কোরবানির আগে প্রাকৃতিকভাবে গরু হৃষ্টপুষ্ট করে লাভবান হবেন যেভাবে
Published: 3rd, May 2025 GMT
বাংলাদেশে প্রতি কোরবানির ঈদে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ পশু কোরবানি হয়ে থাকে। চলতি বছর এ চাহিদা বেড়ে প্রায় ১ দশমিক ৫০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে খামারিদের আগ্রহও বাড়ছে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের মাধ্যমে মাত্র ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই একটি শীর্ণ গরুকে হৃষ্টপুষ্ট করে বাজারে বিক্রির উপযোগী করে তোলা যায়। এ জন্য দরকার সঠিক গরু নির্বাচন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, সুষম খাদ্য ও সময়োপযোগী বাজারজাতকরণ। গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য ২ থেকে ২ দশমিক ৫ বছর বয়সী শীর্ণ গরু নির্বাচন করা শ্রেয়।
গরুর বয়স যাচাই করতে দাঁত দেখা হয়—যদি মুখের নিচের পাটিতে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে, তবে সেটি কোরবানির উপযোগী। গরুর গঠনও গুরুত্বপূর্ণ, যেমন প্রশস্ত কপাল, আয়তাকার দেহ, খাটো লেজ, মোটা হাড়, ঢিলেঢালা চামড়া ইত্যাদি লক্ষণবিশিষ্ট গরু বেশি মাংস উৎপাদনে উপযোগী। গরুর বাসস্থানের জন্য উঁচু, খোলামেলা ও হাওয়াবহুল জায়গা বেছে নিতে হবে। বাঁশ ও খড় দিয়ে সাময়িক শেড তৈরি করা যায়। পাশাপাশি প্রতিটি গরুর জন্য আলাদা খাবার ও পানিপাত্র থাকতে হবে।
গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুষম খাদ্য। খাবারের মধ্যে শক্তি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি দিতে হবে। যেমন প্রতি ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য খড়–জাতীয় খাদ্য ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ কেজি, তাজা ঘাস ৩ কেজি প্রতিদিন, শক্তি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য (ভুসি, খইল, চিটাগুড়, ইউরিয়া, শুঁটকি মাছের গুঁড়া)। চিটাগুড় ১৫০ গ্রাম, ইউরিয়া ৭-৮ গ্রাম ১ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি ১ দশমিক ৫ কেজি খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। সব ক্ষেত্রেই তাজা ঘাস দেওয়ার প্রয়োজন আছে। খইল ও ভুসির মিশ্রণ প্রক্রিয়াজাত খড়ের বেলায় অর্ধেক (২০০ গ্রাম) দেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া পরিমাণমতো (১-২ শতাংশ) লবণসহ অন্যান্য খনিজ দ্রব্যের মিশ্রণ প্রতিদিন খাদ্যের সঙ্গে দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিয়া ও চিটাগুড় ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে হজম সহজ হয় এবং গরুর ওজন দ্রুত বাড়ে। তবে ইউরিয়ার পরিমাণ হতে হবে খুবই নিয়ন্ত্রিত (প্রতি ১০০ কেজিতে ৭-৮ গ্রাম)।
অল্প সময় ও সীমিত পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ হিসেবে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ বাংলাদেশের খামারি, উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি শুধু ব্যক্তিগতভাবে লাভজনক নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।খাওয়ানোর আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। ফিতার সাহায্যে গরুর ওজন মেপে তাকে খাবার প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন রুচিবর্ধক, যেমন এনোরা ডিএস, এভেইলা-৪ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। ওপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করলে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই গরু হৃষ্টপুষ্ট করে বাজারজাত করা সম্ভব। কোরবানির ১০ থেকে ১৫ দিন আগে থেকে বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া হাতে নিতে হবে।
বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইনজেকশন ও গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করে গরু হৃষ্টপুষ্ট করার চেষ্টা করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ প্রাকৃতিক ও জৈব উপায়ে সঠিক খাদ্য ও ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ সম্ভব। সরকার ও বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
অল্প সময় ও সীমিত পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ হিসেবে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ বাংলাদেশের খামারি, উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি শুধু ব্যক্তিগতভাবে লাভজনক নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ড.
