দুই মাসের বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা। ইসরায়েলের বাধার কারণে কোনো ধরনের ত্রাণসামগ্রী উপত্যকাটিতে ঢুকতে পারছে না। তার ওপর ইসরায়েলি সেনাদের হামলায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা। অপুষ্টির কারণেও বাড়ছে শিশুদের প্রাণহানির ঘটনা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে পথে–ঘাটে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে শিশুরা।
গাজার গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজার প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে রেখেছে। তারা শিশুদের ফর্মুলা দুধ ও পুষ্টিকর খাবারও ঢুকতে দিচ্ছে না। প্রয়োজনীয় খাবারের অভাবে শিশুমৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। এখন পর্যন্ত অপুষ্টির কারণে ৫৭টি শিশু মারা গছে।
আল–জাজিরার টিম ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছে, গাজা শহরের পশ্চিমে রানতিসি হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিস্বল্পতার কারণে সালেহ আল-সাকাফি নামের একটি কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ আগেই সতর্ক করে বলেছে, গাজায় পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে; যা তাদের প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
গাজায় কর্মরত নরওয়েজিয়ান শরণার্থী সংস্থার ব্যবস্থাপক গ্যাভিন কেলিহের বলেছেন, কোনো পদক্ষেপ না নিলে গাজার হাজার হাজার মানুষ মারা যেতে পারে। অন্যান্য সাহায্য সংস্থাও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
রেডক্রস কমিটি সতর্ক করে বলেছে, গাজার মানবিক তৎপরতা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। তাত্ক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তখন মানবিক কোনো প্রচেষ্টা তা ঠেকাতে পারবে না।
গাজায় এখন মানুষের জন্য খাবার খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে গাজার পরিস্থিতি সংকটের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা উপত্যকাটিতে খাদ্যসংকট নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে।
গাজায় আন্তর্জাতিক সংস্থার খাবারের মজুত শেষ হয়ে গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় সম্প্রদায়ের তৈরি রান্নাঘর থেকেও বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য খাবার প্রস্তুত করা যাচ্ছে না।
ধ্বংসস্তূপে ভর্তি সড়কে মানুষ উদ্ভ্রান্তের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। গাজা শহরে শিশুরা আবর্জনা ঘেঁটে ঘেঁটে খাবার খুঁজছে। ফেলে দেওয়া ব্যবহৃত বোতলে খাবার পাওয়া যায় কি না, তা দেখছে তারা।
গাজায় এখন আর লাইনে দাঁড়িয়ে কাউকে খাবার নিতে দেখা যায় না। কারণ, মানুষের জন্য কোনো খাবার অবশিষ্ট নেই। আগে যতটুকু সংগ্রহ করতে পেরেছে, জীবন বাঁচাতে তা-ই খেতে হচ্ছে।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় অধিকাংশ ওষুধ এবং জরুরি খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে সতর্কতা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন রাফার কুয়েতি হাসপাতালে পরিচালক সুহাইব আল-হামস। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, হাসপাতালটি ৭৫ শতাংশের বেশি প্রয়োজনীয় ওষুধের তীব্র সংকটে ভুগছে। এর বড় একটি অংশ জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, যা বিপুলসংখ্যক রোগীর জীবন হুমকির মুখে ফেলেছে।’ তিনি আরও বলেন, চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখা হুমকির মুখে পড়েছে। কারণ, বর্তমানে যেসব ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত রয়েছে, তা দিয়ে এক সপ্তাহের বেশি সেবা দেওয়া যাবে না।
ত্রাণ পাঠাতে চুক্তি প্রস্তুত
গত শুক্রবার দুজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা ও একটি মার্কিন সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাক্সিওস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল এবং একটি নতুন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা গাজায় আবারও মানবিক সহায়তা পাঠাতে একটি চুক্তির কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে এই চুক্তিতে হামাসের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ দফা দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
জামায়াতের দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
একই দাবিতে আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী।