রাখাইনে করিডোরের উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করে ইইউ
Published: 6th, May 2025 GMT
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইনে করিডোরের উদ্যোগকে ইতিবাচক মনে করেন তিনি। বাংলাদেশের মানবিক অংশীদার হিসেবে শরণার্থীদের সহায়তার ক্ষেত্রে বাস্তববাদী থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত। আন্তঃসীমান্ত সহায়তা পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সরকার এবং জনগণের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতীয় নির্বাচন কখন হবে– এটি বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের পথে যাওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন, যাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জিত হয়। তবে সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দিয়ে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে অংশ নেন তিনি। ডিক্যাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।
রাখাইনে মানবিক করিডোর নিয়ে এক প্রশ্নে মাইকেল মিলার বলেন, শরণার্থীরা এ প্রান্তে থাকলে আমরা তাদের প্রয়োজন এখানে মেটাব। তারা যদি সীমান্তের অপর প্রান্তে থাকে, তাহলে আমাদের দেখতে হবে কীভাবে সেখানেও সহায়তা পাঠানো যায়। এর মধ্য দিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি ভালো হতে পারে। পৃথিবীর নানা স্থানে ইইউ আন্তঃসীমান্ত সহায়তা করেছে এবং এটা এ ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারে। তবে এটা তখনই সফল হতে পারে, যখন দুই প্রান্তের মানুষ নিরাপদ থাকে এবং সরকারগুলো একমত হয়।
সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ-ইইউ সম্পর্ক প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের কৌশলগত পছন্দের কেন্দ্রে রয়েছে মৌলিক অধিকার ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। আমরা একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল এক বিশ্বে বসবাস করছি।
বাংলাদেশের সমৃদ্ধি হচ্ছে ইইউর সমৃদ্ধি। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে ইইউর স্থিতিশীলতায়। এ কারণে আমরা অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছি।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব শক্তভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকে সমর্থন করছি। গত ডিসেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইইউ রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা এতে যোগ দিয়েছি বাংলাদেশের সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ থেকে। গত আট মাসে আমি পর্যবেক্ষক হিসেবে লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পথে রাজনৈতিক যাত্রা চলমান। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য সুযোগ, যাতে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত ও গণতন্ত্র পুনর্বহাল করা যায়। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ যাতে মুক্তভাবে কাজ করতে পারে।’
চলমান সংস্কার নিয়ে মাইকেল মিলার জানান, তিনি ইউরোপের অর্ধেক সংখ্যক দেশকে স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে রূপান্তর হতে দেখেছেন। বাংলাদেশে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইইউ সহযোগিতা করতে চায়। একই সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় সাহায্য, বাংলাদেশের সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে চায়। একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা গড়তে ইইউ সাহায্য করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ যে রূপান্তরের মধ্যে রয়েছে, তা ইইউর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা চান এমন বাংলাদেশ, যাদের সঙ্গে ইইউ কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, ইইউ বাংলাদেশকে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে প্রস্তাব দিয়েছে। বন্দর ও সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে তারা কাজ করছে। এ ছাড়া অন্যান্য অনিরাপদ পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইইউর সহযোগিতা দেখতে চান তারা। পাশাপাশি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে তারা এ অঞ্চলে একসঙ্গে কাজ করছেন। অভিবাসন নিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, নিরাপদ, সম্মানজনক ও নিয়মিত অভিবাসনের পক্ষে ইইউ। তবে দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশ থেকে প্রায়ই অভিবাসন দেখা যায় অনিয়মিত, অসম্মানজনক ও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, নির্বাচনের সময় নিয়ে তাদের কোনো মত নেই এবং নির্দিষ্ট কোনো তারিখে নির্বাচন করার জন্য কাউকে চাপ দিচ্ছেন না। সংস্কার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংস্কার বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত সময় থাকা দরকার এবং পরিবেশটা এমন থাকা উচিত যেন কাজ করতে গিয়ে দম ফেলার সুযোগ থাকে। দেখা যাক, নির্বাচনের সময় নিয়ে কতটা ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়।
রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কঠোর পরিশ্রম করছে মন্তব্য করে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা সংস্কারের উচ্চাভিলাষী এজেন্ডাকে সমর্থন করি এবং রাজনৈতিক দল ও অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে সমঝোতার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। আশা করি, খুব স্পষ্টভাবে সংস্কারের একটি অগ্রাধিকারমূলক তালিকা ঠিক করে তা অর্জনের চেষ্টা করা হবে।’ তিনি জানান, সংস্কার প্রক্রিয়ায় সহায়তা বিষয়ে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অর্থায়নের সুযোগ আছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় পাশে দাঁড়ানোর রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে ইউরোপের।
ইইউর আমন্ত্রণে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন নিয়ে চলমান বিতর্ক বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইইউ রাষ্ট্রদূত জানান, এটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে তারা নারী-পুরুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। সারাবিশ্বে তারা এই ধারণার বিকাশে কাজ করে চলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখতে চান।
ইইউ রাষ্ট্রদূতের মতে, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নৃশংসতা বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকলে বিচার প্রক্রিয়ায় সময়ক্ষেপণ সমীচীন নয়। এ নিয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদন সমর্থন করে তিনি বলেন, প্রতিবেদনে বিষয়গুলো খুব স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী ধাপে যারা অপরাধে অভিযুক্ত, তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনার দায়িত্ব বাংলাদেশের বিচারিক কর্তৃপক্ষের। তবে এ ক্ষেত্রে জবাবদিহি প্রয়োজন। মাইকেল মিলার বলেন, কোনো ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করতে হলে সাক্ষ্যপ্রমাণ লাগবে। যদি সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকে, তাহলে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার যখন শুরু হবে, তখন অকারণে দেরি করা ঠিক হবে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ড র পর স থ ত অন ষ ঠ ন র জন ত ক ক জ করত র জন য ক জ কর র র জন সরক র চলম ন
এছাড়াও পড়ুন:
আব্দুল কাদের শিবিরের সাথী ছিলেন, দাবি ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতির
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ছাত্রশিবিরের সাথী ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক পোস্টে এ দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি ও আপ বাংলাদেশের মুখ্য সংগঠক রাফে সালমান রিফাত।
ছাত্রশক্তি কীভাবে গঠিত হয়েছিল, শিবির তাদের কীভাবে অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা করেছিল, ২০১৮ সালের দুটি আন্দোলনে শিবিরের ভূমিকা, জুলাই অভ্যুত্থানের শিবিরের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও ওই পোস্টে বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ঐতিহাসিক জুলাইয়ের কারণে আমরা একটি ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী: ঢাবি উপাচার্য
বিসিএসে সার্কুলারে নেই আরবি বিভাগ, প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
তবে রিফাতের পোস্টের কিছুক্ষণ পরই নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্ট দেন আব্দুল কাদের। তাদের ফেসবুক পোস্টটি দুটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
রাফে সালমান রিফাত লিখেছেন, “২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সভাপতি, সাদিক কায়েম সেক্রেটারি। ছাত্রশক্তি আত্মপ্রকাশের কয়েকদিন আগে আখতার আমাকে ফোন দিয়ে দেখা করতে চায়। জিজ্ঞেস করি, কী বিষয়? বলে, ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ছাড়া আর কারোর রাজনীতি নাই, নতুন একটা সংগঠন নিয়ে কাজ করতে চায় তারা।”
