পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র নিরাপদ নয়: ভারত
Published: 15th, May 2025 GMT
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তানের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র নিরাপদ নয়। তাই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) নেওয়া উচিত। বৃহস্পতিবার শ্রীনগরে একটি সেনা ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় তিনি এ কথা বলেছেন।
গত সপ্তাহে ভারত পাকিস্তানের ‘সন্ত্রাসী শিবির’-এ হামলা চালানোর পর দুই দেশের মধ্যে মারাত্মক লড়াই শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত ১০ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়।
রাজনাথ সিং বলেছেন, “বিশ্ব জানে যে আমাদের সেনাবাহিনীর লক্ষ্য সঠিক এবং যখন তারা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে, তখন তারা শত্রুদের উপর গণনার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। আজ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অঙ্গীকার কতটা দৃঢ়.
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র আইএইএ-এর তত্ত্বাবধানে নেওয়া উচিত।”
আইএইএ হচ্ছে ভিয়েনাভিত্তিক জাতিসংঘের একটি নজরদারি সংস্থা যেটি পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণ করে। সংস্থাটি ২০০৮ সালের একটি চুক্তির অধীনে ভারতের বেশ কয়েকটি বেসামরিক পারমাণবিক স্থাপনা পর্যবেক্ষণ করে।
১৯৯৮ সালে ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়ে ওঠে। তাদের দশকের পর দশক ধরে চলা শত্রুতা এই অঞ্চলকে সবচেয়ে বিপজ্জনক পারমাণবিক সংঘর্ষের একটি করে তুলেছে।
ঢাকা/শাহেদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলায় মার্কিন-ইসরায়েলের লোকসানই সার
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সরাসরি হামলা চালানোর পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিজয়ের ঘোষণা দেন। ‘বোমা হামলায় ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়া’র পর ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করেছে– ‘বিশ্ব এখন অনেক বেশি নিরাপদ’।
হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আসলে কতটা পিছিয়েছে, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রধান রাফায়েল গ্রোসি বলেছেন, কংক্রিটের স্তরের গভীরে কী টিকে আছে– এটি সম্পর্কে গর্তগুলো খুব কমই বার্তা দেয়। ট্রাম্প প্রশাসন স্বীকার করেছে, অন্তত একটি স্থানে বাঙ্কার বাস্টার বোমা ফেলা হয়নি। কারণ এটি মাটির খুব গভীরে ছিল। ইরানের সেন্ট্রিফিউজ ও ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের ভাগ্য এখনও অজানা। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট না হলেও বছরের পর বছর বিরাজমান স্বচ্ছ পরমাণু বিস্তার রোধ ব্যবস্থা এখন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
সাম্প্রতিক হামলার আগ পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি মূলত শান্তিপূর্ণ ছিল। ১৯৫০-এর দশকে মার্কিন পরমাণু শান্তি উদ্যোগের সহায়তায় এটি চালু হয়। পরবর্তী দশকগুলোতে এতে আরও কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনা যুক্ত করতে এর পরিসর বাড়ানো হয়।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সব দিক কয়েক দশক ধরে আইএইএ কর্তৃক সূক্ষ্ম নজরদারির অধীনে ছিল। দেশটি ১৯৬৮ সালে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে (এনপিটি) স্বাক্ষর করে; আর আইনত পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ত্যাগ করা এবং সব পারমাণবিক উপকরণ আইএইএ সুরক্ষার অধীনে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।
২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প জেসিপিওএ (যৌথ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা) থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় তিনি দাবি করেন, জেসিপিওএর চুক্তি অনুসারে ইরান ‘খুব কম দিয়ে খুব বেশি’ কিছু পেয়েছে। ইউরোপীয় মিত্রদের কাছ থেকে চুক্তিটি রক্ষার জন্য বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপ এবং ইরানের অর্থনীতি পঙ্গু করতে ‘সর্বোচ্চ চাপ’-এর প্রচারণা শুরু করে।
ওই চুক্তি থেকে ট্রাম্পের প্রত্যাহারের পরিণতি দ্রুত দেখা গিয়েছিল। চুক্তি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে ইরান ধীরে ধীরে দূরে যেতে শুরু করে। ২০২০ সালে ট্রাম্পের নির্দেশে বিমান হামলায় ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হন। তারপর তেহরান ঘোষণা করে, দেশটি আর পারমাণবিক চুক্তিতে বেঁধে দেওয়া কর্মপ্রক্রিয়ায় সীমাবদ্ধ থাকবে না।
অবাক হওয়ার কিছু নেই, ট্রাম্পের পদক্ষেপ ইরানের সঙ্গে যে কোনো নতুন আলোচনাকে আরও কঠিন করে তুলেছিল। দ্বিতীয়বার ট্রাম্প প্রশাসনের মার্কিন কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরুর চেষ্টা করেছিলেন এবং বেশ কয়েক দফা পরোক্ষ আলোচনাও হয়েছিল।
ইরানি নেতারা নতুন চুক্তিকে অবজ্ঞা করা হবে না কিংবা একতরফা পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে না– এমন নিশ্চয়তা দাবি করেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন নমনীয়তা না দেখিয়ে বরং আরও কঠোর দাবি জুড়ে দেয়। ইরানের দৃষ্টিকোণ থেকে প্রস্তাবিত চুক্তিটি জেসিপিওএর চেয়ে কম অনুকূল ছিল এবং এটি এমন একটি দেশ থেকে এসেছিল, যার প্রতিশ্রুতি অবিশ্বাসযোগ্য প্রমাণিত হয়েছিল।
মার্কিন-ইসরায়েলি হামলা চলমান আলোচনাকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টাকে প্রায় ধ্বংস করে দেয়। হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরান ওমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নির্ধারিত আলোচনা বাতিল করে এবং দেশটির প্রতিনিধিদের দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়। বোমা হামলার পরের দিনগুলোতে ইরানের সংসদ এনপিটি ত্যাগের জন্য আইন প্রণয়ন শুরু করে। যদি ইরান এ চুক্তিতে পৌঁছায়, তাহলে প্রত্যাহার-বিষয়ক বিশ্বব্যাপী অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের মূল চুক্তিটি ভেঙে ফেলতে পারে।
একটি চুক্তিতে পৌঁছানো অপরিহার্য, কিন্তু এ জন্য আলোচনায় আমেরিকান কূটনীতিকে বাস্তবতার দিকে ফিরে যেতে হবে। ওয়াশিংটনের উচিত ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’-এর মতো সর্বোচ্চ দাবি পরিত্যাগ করা। অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইরানের কোনো সমৃদ্ধকরণ ক্ষমতা নেই বলে জোর দেওয়া অপ্রয়োজনীয় ও অবাস্তব। জেসিপিওএ ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে– কঠোরভাবে সীমিত সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি এবং জোরালো পর্যবেক্ষণ ইরানের বোমা তৈরির পথ কার্যকরভাবে বন্ধ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত দিতে হবে, তারা নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক।
তেহরান তার পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দিয়েছে, ন্যায্য চুক্তির প্রস্তাব পেলে তারা উচ্চ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও ক্যাপ সমৃদ্ধকরণ স্তরের মজুত ত্যাগ করতে ইচ্ছুক, যদিও তারা সমৃদ্ধকরণের অধিকার সম্পূর্ণ ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
দিন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ একতরফা পদক্ষেপ নয়, কূটনীতি ও টেকসই আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা পারমাণবিক বিস্তার ঝুঁকি মোকাবিলার সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। এসব হামলা ছিল গুরুতর কৌশলগত ভুল। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কূটনীতির ক্ষেত্রে কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি সমানভাবে ব্যাপক পুনঃপ্রতিশ্রুতির প্রয়োজন হবে।
ওলামাইড স্যামুয়েল: আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ; আলজাজিরা থেকে
সংক্ষেপে ভাষান্তরিত