ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো জানিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ার বিরুদ্ধে ১৭তম দফায় নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ইউক্রেনে শান্তির পথে ‘একমাত্র বাধা’ হিসেবেও উল্লেখ করেন তিনি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে ইইউ রাশিয়ার ওপর বেশ কিছু কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তারা স্পষ্ট করেছে, পুতিন ইউক্রেন থেকে নিঃশর্তভাবে সেনা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কোনো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে না ইইউ।
ব্যারো বলেন, ‘আমরা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উদ্যোগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নিষেধাজ্ঞা তৈরি করছি এবং সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামকে বলেছি, আমরা সমন্বয় করব।’ সম্প্রতি গ্রাহামসহ মার্কিন আইনপ্রণেতারা রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা ও যারা রুশ জ্বালানি কিনছে, তাদের ওপর শুল্ক বসানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকের পর ব্যারো বলেন, ‘এটি ইউরোপের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমরা শান্তির পথে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’ খবর-বিবিসি
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে থানা ঘেরাওয়ের পর ‘আসামি’ ছেড়ে দিল পুলিশ
চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলার আসামি হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে মামলার বাদী থানায় এসে জানিয়ে দেন, তিনি ওই ব্যক্তিকে চেনেন না। এরপর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঘটনাটি ঘটেছে আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে। পুলিশ সূত্রে জানা য়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে চান্দগাঁও থানা কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মুঠোফোন হারিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে থানায় এলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর নামে চাঁদাবাজির একটি মামলা এজাহারে ছিল।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা থানায় জড়ো হন। আজ সকাল থেকে সংগঠনের সহযোগী সংগঠন যুব আন্দোলন ও শ্রমিক আন্দোলনের নেতা-কর্মীরাও থানার সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে মামলার বাদী মো. শিপন থানায় এসে বলেন, তিনি হাবিবুর রহমানকে চেনেন না। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে হাবিবুরকে তাঁর জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ।
চান্দগাঁও থানার ওই মামলায় বাদী গত বুধবার ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করেন। তাতে হাবিবুর রহমানের নাম ছিল ৫ নম্বরে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পাঁচলাইশ অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. আরিফ হোসেন বলেন, ‘যে ভিডিওর ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে, সেখানে হাবিবুর রহমানের চেহারা দেখা যায়নি। বাদীও থানায় এসে বলেছে, সে হাবিবকে চেনে না। এ কারণে তাঁকে বাদীর জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
আজ দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, চান্দগাঁও থানার মূল ভবনের বাইরে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা হাবিবুর রহমানকে আদালতে পাঠানোর বিরোধিতা করেন। তাঁদের দাবি, উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়াই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় কেউ থানায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দেন। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরও পরে আসতে বলা হয়। তখন কয়েকজন নেতা থানার ভেতরে ওসির কক্ষে অবস্থান করছিলেন।
বাইরে অবস্থানরত নেতা-কর্মীদের কয়েকজন বলেন, গত এপ্রিলে কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা সমাবেশ করেন। এরপর চাঁদাবাজির ঘটনা বন্ধ হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ‘চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত একটি পক্ষ’ হাবিবুর রহমানকে জড়িয়ে মামলা করে। তাঁদের দাবি, মামলার বাদী পক্ষই চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।
বেলা ১টার দিকে মামলার বাদী ও দুই সাক্ষী থানায় আসেন। সাংবাদিকেরা কথা বলার চেষ্টা করলেও তাঁরা কোনো মন্তব্য করেননি।
চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী মনিরুল করিম বলেন, ‘মামলায় হাবিবুর রহমানের নাম ছিল। তবে বাদী থানায় এসে জানিয়েছেন, তিনি তাঁকে চেনেন না। তাই বাদীর জিম্মায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
মামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে হাবিবুর রহমান ছাড়া বাকি পাঁচজনকে আজ আদালতে পাঠানো হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. নয়ন (৩৫), মো. লোকমান (২৮), মো. ফয়সাল হোসেন (৩২), মো. শাহীন (২১) ও সনজিত নাথ (৪৯)। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন বিকেল ৫টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে হাবিবুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ ঘটনায় সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক ও আইনজীবী আখতার কবীর চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যদি কেউ নিরপরাধ হয়, তা প্রমাণ হওয়ার জায়গা আদালত। থানা ঘেরাও করে কাউকে ছাড়িয়ে নেওয়া মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি ভুল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এতে অন্য মামলার আসামিরাও সুযোগ নিতে পারে।’
আখতার কবীর বলেন, ‘আইন অনুযায়ী গ্রেপ্তারের পর কাউকে থানা থেকে ছাড়া হলে এর পেছনে যৌক্তিক কারণ থাকতে হয়, যেমন গুরুতর অসুস্থতা বা আদালতের নির্দেশ। একজনকে ছেড়ে দিলে বাকি পাঁচজনকে কেন আদালতে পাঠানো হলো, সেটি প্রশ্নবিদ্ধ। একই সঙ্গে ভুল এজাহার দেওয়ার জন্য বাদীর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’