু এই পরিবারের চেয়ে আরেকটু বড় পরিসরে ভাবতে গেলেই আমাদের কী যে সংগ্রাম, ন্যায়নিষ্ঠভাবে কাজ করতে কত যে জটিলতা!

১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অনেকের পকেট থেকে আসা অর্থ এবং তাঁদের নামে ও পক্ষে ব্যয় করার প্রক্রিয়াও একটি বড় সংসার পরিচালনার মতো কাজ, যাকে কেতাবি ভাষায় বলে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।

পরিবারে রোজগার ও ব্যয়ের কর্তৃত্ব সাধারণত একই অভিভাবকের হাতে থাকে। কিন্তু সরকারের অর্থ সংগ্রহকারী ও ব্যয়কারীরা এর মালিক নন, তাঁরা খাদেম। জাতীয় রাজস্বের জিম্মাদার প্রতিষ্ঠান অর্থ মন্ত্রণালয়কে সমাজের সাংঘর্ষিক গোষ্ঠী, শ্রেণির স্বার্থকে মেলাতে হয় অঙ্ক (বরাদ্দ) ও সাহিত্য (সুন্দর বক্তব্য) দিয়ে।

রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজনে মানুষের কাছ থেকে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), শুল্ক ও অন্যান্য রাজস্ব হিসেবে অর্থ সংগ্রহ করেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা এবং এই কর আরোপ ও ব্যয়ের খতিয়ান নির্ধারণ এবং অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব সংসদ সদস্যদের। রাষ্ট্রপতি সংসদের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের কাছে এই মঞ্জুরি দাবি পেশ করে থাকেন।

পরিসংখ্যানভিত্তিক উন্নতির আরেক মানদণ্ড, মোট দেশজ আয় বা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে খুব বেশি লাভ হয় না, যদি না প্রবৃদ্ধির সুফল গণমানুষের কাছে পৌঁছায়। তাই পরিবর্তিত বাংলাদেশে সম্পদ বণ্টনের যে নতুন আয়োজন প্রয়োজন হবে, তার ইঙ্গিত থাকা উচিত ২০২৫-২৬-এর বাজেটেই।

কিন্তু ধারাবাহিকভাবে আমাদের বাজেট হয়ে দাঁড়িয়েছে একটি আমলাতান্ত্রিক কর্মযজ্ঞ, যা আসলে একটি রাজনৈতিক দলিল, নির্বাচনের আগে দেওয়া ইশতেহারের প্রতিফলন হওয়ার কথা ছিল। সেই প্রক্রিয়ায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কর্তব্য দক্ষতার সঙ্গে করণিক সমর্থন জোগানো।

আগে প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নিজের এলাকার উন্নয়ন ভাবনা থেকে কিছু কর্মসূচি ও বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করার নৈতিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও কৌশলগত, আর্থিক ও প্রশাসনিক বিষয়ে জ্ঞান এবং ক্ষেত্রভেদে সরকারি ব্যবস্থায় সমর্থনের অভাবে তাঁদের ভূমিকা তুচ্ছই রয়ে যেত।

তাই জুন মাস–কেন্দ্রিক বাজেটের মৌসুম এলে নতুন বাজেটে কী অন্তর্ভুক্ত হবে এবং বিদায়ী অর্থ বছরের কর সংগ্রহ এবং বরাদ্দকৃত টাকাপয়সা ছাড় ও ব্যয় কত দ্রুত সম্পন্ন করা যাবে, তা নিয়ে প্রশাসনিক তোড়জোড় শুরু হতো।

কীভাবে কত টাকার আয়–ব্যয়ের হিসাব মহান সংসদে উপস্থাপন করা হবে, এর সপক্ষে কীভাবে আলোচনা হবে এবং ‘হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে’ বলে কীভাবে তা পাস করা হবে, তা নির্বাহী কর্তৃপক্ষের খবরদারির মধ্যেই পড়ে থাকত।

