ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা করার একটা প্রবণতা ছিল ইশতিয়াক আহমেদের; কিন্তু ২০১৪ সালে বাবা কায়েম আলী এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় চাকরি করতে বাধ্য হন তিনি। তবে চাকরির পাশাপাশি সব সময়ই ব্যবসা–সংক্রান্ত কিছু একটা নিয়ে ভাবতেন। যেহেতু বাবা ব্যবসায়ী, সে কারণেই ইশতিয়াকের একটু বেশি ঝোঁক ছিল ব্যবসার প্রতি। আর ব্যবসা তাঁকে টানত। পরপর টি–শার্ট, পাটের পণ্য ও কাঁচা সবজি—তিনটি ব্যবসাও শুরু করেন চাকরির পাশাপাশি; কিন্তু তিনটিতেই ব্যর্থ হন ইশতিয়াক। পরে একদিন বন্ধু সিজ্জিলের কাছে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন এবং নিজেকে দক্ষ করে তোলার জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইউটিউব ঘাঁটতে থাকেন। পরে নাজমুন নাহার নামের এক ফ্রিল্যান্সারের খোঁজ পান। ২০১৯ সালে তাঁর কাছে থেকেই একটি কোর্স করেন, যেটি ছিল এসইওর (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) ওপর। নিজেকে দক্ষ করে তোলার জন্য ১০টির বেশি কোর্স করেন ইশতিয়াক। ২০২১ সাল থেকেই আয় শুরু করেন। এখন ইশতিয়াক অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট ফাইভআরসহ স্থানীয় কাজও করছেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে।

ঝিনাইদহের সদরের খন্দকার পাড়ায় বাড়ি ইশতিয়াক আহমেদের। বাবা কায়েম আলী, একজন কাঠের ব্যবসায়ী। বর্তমানে বার্ধক্যের কারণে ব্যবসার পরিধি খুবই ছোট করে ফেলেছেন। মা আলেয়া বেগম গৃহিণী। ২০০৪ সালে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০০৬ সালে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় আসেন ২০০৮ সালে। ২০১২ সালে বিবিএ (বিপণন) এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে সম্পন্ন করেন। পরে চাকরি নিলেন তৈরি পোশাকশিল্পে (গার্মেন্টস), মার্চেন্ডাইজার হিসেবে।

আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিং করে মাসে আয় তিন লাখ, পড়ছেন জার্মানিতে১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইশতিয়াকের স্ত্রী সোহানা রহমান হিসাববিজ্ঞানের ওপর পড়াশোনা করছেন মোফাজ্জল–মোমেনা চাকলাদার মহিলা ডিগ্রি কলেজে। যুক্ত হয়েছেন স্বামীর কাজে। ফ্রিল্যান্সিং দলের সদস্যদের কাজ শেখান এবং তাঁদের পরিচালনা করেন। ইশতিয়াক–সোহানা দম্পতি এখন থাকেন ঢাকার সাভার উপজেলার গেন্ডায়। বাড়ির একটি ঘরকেই অফিসের জন্য তৈরি করেছেন।

ইশতিয়াকের ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুটা হয় ২০২১ সালে। এরপর নিজেকে দক্ষ করতে করতে পেরিয়ে যায় বছরখানেক। তারপর একটা কাজ পান ইশতিয়াক। প্রথম যে বাইরের কাজ করেন, সে কাজ চার মাস করে মাত্র ৩০ ডলার পান। এরপর আস্তে আস্তে দল বড় করতে থাকেন।

আরও পড়ুনঅনলাইনে লিখে মাসে ২ লাখ টাকা আয় করেন কলেজশিক্ষক মোস্তাফিজুর১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইশতিয়াক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা গার্মেন্টসে কাজ করতাম। বেতন ছিল ৬৩ হাজার টাকা। যখন ওই পরিমাণ টাকা আমার ফ্রিল্যান্সিং থেকে পাওয়া শুরু করলাম, তখন আমি আমার চাকরি ছেড়ে দিলাম। তখন তারা আমাকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত অফার করে, তবু চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সময় দিলাম। তবে আমার অনেক দিন এমন গেছে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে অফিস থেকে এসে অনলাইনে ক্লাস করতে করতে টেবিলে ঘুমিয়ে পড়তাম।’

ইশতিয়াক আহমেদ ফাইভআরের একজন ‘টপ রেটেড প্লাস’ ফ্রিল্যান্সার। এখন মাসে তিনি প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করেন। ১৬ জনের একটি দল তিনি চালান। যাঁরা সবাই পড়াশোনা করছেন এবং ইশতিয়াকের এখান থেকে কাজ করে আয়ও করছেন। ইশতিয়াক প্রত্যেককেই কাজ শিখিয়ে আগে দক্ষ করেছেন। আর দক্ষ করেই তাঁর দলে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এই দলের ৮ জন মেয়ে ও ৮ জন ছেলে। যাঁদের পরিচালনা করেন ইশতিয়াকের স্ত্রী সোহানা রহমান।

আরও পড়ুনশুধু এক আঙুল নাড়াতে পারেন, সেই যোবায়ের এখন সফল ফ্রিল্যান্সার২৪ মে ২০২৪

ইশতিয়াকের দলে এক বছর ধরে কাজ করেন আনজুমান আক্তার। তিনি সাভার গভর্মেন্ট কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছেন। আনজুমানের মায়ের ক্যানসার ধরা পড়েছে চার মাস আগে। চিকিৎসাও চলছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এসইও নিয়ে কাজ করছি। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজও করছি। মা অসুস্থ, যে টাকাটা আয় হয়, মোটামুটি চলছে।’

ইশতিয়াক কাজ করেন ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে, যেমন এসইও, গুগল অ্যাডস, ফেসবুক অ্যাডস ইত্যাদি। ইশতিয়াক কাজ আনেন এবং তাঁর ছোট্ট দলটি কাজ করে। দলটি পরিচালনা করেন ইশতিয়াকের স্ত্রী সোহানা রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাজটা উপভোগ করি। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজটা করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমরা ১৬ জনের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি।’

ইশতিয়াক–সোহানা দম্পতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, খুব তাড়াতাড়ি একটা বড় অফিস নেওয়া। আর একটা এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ৫০ থেকে ১০০ জনের কর্মসংস্থান করা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইশত য় ক র ন ইশত য় ক ক আহম দ ক জ কর ব যবস র একট করছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান

আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।

নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫

তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’

আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫

গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