২৬৬ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, এটা কীভাবে সম্ভব: মাহফুজ আনাম
Published: 4th, May 2025 GMT
গণ আকারে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থি এবং এটি ভয়ের ব্যাপার বলে মন্তব্য করেছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম। তিনি বলেন, বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে। এটা কীভাবে সম্ভব?
রোববার বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে সম্পাদক পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
সভাপতির বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার শাসনামল এত জনধিক্কৃত হয়েছিল, তার অন্যতম কারণ ছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছিল না। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং আরও অনেক আইনের শিকার হয়েছিলাম। তবে বর্তমানে ২৬৬ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগে মামলা চলছে। এটা কীভাবে সম্ভব? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেও ২০০ বা কিছু বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। ২৬৬ জন সাংবাদিক আজকে খুনের মামলা অথবা সহিংসতা–সংক্রান্ত অপরাধের মামলার আসামি। এটা আমাদের জন্য অসম্মানের।’
সরকারের উদ্দেশে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘এটার অর্থ এই নয় যে কেউ দোষ করেননি। দোষ করে থাকলে সঠিকভাবে মামলা করে শাস্তি দেন এবং আমরা কোনোভাবেই তাঁর পাশে দাঁড়াব না, যদি তিনি সত্যিকার অর্থে সমাজের বিরুদ্ধে বা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান সে রকম থাকে। কিন্তু আজকে ছয় থেকে সাত মাস হয়েছে, তাঁরা এসব মামলায় পড়েছেন। একটি কদমও এগোয়নি তদন্তের ব্যাপারে।’
সরকার ও আইন উপদেষ্টার উদ্দেশে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আইন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের কিছু করার নেই, জনগণের অধিকার আছে মামলা করার। মেনে নিলাম মামলা করার অধিকার। কিন্তু কোনো আইনের যদি অপপ্রয়োগ হয়, তাহলে কি সরকার কিছু করবে না? সেখানেই আমার বড় প্রশ্ন।’
১৩ জন সাংবাদিক গ্রেপ্তার আছেন উল্লেখ করে মাহফুজ আনাম বলেন, তাঁরা যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাঁদের বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু আজকে সাত মাস, আট মাস ধরে কারাগারে, তাঁরা জামিন পাচ্ছেন না। তাঁদের কোনো আইনি কোনো প্রক্রিয়া চলছে না। বিচার হচ্ছে না। তাহলে এটা কি চলতে থাকবে?
সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে করণীয় সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব হচ্ছে, সরকারের হয়তো অনেক ব্যস্ততার জন্য এই ২৬৬ জন সাংবাদিকের মামলা দেখতে পাচ্ছে না। কিন্তু তারা দৈবচয়ন ভিত্তিতে ১০-১৫টি মামলা দেখুক না, যেখানে ২০-২৫ জন অভিযুক্তের মধ্যে একজন-দুজন সাংবাদিক আছেন। তারা যদি একটা, দুইটা, পাঁচটা দৃষ্টান্ত পায় যে সাংবাদিকদের নামে হওয়া মামলা মিথ্যা মামলা, তাহলে কেন পদক্ষেপ নেবে না? বারবার বলা আমাদের কিছু করণীয় নাই, আমি মনে করি যারা এই মামলা দিয়ে সাংবাদিকদের হেনস্তা করছেন, এতে তাঁদের আরও বলিষ্ঠ করা হয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি দাবি করছি, সরকার সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াক।’
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও সম্পাদক পরিষদের সভাপতি মাহফুজ আনাম।
আলোচনা সভায় রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য দেন দ্য নিউ এজের সম্পাদক নূরুল কবির, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সমকালের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফেনীর সোনাগাজীতে অটোরিকশা উল্টে যাত্রী নিহত
ফেনীর সোনাগাজীতে সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টে এক যাত্রী নিহত ও চালকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেনী–সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কের সদর উপজেলার নতুন বাজার চালতাতলী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম জয়নাল আবেদিন (২৫)। তিনি জেলার সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের বগাদানা গ্রামের কবির আহমেদের ছেলে। তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার (টমটম) চালক।
আহত যাত্রী মো. আবুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোনাগাজী কাজিরহাট থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ফেনী যাচ্ছিলেন চার যাত্রী। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ফেনী–সোনাগাজী আঞ্চলিক সড়কের চালতাতলী এলাকায় সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা একটি গরু দেখে অটোরিকশাচালক ব্রেক করেন। এতে অটোরিকশাটি উল্টে যায়। এ সময় অটোরিকশায় থাকা চালকসহ গুরুতর আহত হন চারজন। তাঁদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ফেনী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক অটোরিকশার যাত্রী জয়নাল আবেদিনকে মৃত ঘোষণা করেন। মাথায় গুরুতর আহত এক যাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহত অটোরিকশাচালক ও এক যাত্রী ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ফেনী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইকবাল হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নিহত ব্যক্তির মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা চলমান।