প্রাক্‌-বাজেট পরামর্শ সভা বা সংসদে উপস্থাপিত আর্থিক বিবৃতির প্রস্তাব নিয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আলোচনার অন্যতম দিক ছিল শ্রেণিস্বার্থে করারোপ বা প্রকল্প গ্রহণের জন্য দর-কষাকষি।

জন-আকাঙ্ক্ষাকে বাজেট প্রস্তাবে রূপান্তর, নানা গোষ্ঠী ও সেক্টরের প্রতিনিধিদের মধ্যে তর্কবিতর্ক এবং সংসদ সদস্যদের মধ্যে পুরোনো সংবিধানের ধারা ৭০-এর দলীয় নিয়ন্ত্রণ এড়িয়ে স্বাধীন, উন্মুক্ত আলোচনার কোনো আয়োজনও করা হয়নি। তাই বলে ভবিষ্যতে করা যাবে না, এমন তো নয়।

অন্তত এবারের পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। সংসদবিহীন সময়ে কিন্তু একটি সহনশীল, মুক্ত পরিবেশে বাজেট প্রণয়নের দায়িত্ব পড়েছে একটি অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ওপর। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, নৈশকালীন ভোটে বা ডামি নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই এ জামানায়।

বাংলাদেশে দুই দফা প্রত্যক্ষ সামরিক শাসনামলে (১৯৭৫-৭৯ ও ১৯৮২-৮৬) সাতটি; ১৯৯৬-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে একটি, ২০০৭-২০০৮ সালে ‘ওয়ান ইলেভেন’ প্রশাসনের দুটি এবং এবারের বাজেটটি বাদে বাকি ৪২টি বাজেটই হয়েছে সংসদ কার্যকর থাকার সময়ে।

তাতেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাজেট প্রণয়ন, বৈধতা প্রদান ও বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া গণতান্ত্রিক চরিত্র ধারণ করেনি।

বরং ফ্যাসিবাদী হাসিনা আমলে তাঁর আজ্ঞাবহ সংসদ যা খুশি তা-ই অর্থ বরাদ্দ ও আর্থিক নীতির পক্ষে আইন পাস করে। এতে বিচার বিভাগ সহযোগী ভূমিকা নেয় এবং নির্বাহী বিভাগ রাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় কৈফিয়তের সংস্কৃতিকে জাদুঘরে পাঠিয়ে চুরিতন্ত্রকে স্বাভাবিক কার্যপ্রণালি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

যাহোক, গণমুখী ও ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপযোগী একটি দিকনির্দেশনামূলক বাজেট তৈরির ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সামনে।

অন্য তিনটি (১৯৯৬-৯৭, ২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯) ব্যতিক্রমী বাজেটের চেয়ে এটি আরও আলাদা এ অর্থে যে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের রয়েছে পরিবর্তন আনার বিপ্লবী ম্যান্ডেট।

সুতরাং একটি নতুন ধারার সূত্রপাত করতে পারে এই অন্তর্বর্তী বাজেট। এই উত্তরণে একটি সংসারের ধারণার বিস্তার ঘটতে পারে সমাজ ও রাষ্ট্রে এবং শক্তিশালী কিন্তু দরদি রাষ্ট্র কার্যকর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দাঁড়াতে পারে সহস্র পরিবারের পাশে।

নমুনা হিসেবে বলা যায়, স্বাস্থ্যঝুঁকি, দুর্ঘটনা বা দুর্যোগের মতো যেসব কারণে মানুষ ঋণগ্রস্ত বা সম্পদহীন হয়ে পড়ে, সেগুলো মোকাবিলায় সুদমুক্ত ঋণ ও বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে সুরক্ষাবলয় তৈরি হলে নতুন দারিদ্র্য রোধ এবং সমাজে প্রতিশ্রুতিশীল মানুষদের সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।

নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন কর্মসূচি ও প্রকল্পে (যেমন ট্যালেন্ট হান্ট, উদ্যোক্তা তৈরি এবং ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা) প্রসারে প্রণোদনা দেওয়া হলে জুলাই-আগস্ট ২০২৪ বিপ্লবের শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতিও যথাযথ সম্মান দেখানো হবে।

ছাত্র এবং সদ্য পাস করা তরুণদের ব্যাপক অংশগ্রহণে দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক ও কর সমীক্ষার মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ, সম্ভাবনা ও যৌক্তিক পরিমাণ রাজস্ব পাওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা থাকতে পারে আগামী বাজেটে।

এতে কম বয়সেই নাগরিকেরা কর প্রদান ও এর সর্বোত্তম ব্যবহার এবং উন্নয়ন ও নিজেদের দায়িত্বের বিষয়ে সচেতন হওয়ার সুযোগ পাবেন এবং নিজেদের পরার্থপরতায় নিয়োজিত করার তাগিদ অনুভব করবেন।

দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসনে ছিন্নভিন্ন হওয়া সামাজিক আবরু বা ‘সোশ্যাল ফেব্রিক’ জোড়া দিতে হলে সমাজের সব শ্রেণি–পেশার মানুষের শান্তিতে বাঁচা ও জীবনযাপনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে রাষ্ট্রকে।

সেই উদ্দেশ্যে উচ্চশিক্ষিত নাগরিক, সামাজিক রোল মডেল বা প্রবাসী গুণীজনদের শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে।

জাতীয় কল্যাণে বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে মেধাবী তরুণদের দেশে বা বাইরে প্রণোদনা এবং অনেককে ঘরে ফেরাতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া বাঞ্ছনীয়।

মানুষের মেধা-মনন, সম্ভাবনা ও ব্যক্তির অধিকার উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার আওয়ামী শাসনে জোর দেওয়া হয় ইট, কাঠ, বালু, সিমেন্ট এবং সংখ্যাতাত্ত্বিক কাগুজে উন্নয়নে, যার চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া আমরা দেখেছি জাতীয় সম্পদ লুটপাটে, আকাশছোঁয়া বৈষম্যে, অবশেষে গণরোষে তাঁর পতন ও পলায়নে।

পরিসংখ্যানভিত্তিক উন্নতির আরেক মানদণ্ড, মোট দেশজ আয় বা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে খুব বেশি লাভ হয় না, যদি না প্রবৃদ্ধির সুফল গণমানুষের কাছে পৌঁছায়। তাই পরিবর্তিত বাংলাদেশে সম্পদ বণ্টনের যে নতুন আয়োজন প্রয়োজন হবে, তার ইঙ্গিত থাকা উচিত ২০২৫-২৬-এর বাজেটেই।

একই সঙ্গে করদাতাদের অর্থ যাতে দুর্নীতির কারণে বেহাত না হয় এবং বাজেট বরাদ্দের অর্থকে পুঁজি করে কেউ যেন কমিশন বা ঘুষবাণিজ্য না করতে পারে, সে রকম পদক্ষেপ এ বাজেটে থাকা জরুরি।

আমরা হয়তো বিশ্বাস করছি না, দীর্ঘমেয়াদি, ন্যায়ভিত্তিক করনীতি, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কল্যাণ রাষ্ট্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ও পারস্পরিক সহযোগিতার সমাজ প্রতিষ্ঠা করেই কেবল মুদ্রাস্ফীতি বা কোনো অর্থনৈতিক আঘাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব। অধ্যাপক ইউনূসের বাজেট দর্শনে এর প্রতিফলন কাম্য।

খাজা মাঈন উদ্দিন, সাংবাদিক

[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব দ ধ সরক র র প রণয়ন পর ব র আর থ ক বর দ দ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দাবি ইনকিলাব মঞ্চের

ছাত্র আন্দোলনের ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দফা দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