তিনি বলেন, “তার মাস দুয়েক আগেই ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি কমিটি কার্যত বিলুপ্ত হয়। আসিফের নেতৃত্বে কমিটির সবাই একযোগে পদত্যাগ করে লেজুড়বৃত্তির অভিযোগ এনে। তারপর পেইজের নাম বদলানো সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কাঁদা ছোড়াছুড়িও করে কেউ কেউ। যাইহোক, আমাদের সাথে দেখা করতে আসে আখতার, নাহিদ, মাহফুজ, আসিফ আর আহনাফ সাঈদ। হাতিরপুলের এক রেস্টুরেন্টে সন্ধ্যার পর শুরু হয় আলাপ-আলোচনা। আমাদের তরফে ছিলাম আমি আর সাদিক। তখনও সম্ভবত ছাত্রশক্তির নাম ফাইনাল হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “প্রায় ৩ ঘণ্টা সবকিছু নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। প্রথমে আখতার খুব সংক্ষিপ্ত একটা ব্রিফিং দেয়। বুঝলাম যে, দলনেতা আখতার। এরপর আমি প্রশ্ন করা শুরু করি। খুটিয়ে খুটিয়ে প্রশ্ন করেছি নানা বিষয়ে। ফিলোসফি, স্ট্র্যাটেজি, ফিউচার প্ল্যান, গোল, ন্যারেটিভ, সাপোর্ট বেইজ ইত্যাদি প্রায় সবকিছু নিয়ে। থট প্রভোকিং সব আলাপ। আমার সামনেই বসা ছিল আখতার। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হলো, আখতার একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিলো না। প্রায় সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিয়েছে মাহফুজ। মাঝেমধ্যে দুই একটা বিষয় অ্যাড করেছে নাহিদ। বাকি দুইজন তথা আসিফ এবং আহনাফ ছিল শুধুই নিরব শ্রোতা।”
বিফাত বলেন, “বুঝলাম, নতুন এই রাজনৈতিক উদ্যোগের প্রায় পুরোটাই মাহফুজের ব্রেইন চাইল্ড। মাহফুজ এখানে মূল আইডিওলোগ। এই উদ্যোগের থট প্রসেস ডেভেলপ করছে সে। বাকিরা এখনও চিন্তাগতভাবে অনেক পেছনে। বিশেষত আখতার ওখানে পিওর সামনের ফেইস মাত্র। যেহেতু, ডাকসুর কারণে তার একটা পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়েছিল। তাই তাকে সামনে রেখেই সেন্ট্রিস্ট রাজনীতির নতুন পথচলা শুরু আরকি। আমাদের কাছ থেকে তারা দোয়া, সমর্থন এবং সার্বিক সহযোগিতা চাইলো। ক্যাম্পাস একটিভিজমের তখনকার যে চিরাচরিত নিয়ম, সেটির অংশ হিসেবেই সম্ভবত।”
“উল্লেখ্য, ছাত্রশিবির সাংগঠনিকভাবে রেজিমেন্টেড একটা ফোর্স। যেকোনো কর্মসূচীতে মুহুর্তের মধ্যে একটা সংগঠিত শক্তিকে অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে মোবিলাইজ করার ক্যাপাসিটি তৎকালে সবচেয়ে বেশি ছিল শিবিরের। ফলে ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বা যেকোনো ক্রিয়েটিভ কর্মসূচী বাস্তবায়নে মাঠের কর্মী বাহিনি হিসেবে শিবিরের ম্যানপাওয়ার সাপোর্ট এবং আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা গ্রহণ একটা ওপেন সিক্রেট বিষয় ছিল সবার মধ্যে। আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা শুধু শিবির একাই করতো তা না, আরও অনেক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ছিল যারা পেছনে থেকে সহযোগিতা করতো নিয়মিত,” যুক্ত করেন রিফাত।
রিফাত আরো বলেন, “সেই আঠারোর কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই এই ব্যাপারটা ছাত্র অধিকার পরিষদের অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে স্বতঃসিদ্ধ ব্যাপার ছিল। জিনিসটা সমন্বয় করতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক। যেমন: আঠারো সালের দুইটা আন্দোলনে পেছনের ব্রেইন হিসেবে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছিলো শিবিরের তৎকালীন ছাত্র আন্দোলন সম্পাদক শামীম রেজায়ীসহ বেশ কয়েকজন। যাইহোক, আমি ওদেরকে সাহস দিলাম। সহযোগিতার আশ্বাস দিলাম। সামনে এগিয়ে যেতে বললাম। কয়েকদিন পর ওদের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান। আখতারকে আহবায়ক, নাহিদকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্রীয় বডি এবং আসিফকে আহবায়ক ও বাকেরকে সদস্য সচিব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটি প্রস্তুত করা হলো।”
তিনি বলেন, “বিধিবাম হলো আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের পর। মাহফুজ আচানক আখতার, নাহিদের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিয়ে বসলো। আমি তখনও জানতাম না, ঝামেলা কী নিয়ে। পরে কিছু কিছু জিনিস জেনেছি বিভিন্নজনের কাছ থেকে। এরপরে ক্যাম্পাস এক্টিভিজমে বেশ কিছু চড়াই-উৎরাই গেছে। অক্টোবরেই ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা নিয়ে ক্যাম্পাসে পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তা ঠিক করা নিয়ে ছোটখাটো ঝামেলা গেছে। মানব পতাকা তৈরীর কর্মসূচী ফ্লপের কাহিনি হয়েছে। পরের বছর মার্চে প্রোডাক্টিভ রমাদান অনুষ্ঠানে হামলা কেন্দ্রিক গণ-ইফতার কর্মসূচী, তারপর জুনে নতুন করে আবার কোটা আন্দোলন।”
