শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় আহত যুবলীগ নেতা পেলেন জুলাই যোদ্ধা অনুদান
Published: 18th, May 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে গিয়ে আহত এক যুবলীগ নেতা জুলাই যোদ্ধা হিসেবে অনুদান পেয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ১৪ মে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আহত জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ‘সি ক্যাটাগরিতে’ এক লাখ টাকার চেক গ্রহণ করেন তিনি।
অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম মিনারুল ইসলাম। তিনি খুলনার তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। গত বছরের ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে খুলনার আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়ায় কার্যালয় থেকে পালাতে গিয়ে আহত হন মিনারুল। তার চেক প্রাপ্তির ছবি ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, আহত জুলাই যোদ্ধা সি ক্যাটাগরিতে খুলনায় ৬৩ জনের নামে চেক এসেছে। তাদের মধ্যে ৫০ জন এক লাখ টাকার চেক নিয়েছেন। গত ১৪ মে খুলনার জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের হাত থেকে চেক গ্রহণ করেন মিনারুল।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিতান কুমার মণ্ডল জানান, উপজেলা পর্যায়ে আবেদন করলে পুলিশ, জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র প্রতিনিধি, হাসপাতালসহ বিভিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। পরে জেলা কমিটির সভায় আরেক দফা যাচাই-বাছাই করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মিনারুল নামের ব্যক্তি সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। মন্ত্রণালয় থেকে তার আবেদন যাচাই-বাছাই করে গেজেট প্রকাশ করে চেক খুলনায় পাঠিয়েছে। এজন্য তার আবেদনের বিষয়ে খুলনায় কোনো তথ্য নেই।
তিনি বলেন, কেউ যদি তার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়, তাহলে সেটি যাচাই করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। তখন গেজেট থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে।
তেরখাদা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এফ এম মফিজুর রহমান বলেন, ‘তেরখাদা উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মিনারুল ইসলাম। ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। জুলাই আন্দোলনের সময় সে মধুপুরের বাড়িতেই ছিল। ৪ আগস্ট খুলনায় দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশে যোগ দিতে যায়। সেখানে পালাতে গিয়ে টিনের চালে ঝাপ দিলে পায়ে কী সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছিলাম।’
গতবছর ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছিলেন খুলনা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুজ্জামান জামাল। আত্মগোপনে থাকা জামালের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘৪ আগস্ট মিনারুল আমাদের সঙ্গেই ছিল। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে সে কার্যালয় থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হন। তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ৫ আগস্টের পর থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই।’
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে মিনারুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘জরুরি মিটিংয়ে আছি, ১০ মিনিট পরে ফোন ব্যাক করছি।’ এরপর অসংখ্যবার তাকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি তা ধরেননি। একপর্যায়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই অভ য ত থ ন য বল গ অন দ ন ৪ আগস ট য বল গ উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা সরকারি জায়গা উদ্ধারে চট্টগ্রামে পাউবো’র অভিযান
চট্টগ্রামে ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে থাকা ৩২০ কোটি টাকা মূল্যের ৩২ একর সরকারি জায়গা উদ্ধারে ১৬ বছর পর অবশেষে কঠোর অভিযানে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নগরের উত্তর হালিশহর থেকে উত্তর কাট্টলী পর্যন্ত তিনদিনব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উত্তর কাট্টলী এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সাগরিকাস্থ সাগর উপকূলঘেঁষা বেড়িবাঁধ ও বন্দর লিংক সড়কের পাশে মিনি স্টেডিয়াম এলাকায় আজ উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
অভিযানে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তারা হলেন, জেলা প্রশাসনের কাট্টলী সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার হুছাইন মুহাম্মদ, পতেঙ্গা সার্কেল ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার ফারিস্তা করিম ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুল হাসান। সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার ও মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনদিন টানা চলবে উচ্ছেদ অভিযান।
২ জুন সমকালের শেষের পাতায় ‘৩২০ কোটি টাকার জমি ৩৯ প্রভাবশালীর দখলে’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তারপর পানিসম্পদ উপদেষ্টার নির্দেশে এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যদিও তা ঠেকাতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদবির করেও উচ্ছেদ ঠেকাতে পারেননি প্রভাবশালীরা।
পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দখলে থাকা এসব জমি উচ্ছেদে রোববার থেকে অভিযান শুরু করেছি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার যৌথ সমন্বয়ে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবেন। স্থাপনা উচ্ছেদের মাধ্যমে দখলদারদের হাত থেকে দুখলমুক্ত জমিতে পিলার ও কাটাতার দিয়ে সংরক্ষণ করে বনায়ন করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই উচ্ছেদ ঠেকাতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সরকারি জায়গা যাদের দখলে
অবৈধ দখলদারদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি দিদারুল আলমের দখলে থাকা ৭ একর জায়গাজুড়ে কাভার্ডভ্যান ও স্কেভেটার ইয়ার্ড রয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক প্যানেল মেয়র নিছার উদ্দিন আহম্মেদ মঞ্জুর দখলে রয়েছে পাউবো’র আড়াই একর জায়গা। আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জু দশমিক ৪২ একর জায়গা বছরে ১৫ লাখ টাকায় মুনছুর মিস্ত্রি কাছে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, দশমিক ৩৮ একরের আরেকটি জায়গা আরিফুর রহমান রুবেলের কাছে ১৮ লাখ টাকায়, দশমিক ৫৪ একরের আরেকটি জায়গা আব্দুল মমিনের কাছে ২৪ লাখ টাকায় ভাড়া এবং নিজে দশমিক ৮৫ একর জায়গা দখল করে রেখেছেন। একইভাবে চসিকের সাবেক কাউন্সিলর আবুল হাসেম দশমিক ০১৬২ একর জায়গা ট্রলি ডিপো ভাড়া দিয়ে বছরে ১৮ লাখ টাকা আদায় করছেন।
এভাবে ৩৯ প্রভাবশালী ‘ভূমিখেকোর’ পেটে চলে গেছে চট্টগ্রামের হালিশহর, পাহাড়তলী এলাকার পাউবো’র ৩২০ কোটি টাকার ৩২ একর জমি। ১৯৭২ সালে শহর রক্ষা বাঁধের জন্য জায়গাগুলো অধিগ্রহণ করেছিল পাউবো। গত ১৬ বছর ধরে কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ড, স্কেভেটর ডিপো, ডেইরি ফার্ম, গাড়ির গ্যারেজ ভাড়া দিয়ে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পকেটে হাতিয়ে নিচ্ছেন ভূমিখেকোরা।
পাউবো চট্টগ্রাম বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, শহর রক্ষা বাঁধ করতে সত্তরের দশকে ২৬৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিছু অংশ বাঁধ কাম সড়ক হলেও অধিকাংশ জায়গা জমি শ্রেণিতে রয়ে গেছে। সেই জমিতে ৩৯টি দখলদার কাভার্ডভ্যান ইয়ার্ডসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে ভাড়া দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।