এ কে এম হুমায়ুন কবির, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (ডেইরি অ্যান্ড পোলট্রি সায়েন্স) এবং পরিচালক, পোলট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
[email protected]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রব ন র র জন য ইউর য় দশম ক উপয গ
এছাড়াও পড়ুন:
কোরবানির আগে প্রাকৃতিকভাবে গরু হৃষ্টপুষ্ট করে লাভবান হবেন যেভাবে
বাংলাদেশে প্রতি কোরবানির ঈদে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ পশু কোরবানি হয়ে থাকে। চলতি বছর এ চাহিদা বেড়ে প্রায় ১ দশমিক ৫০ কোটিতে পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণে খামারিদের আগ্রহও বাড়ছে।
বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের মাধ্যমে মাত্র ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই একটি শীর্ণ গরুকে হৃষ্টপুষ্ট করে বাজারে বিক্রির উপযোগী করে তোলা যায়। এ জন্য দরকার সঠিক গরু নির্বাচন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, সুষম খাদ্য ও সময়োপযোগী বাজারজাতকরণ। গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের জন্য ২ থেকে ২ দশমিক ৫ বছর বয়সী শীর্ণ গরু নির্বাচন করা শ্রেয়।
গরুর বয়স যাচাই করতে দাঁত দেখা হয়—যদি মুখের নিচের পাটিতে অন্তত দুটি কোদালের মতো স্থায়ী দাঁত থাকে, তবে সেটি কোরবানির উপযোগী। গরুর গঠনও গুরুত্বপূর্ণ, যেমন প্রশস্ত কপাল, আয়তাকার দেহ, খাটো লেজ, মোটা হাড়, ঢিলেঢালা চামড়া ইত্যাদি লক্ষণবিশিষ্ট গরু বেশি মাংস উৎপাদনে উপযোগী। গরুর বাসস্থানের জন্য উঁচু, খোলামেলা ও হাওয়াবহুল জায়গা বেছে নিতে হবে। বাঁশ ও খড় দিয়ে সাময়িক শেড তৈরি করা যায়। পাশাপাশি প্রতিটি গরুর জন্য আলাদা খাবার ও পানিপাত্র থাকতে হবে।
গরু হৃষ্টপুষ্টকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সুষম খাদ্য। খাবারের মধ্যে শক্তি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি দিতে হবে। যেমন প্রতি ১০০ কেজি ওজনের গরুর জন্য খড়–জাতীয় খাদ্য ২ দশমিক ৫ থেকে ৩ কেজি, তাজা ঘাস ৩ কেজি প্রতিদিন, শক্তি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য (ভুসি, খইল, চিটাগুড়, ইউরিয়া, শুঁটকি মাছের গুঁড়া)। চিটাগুড় ১৫০ গ্রাম, ইউরিয়া ৭-৮ গ্রাম ১ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে প্রতি ১ দশমিক ৫ কেজি খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। সব ক্ষেত্রেই তাজা ঘাস দেওয়ার প্রয়োজন আছে। খইল ও ভুসির মিশ্রণ প্রক্রিয়াজাত খড়ের বেলায় অর্ধেক (২০০ গ্রাম) দেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া পরিমাণমতো (১-২ শতাংশ) লবণসহ অন্যান্য খনিজ দ্রব্যের মিশ্রণ প্রতিদিন খাদ্যের সঙ্গে দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরিয়া ও চিটাগুড় ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে খড়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে হজম সহজ হয় এবং গরুর ওজন দ্রুত বাড়ে। তবে ইউরিয়ার পরিমাণ হতে হবে খুবই নিয়ন্ত্রিত (প্রতি ১০০ কেজিতে ৭-৮ গ্রাম)।
অল্প সময় ও সীমিত পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ হিসেবে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ বাংলাদেশের খামারি, উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি শুধু ব্যক্তিগতভাবে লাভজনক নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।খাওয়ানোর আগে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া উত্তম। ফিতার সাহায্যে গরুর ওজন মেপে তাকে খাবার প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন রুচিবর্ধক, যেমন এনোরা ডিএস, এভেইলা-৪ ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। ওপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করলে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই গরু হৃষ্টপুষ্ট করে বাজারজাত করা সম্ভব। কোরবানির ১০ থেকে ১৫ দিন আগে থেকে বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া হাতে নিতে হবে।
বর্তমানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইনজেকশন ও গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করে গরু হৃষ্টপুষ্ট করার চেষ্টা করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ প্রাকৃতিক ও জৈব উপায়ে সঠিক খাদ্য ও ব্যবস্থাপনায় সম্পূর্ণ নিরাপদভাবে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ সম্ভব। সরকার ও বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
অল্প সময় ও সীমিত পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ার সুযোগ হিসেবে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ বাংলাদেশের খামারি, উদ্যোক্তা ও সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি শুধু ব্যক্তিগতভাবে লাভজনক নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ড. এ কে এম হুমায়ুন কবির, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (ডেইরি অ্যান্ড পোলট্রি সায়েন্স) এবং পরিচালক, পোলট্রি রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম
[email protected]