সোমবার (১৬ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবির কথা জানায় সংগঠনটি।

সংগঠনটির মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদী বলেন, “আমাদের স্বাধীনতা দিবস আছে, বিজয় দিবস আছে, কিন্তু আমাদের মুক্তি ঘটেনি। তাই ঐতিকহাসিক ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়াও জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার আগে জনগণের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।”

আরো পড়ুন:

বেগম রোকেয়া পদকের জন্য আবেদনপত্র আহ্বান

নিরাপদ খাদ্য দিবস শনিবার: ‘নিরাপদ খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ ঝুঁকি কমায়’

তিনি বলেন, “গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, মৌলিক সংস্কার এবং ২০২৪ সালের গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে দেশে যদি নির্বাচন আয়োজন করা হয়, তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘গাদ্দার’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এই সনদে ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের নিরিখে বৈষম্যবিরোধী ইনসাফভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র বিনির্মাণের সুস্পষ্ট রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।”

তিনি আরো বলেন, “সংবিধান থেকে জনবিরোধী ও জুলাই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব ধারা উপধারা বাতিল করে জুলাই সনদকে সাংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দল, মত এবং লিঙ্গের ন্যায্য শরিকানা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে বলা হবে- আমরা বাংলাদেশের জনগণ এই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান সম্পল্প করেছি।”

সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চ ১৩টি প্রস্তাবনা তুলে ধরে, যা জুলাই সনদের কার্যকর প্রয়োগ ও জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক সংগ্রামে জীবন উৎসর্গ করা সব শহীদকে রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সন্তান ঘোষণা করতে হবে;  যেসব জুলাই যোদ্ধার স্থায়ী অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে; ফ্যাসিবাদী আমলে সংঘটিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ভোটারবিহীন অবৈধ নির্বাচন বাতিল করে সংশ্লিষ্ট দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

এছাড়া ফ্যাসিবাদী আমলের সকল মন্ত্রী, এমপি ও দোষী আমলাসহ রাষ্ট্রীয় কর্মচারীদের বিচারের আওতায় এনে অবৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ জব্দ করে তা শহীদ ও আহতদের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে; দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা রক্ষায় ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই, পিলখানা ও শাপলা গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করে দেশি-বিদেশি অপশক্তি চিহ্নিত করতে হবে; রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কার করতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদ আর স্বৈরতান্ত্রিকতা কখনও ফিরে না আসে; ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণা করতে হবে।

বাকি দাবিগুলো হলো- জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটের ভিত্তিতে বৈষম্যবিরোধী কল্যাণ রাষ্ট্রের রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে; সংবিধান থেকে জনবিরোধী ও জুলাই সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব ধারা বাতিল করে জুলাই সনদকে সংবিধানের তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সব দল, মত ও লিঙ্গের ন্যায্য অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে; জুলাই সনদের ভাষাগত দুর্ব্যবহার পরিহার করে জনসাধারণের জন্য সহজ ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে এবং সনদ চূড়ান্ত করার পূর্বে জনগণের মতামতের জন্য তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।

আগামী ২৫ জুনের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করা না হলে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ অভিমুখে ‘লাল মার্চ’ করার ঘোষণাও দিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান
  • ৩৬ জুলাইকে জাতীয় মুক্তি দিবস ঘোষণাসহ ১৩ দাবি ইনকিলাব মঞ্চের
  • গুম বিষ‌য়ে আইন প্রণয়ন ও কমিশন গঠন কর‌বে সরকার: আইন উপদেষ্টা
  • গুম বিষয়ে আইন হচ্ছে, আইনের আওতায় কমিশন গঠনের পরিকল্পনা: আইন উপদেষ্টা
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার যেভাবে হলে ভালো হয়
  • জাফলংসহ দেশের পর্যটন উন্নয়নে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • পরিবেশবান্ধব পর্যটনে সমন্বিত মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা