অস্ট্রিয়ার সেন্ট থমাস অ্যাম ব্লাসেনস্টেইনের গির্জার ভল্টে সংরক্ষিত রহস্যময় মমি ‘এয়ার-ড্রাইড চ্যাপলেইন’-এর রহস্য অবশেষে উন্মোচিত হয়েছে। অনেকে ভাবতেন, এটি প্রাকৃতিকভাবে শুকিয়ে যাওয়া এক যাজকের দেহ। অধিকতর গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে ভিন্ন তথ্য। গবেষকরা বলছেন, আঠারো শতকের ওই যাজকের মৃতদেহ অপ্রত্যাশিত এক বিশেষ উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর পায়ুপথ দিয়ে শরীরের ভেতরে তরল শোষণ করে নিতে পারে এমন বেশ কিছু জিনিস রাখা হয়!

দীর্ঘদিন ধরে কৌতূহলের জন্ম দিয়ে আসছিল মমিটি। ধারণা করা হয়, মমিটি ১৭৪৬ সালে ৩৭ বছর বয়সে মারা যাওয়া সম্ভ্রান্ত যাজক ফ্রান্‌জ জেভার সিডলার ফন রোজেনেগের দেহ। মমি নিয়ে গবেষণা চালানো জার্মানির গবেষক দল জানিয়েছে, মমির পেট ও কোমরের ভেতর ভরা ছিল কাঠের গুঁড়া, ছোট ডাল, হেম্প ও সিল্ক জাতীয় কাপড় এবং জিঙ্ক ক্লোরাইড। এসব জিনিস শরীরের পানি শুষে নিয়ে দেহটিকে শুকিয়ে রেখেছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দেহের বাইরের অংশে কোনো কাটাছেঁড়া ছিল না। মৃতদেহের ভেতর এসব প্রবেশের একমাত্র রাস্তা ছিল পায়ুপথ। গবেষকরা বলছেন, মিসরের মমিদের মতো এখানে কোনো অস্ত্রোপচার হয়নি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ওই যাজক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁকে কেন এমনভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। গবেষকরা মনে করছেন, হয়তো সংক্রমণ এড়াতে অথবা তাঁর দেহটিকে অন্য কোথাও স্থানান্তরের জন্য অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। গবেষক দলের প্রধান ড.

নেরলিখ বলেন, এই ধরনের ব্যতিক্রমী সংরক্ষণের এটিই প্রথম প্রামাণ্য উদাহরণ। আমাদের ধারণা, আগেও অনেকবার এ ধরনের ‘স্বল্পমেয়াদি সংরক্ষণ’ করা হয়েছে। শুধু প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দ্য গার্ডিয়ান। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