তিনি আরো বলেন, “জুলাইয়ে সকল সংগঠনকে ছাপিয়ে নতুন ব্যানার তৈরী হয় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’, যেখানে সামনের ফেইস হিসেবে ছাত্রশক্তি, শিবির (যদিও শিবির তখনো প্রকাশ্য কর্মকাণ্ডে ছিল না), ছাত্র ফেডারেশন, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, ডিবেট সার্কিটের পোলাপান, সাধারণ অ্যাক্টিভিস্ট সবাই ছিল। সেখানে কোনো হায়ারার্কি ছিল না। মূখ্য সমন্বয়ক বলে কেউ ছিল না। কোনো একক নেতৃত্বই ছিল না। সবাই ছিল স্রেফ সমন্বয়ক। শিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে একাধিক ব্যক্তি ছিল, কিন্তু সাদিক কায়েম বা ফরহাদের মতো নেতৃস্থানীয় কেউ ছিল না। এমনকি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির কেন্দ্রীয় আহবায়ক, ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে পর্যন্তও সমন্বয়ক লিস্টে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।”
সাবেক ঢাবি শিবির নেতা বলেন, “যদিও প্রথম সমন্বয়ক তালিকা ঘোষিত হয় ৮ জুলাই। পরে ১৭ জুলাই আখতারকে গ্রেফতার করা হয়। আমার ধারণা, আব্দুল কাদেরকেও তখন শিবির তার নিজের প্রতিনিধি হিসেবেই কাউন্ট করতো ইন্সটিটিউট ফ্যাকাল্টির সাথী এবং জনশক্তি হিসেবে। যদিও সে ক্যাম্পাসে ছাত্রশক্তির অ্যাক্টিভিটিতেই বেশি জড়িত ছিল।”
সাবেক ঢাবি শিবির নেতা আরো বলেন, “ছাত্রশক্তি তার সেই সংক্ষিপ্ত নয় মাসের জার্নিতে ক্যাম্পাস কেন্দ্রিক নানাবিধ অ্যাক্টিভিটিতে শিবিরের সাথে কখনও প্রত্যক্ষ, কখনও প্রচ্ছন্ন সমন্বয় করে চলেছে। সেই সমন্বয় ও সম্পর্কে জোয়ার-ভাটা থাকলেও কখনও তা শত্রুতায় রূপ নেয় নাই। কাঁদা ছোড়াছুড়ি তো অনেক দূরের বিষয়। আজকে অবশ্য সবাই পলিটিক্স শিখে গেছে। এমন ভাব যেন তখন তারা শিবিরের কাউকে চিনতো না। নিজের সাবেক দায়িত্বশীল/নেতাকেও কামড় মারতে কারো তর সইছে না। ক্ষমতার অন্ধ মোহে নিজের এককালের সেইফগার্ডকেও নোংরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে ফ্যাসিবাদকে অট্টহাস্য দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। সুন্দর।”
পাল্টা জবাবে আব্দুল কাদের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আমি যখন সত্য প্রকাশ করলাম, ব্যক্তি-গোষ্ঠীর অপকর্ম, অপরাজনীতি তুলে ধরলাম; তখন আমার যুক্তিকে খণ্ডন না করে ওরা প্রচার করতে লাগলো, আমি ছাত্রলীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করি, আমি নাকি ছাত্রলীগ, আমি নাকি ডাকসুর জন্য এমন করি! সত্যকে মোকাবিলা করার সৎ সাহস যাদের নাই, তারাই অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে নিয়ে এসে ঘায়েল করার পায়তারায় লিপ্ত থাকে। গত ৫ বছরের জার্নিতে হাসিনা রেজিমও এইভাবে সত্যকে মোকাবিলা করতো না। তবে যে যা-ই বলেন, সত্য প্রকাশে এক চুলও পিছপা হবো না। সত্য আজ নয় কাল প্রতিষ্ঠা হবেই, সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে পিছপা হওয়া যাবে না। যে যা বলার বলুক।”
তিনি বলেন, “হাসিনার আমলে হলে থাকতে পারি নাই, বাহিরে দুর্দশায় জীবন অতিবাহিত করছি, হামলা-মামলার শিকার হইছি, জেল খাটছি, জেলে যাওয়ার কারণে একাডেমিক ইয়ার লস হইছে। এতোকিছুর পরেও একটা দিনের জন্যও লড়াই থেকে পিছু হটি নাই। সকালে মাইর খাইছি, বিকেলে আবার রাজপথে ফিরে আসছি। আর্থিক অনটনও আমার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। কারো কাছে একটাবারের জন্যও হাত পাতি নাই। এখন অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় চরিত্র হননের উদ্দেশ্যে নানান কথা ছড়ান। আমার আল্লাহ জানে, আমি আমার আর্থিক এবং উদ্দেশ্যের জায়গায় কতটুকু সৎ। যতদিন আমার ভেতরে সত্য থাকবে; ততদিন আমার বাহিরে ভয় নাই এবং ততোদিন-ই সত্য প্রতিষ্ঠার লড়াই চলবে...।”
এর আগে, রবিবার (৩ আগস্ট) আব্দুল কাদের এক ফেসবুক পোস্টে ঢাবি ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সাদিক কায়েম ঢাবিতে ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য তদবির করেছেন এমন একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করেন। সেখানে তিনি ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন হামলাকারী নেতাকে শিবির বলে দাবি করেন।
তবে পরবর্তীতে সাদিক কায়েম তার ফেসবুক প্রোফাইলে পাল্টা পোস্টে আব্দুল কাদেরের দাবি করা ছাত্রলীগ নেতারা কখনো শিবির করতেন না বা ৫ আগস্টের পরে শিবিরের কোন কর্মসূচিতে পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন। এনসিপি নেতাদের সঙ্গে হওয়া ব্যক্তিগত আলাপের স্ক্রিনশট আব্দুল কাদের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে নিন্দা জানান তিনি।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী