সিলেটে আওয়ামী লীগের নেতাকে মারধর করে পুলিশে হস্তান্তর
Published: 11th, May 2025 GMT
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টায় মার্কিন–ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিচ্ছে হামাস
গাজার স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেবে। এই ব্যক্তিই উপত্যকাটিতে শেষ জীবিত মার্কিন বন্দি বলে মনে করা হচ্ছে।
সোমবার (১২ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মঙ্গলবারের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। হামাস জানিয়েছে, মানবিক সাহায্য প্রবেশের জন্য একটি চুক্তি সহজতর করার উদ্দেশ এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গাজা ৭০ দিন ধরে ইসরায়েলি অবরোধের মুখে রয়েছে।
আরো পড়ুন:
পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে তুরস্ক যাচ্ছেন জেলেনস্কি
‘গুরুতর গোয়েন্দা তথ্য’ পেয়ে ভারত-পাকিস্তানকে থামিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হামাস জানিয়েছে যে মানবিক সাহায্য প্রবেশের জন্য একটি চুক্তি সহজতর করার জন্যও এটি করা হয়েছে। গাজা ৭০ দিন ধরে ইসরায়েলি অবরোধের অধীনে রয়েছে।
এর আগে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছিলেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী কাতারে মার্কিন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করছে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তারা কোনো যুদ্ধবিরতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয় বরং আলেকজান্ডারের মুক্তির জন্য একটি ‘নিরাপদ করিডোর’ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, গাজায় হামলা তীব্র করার প্রস্তুতি এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং হামাসের ওপর সামরিক চাপের কারণে আলেকজান্ডারের মুক্তি সম্ভব হয়েছে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, ট্রাম্পের আগমনের আগে হামাসের এই ঘোষণা শুভেচ্ছার নিদর্শন।
তিনি বলেন, এডানের মুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার জন্য স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে হামাস এবং মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আরেকটি বৈঠকের কথা রয়েছে। যার জন্য ইসরায়েলি সামরিক কার্যকলাপ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা এবং হস্তান্তরের সময় বিমান অভিযান স্থগিত রাখা প্রয়োজন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ একটি পোস্টে আলেকজান্ডারের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং এটিকে ‘স্মরণীয় সংবাদ’ এবং ‘সৎ বিশ্বাসে গৃহীত পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিবিসি বলছে, তেল আবিবে জন্মগ্রহণকারী কিন্তু নিউ জার্সিতে বেড়ে ওঠা ২১ বছর বয়সী আলেকজান্ডার গাজার সীমান্তে একটি অভিজাত পদাতিক ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস যোদ্ধারা তাকে ধরে নিয়ে যায়।
২০২৩ সালে হামাসের হামলায় ২৫১ জন জিম্মির মধ্যে ৫৯ জন এখনো গাজায় রয়ে গেছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজার জিম্মিদের মধ্যে পাঁচজন মার্কিন নাগরিক বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং আলেকজান্ডারকেই একমাত্র জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আলেকজান্ডারের পরিবার জানিয়েছে, তারা ‘কল্পনাতীত সবচেয়ে বড় উপহার পেয়েছে- আমাদের সুন্দর ছেলে এডান ৫৮৩ দিন গাজায় বন্দী থাকার পর বাড়ি ফিরে আসার খবর’।
আলেকজান্ডারের পরিবার বলেছে, “এটি সম্ভব করার জন্য আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন প্রশাসনের প্রতি তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে আমরা ইসরায়েলি সরকার এবং আলোচনাকারী দলগুলোকে অনুরোধ করছি: দয়া করে থামবেন না। আমরা আশা করি আমাদের ছেলের মুক্তির মাধ্যমে বাকি ৫৮ জন জিম্মির জন্য আলোচনা শুরু হবে, তাদের এবং তাদের পরিবারের জন্য এই দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটবে।”
মিশর ও কাতারও একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, আলেকজান্ডারকে মুক্তি দিতে হামাসের সম্মতি ‘আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার দিকে একটি উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ’।
হামাস তাদের বিবৃতিতে বলেছে, এই মুক্তি যুদ্ধবিরতি অর্জন এবং গাজায় খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য সরবরাহের অনুমতি দেওয়ার প্রচেষ্টার অংশ- যা ৭০ দিন ধরে ইসরায়েল দ্বারা সম্পূর্ণ অবরোধের অধীনে রয়েছে। গ্রুপটি বলেছে, তারা যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে চায়।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এর আগে বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমেরিকানদের প্রতি ইঙ্গিত হিসেবে হামাস আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং এই পদক্ষেপের ফলে আরো জিম্মিদের বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
গাজা যুদ্ধের শুরু থেকেই ইসরায়েলের নীতি ছিল, হামলা তীব্র করে জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে বাধ্য করবে।
হামাস অতীতে বলেছে, যে তারা কেবল এমন একটি চুক্তিতে সম্মত হবে যেখানে যুদ্ধের সমাপ্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নেতানিয়াহুর অবস্থান নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনে ক্রমবর্ধমান হতাশার ইঙ্গিত দেওয়া একাধিক প্রতিবেদনের মধ্যে হামাস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা চলছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীও তার দেশের মানুষের চাপের মধ্যে রয়েছেন, অনেকে তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করার অভিযোগ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছাবেন। ট্রাম্পের এই সফরে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারলে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক আক্রমণ আরো বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের বর্ধিত আক্রমণের পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের সব অঞ্চল দখল করা, ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক দক্ষিণে বাস্তুচ্যুত করা এবং ত্রাণ বিতরণ ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া।
ইসরায়েল ইতিমধ্যেই ৭০ দিন ধরে গাজায় সমস্ত খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য মানবিক সরবরাহের প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। মানবিক সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই পদক্ষেপকে একটি অনাহারের নীতি ও যুদ্ধাপরাধ হতে পারে বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, বছরের শুরু থেকে গাজায় শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির প্রায় ১০ গাজার ঘটনা শনাক্ত করা হয়েছে। গাজায় খাবারের দাম ১ হাজার ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় ৫২ হাজার ৮২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