স্বামী ও স্ত্রী দুজনই ফ্রিল্যান্সার, মাসে আয় কত জানেন?
Published: 5th, May 2025 GMT
ছোটবেলা থেকেই ব্যবসা করার একটা প্রবণতা ছিল ইশতিয়াক আহমেদের; কিন্তু ২০১৪ সালে বাবা কায়েম আলী এক সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ায় চাকরি করতে বাধ্য হন তিনি। তবে চাকরির পাশাপাশি সব সময়ই ব্যবসা–সংক্রান্ত কিছু একটা নিয়ে ভাবতেন। যেহেতু বাবা ব্যবসায়ী, সে কারণেই ইশতিয়াকের একটু বেশি ঝোঁক ছিল ব্যবসার প্রতি। আর ব্যবসা তাঁকে টানত। পরপর টি–শার্ট, পাটের পণ্য ও কাঁচা সবজি—তিনটি ব্যবসাও শুরু করেন চাকরির পাশাপাশি; কিন্তু তিনটিতেই ব্যর্থ হন ইশতিয়াক। পরে একদিন বন্ধু সিজ্জিলের কাছে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন এবং নিজেকে দক্ষ করে তোলার জন্য বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ ইউটিউব ঘাঁটতে থাকেন। পরে নাজমুন নাহার নামের এক ফ্রিল্যান্সারের খোঁজ পান। ২০১৯ সালে তাঁর কাছে থেকেই একটি কোর্স করেন, যেটি ছিল এসইওর (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) ওপর। নিজেকে দক্ষ করে তোলার জন্য ১০টির বেশি কোর্স করেন ইশতিয়াক। ২০২১ সাল থেকেই আয় শুরু করেন। এখন ইশতিয়াক অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজ দেওয়া–নেওয়ার ওয়েবসাইট ফাইভআরসহ স্থানীয় কাজও করছেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে।
ঝিনাইদহের সদরের খন্দকার পাড়ায় বাড়ি ইশতিয়াক আহমেদের। বাবা কায়েম আলী, একজন কাঠের ব্যবসায়ী। বর্তমানে বার্ধক্যের কারণে ব্যবসার পরিধি খুবই ছোট করে ফেলেছেন। মা আলেয়া বেগম গৃহিণী। ২০০৪ সালে ঝিনাইদহ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০০৬ সালে ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করে ঢাকায় আসেন ২০০৮ সালে। ২০১২ সালে বিবিএ (বিপণন) এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে সম্পন্ন করেন। পরে চাকরি নিলেন তৈরি পোশাকশিল্পে (গার্মেন্টস), মার্চেন্ডাইজার হিসেবে।
আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিং করে মাসে আয় তিন লাখ, পড়ছেন জার্মানিতে১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ইশতিয়াকের স্ত্রী সোহানা রহমান হিসাববিজ্ঞানের ওপর পড়াশোনা করছেন মোফাজ্জল–মোমেনা চাকলাদার মহিলা ডিগ্রি কলেজে। যুক্ত হয়েছেন স্বামীর কাজে। ফ্রিল্যান্সিং দলের সদস্যদের কাজ শেখান এবং তাঁদের পরিচালনা করেন। ইশতিয়াক–সোহানা দম্পতি এখন থাকেন ঢাকার সাভার উপজেলার গেন্ডায়। বাড়ির একটি ঘরকেই অফিসের জন্য তৈরি করেছেন।
ইশতিয়াকের ফ্রিল্যান্সিংয়ের শুরুটা হয় ২০২১ সালে। এরপর নিজেকে দক্ষ করতে করতে পেরিয়ে যায় বছরখানেক। তারপর একটা কাজ পান ইশতিয়াক। প্রথম যে বাইরের কাজ করেন, সে কাজ চার মাস করে মাত্র ৩০ ডলার পান। এরপর আস্তে আস্তে দল বড় করতে থাকেন।
আরও পড়ুনঅনলাইনে লিখে মাসে ২ লাখ টাকা আয় করেন কলেজশিক্ষক মোস্তাফিজুর১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইশতিয়াক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা গার্মেন্টসে কাজ করতাম। বেতন ছিল ৬৩ হাজার টাকা। যখন ওই পরিমাণ টাকা আমার ফ্রিল্যান্সিং থেকে পাওয়া শুরু করলাম, তখন আমি আমার চাকরি ছেড়ে দিলাম। তখন তারা আমাকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত অফার করে, তবু চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সময় দিলাম। তবে আমার অনেক দিন এমন গেছে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে অফিস থেকে এসে অনলাইনে ক্লাস করতে করতে টেবিলে ঘুমিয়ে পড়তাম।’
ইশতিয়াক আহমেদ ফাইভআরের একজন ‘টপ রেটেড প্লাস’ ফ্রিল্যান্সার। এখন মাসে তিনি প্রায় তিন লাখ টাকা আয় করেন। ১৬ জনের একটি দল তিনি চালান। যাঁরা সবাই পড়াশোনা করছেন এবং ইশতিয়াকের এখান থেকে কাজ করে আয়ও করছেন। ইশতিয়াক প্রত্যেককেই কাজ শিখিয়ে আগে দক্ষ করেছেন। আর দক্ষ করেই তাঁর দলে কাজের সুযোগ করে দিচ্ছেন। এই দলের ৮ জন মেয়ে ও ৮ জন ছেলে। যাঁদের পরিচালনা করেন ইশতিয়াকের স্ত্রী সোহানা রহমান।
আরও পড়ুনশুধু এক আঙুল নাড়াতে পারেন, সেই যোবায়ের এখন সফল ফ্রিল্যান্সার২৪ মে ২০২৪ইশতিয়াকের দলে এক বছর ধরে কাজ করেন আনজুমান আক্তার। তিনি সাভার গভর্মেন্ট কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছেন। আনজুমানের মায়ের ক্যানসার ধরা পড়েছে চার মাস আগে। চিকিৎসাও চলছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এসইও নিয়ে কাজ করছি। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজও করছি। মা অসুস্থ, যে টাকাটা আয় হয়, মোটামুটি চলছে।’
ইশতিয়াক কাজ করেন ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে, যেমন এসইও, গুগল অ্যাডস, ফেসবুক অ্যাডস ইত্যাদি। ইশতিয়াক কাজ আনেন এবং তাঁর ছোট্ট দলটি কাজ করে। দলটি পরিচালনা করেন ইশতিয়াকের স্ত্রী সোহানা রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কাজটা উপভোগ করি। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজটা করে যাচ্ছি। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, আমরা ১৬ জনের কর্মসংস্থান করতে পেরেছি।’
ইশতিয়াক–সোহানা দম্পতির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, খুব তাড়াতাড়ি একটা বড় অফিস নেওয়া। আর একটা এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করে সেখানে ৫০ থেকে ১০০ জনের কর্মসংস্থান করা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশত য় ক র ন ইশত য় ক ক আহম দ ক জ কর ব যবস র একট করছ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্রার্থনা ইসরায়েলি কট্টরপন্থী মন্ত্রীর
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইসরায়েলের কট্টরপন্থী নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন গভির আল-আকসা মসজিদ চত্বরে প্রকাশ্য প্রার্থনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত রোববার কয়েক শ ইহুদি বসতিস্থাপনকারী তাঁর সঙ্গে প্রার্থনায় অংশ নেয়। তাঁরা কড়া পুলিশি পাহারায় উচ্চস্বরে ইহুদি রীতি অনুযায়ী প্রার্থনা করেন। এ সময় তাঁরা মুসলিমদের উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেন।
মিডল ইস্ট আই এ ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও দেখেছে। ভিডিওতে শত শত বসতিস্থাপনকারীকে আল-আকসা মসজিদ চত্বরে অনুপ্রবেশ করতে দেখা গেছে। এ সময় কিছু লোককে নাচতে ও হৈহুল্লোড় করতে দেখা যায়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড মসজিদের পবিত্রতা লঙ্ঘন করে।
ইসরায়েলের দখলে থাকা পূর্ব জেরুজালেমের ওল্ড সিটিতে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনায় নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে মেনে আসা হচ্ছিল। যদিও ইহুদি গোষ্ঠীগুলো গত শতকে বারবার এই ভঙ্গুর ব্যবস্থাপনা লঙ্ঘন করেছে। শুধু তাই নয়, ইসলাম ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থানটির ওপর নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে তারা।
জেরুজালেমের ওল্ড সিটির বাসিন্দারা জানান, বেন গভির আসার আগে ও পরে পুরো এলাকাটিকে ‘একটি সামরিক ঘাঁটির’ মতো মনে হচ্ছিল। সেখানে অসংখ্য তল্লাশিচৌকি বসানো হয়। ইসরায়েলি সেনারা নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যাপকভাবে জোরদার করেছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, বেন গভিরের পরিদর্শনের সময় ইসরায়েলি বাহিনী ফিলিস্তিনিদের মসজিদে প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। শুধু অল্পসংখ্যক স্থানীয় বাসিন্দাকে ওই স্থানে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়।
পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বেন গভির বলেন, ‘টেম্পল মাউন্ট ইহুদিদের জন্য। আমরা চিরদিন এখানে থাকব।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বেন গভির অন্তত ১১ বার আল-আকসা মসজিদ চত্বরে অনুপ্রবেশ করেন। এদিকে বেশ কয়েকজন কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিবিদ আল-আকসা ধ্বংস করে সেখানে একটি ইহুদি উপাসনালয় নির্মাণের পক্ষে মত দিয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী, সেখানে একসময় ইহুদি উপাসনালয় ছিল।
রোববার আল আকসা পরিদর্শনের সময় ডানপন্থী লিকুদ পার্টির আইনপ্রণেতা আমিত হালেভিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি গাজায় পানি, খাদ্য ও জ্বালানির সব উৎস ধ্বংস করতে বারবার ইসরায়েল সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন।