চলন্ত ট্রেনের দরজার বাইরে ঝুলে আছেন এক ব্যক্তি। ট্রেনের ভেতর থেকে কেউ একজন তাঁর হাত ধরে রেখেছেন। বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছেন তিনি। জানালার পাশে বসা কয়েক যাত্রী মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করছেন। লোকটিকে ছেড়ে দিতে বলছেন কেউ কেউ। এক পর্যায়ে ট্রেন একটি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করে। এ সময় হাত ছেড়ে দিলে তিনি রেললাইনে পড়ে যান। কয়েক যাত্রী এ দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করে ওঠেন।

ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, রোববার দুপুরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নশরৎপুর রেলস্টেশন এলাকায় বগুড়া থেকে সান্তাহারগামী একটি কমিউটার ট্রেনে এ ঘটনা ঘটে। চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও মাথা ও হাঁটুতে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল গ্রামের বাসিন্দা মতিউর। বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গতকাল তিনি বাড়ি ফিরেছেন। ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ তাঁর পরিবার।

ভুক্তভোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী জানান, মতিউর পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন। দুই বছর ধরে দূতাবাস ও এজেন্সির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন তিনি। ১৫ দিন আগে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তালশান গ্রামের মোহাম্মদ হেলালের ছেলে সজীব হোসেনকে সৌদি আরবে পাঠান মতিউর। সৌদিতে গিয়ে বৈধ কাগজপত্র পেতে দেরি হওয়ায় সজীবের পরিবারের সদস্যরা সাত-আট দিন আগে মতিউরের বাড়িতে যান। সেখানে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এর জেরে মতিউরকে একা পেয়ে সজীবের ছোট ভাই রাকিব ও শ্যালকরা মিলে চোর-ছিনতাইকারী অপবাদ দিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়। এ ছাড়া তাঁর কাছে থেকে ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় বলে মতিউরের পরিবারের অভিযোগ। 

মতিউর জানান, রোববার আলতাফনগর স্টেশনে ট্রেন থেকে যাত্রী নেমে যাওয়ার পর মাস্ক পরা ছয় থেকে সাতজন তাঁকে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অপবাদ দিয়ে মারধর করে। এর পর টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ট্রেন থেকে ফেলে দেয়।

ভুক্তভোগীর ছেলে আহসান হাবিব বলেন, ‘ঘটনার পর আদমদীঘি থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তারা আমার অভিযোগ নিতে চাননি। সান্তাহার রেলওয়ে থানায় মামলা করতে গেলে বলা হয়, আপনার বাবা জীবিত আছে। মারা গেলে মামলা নেওয়া যেত।’

এ বিষয়ে সজীবের বাবা হেলাল বলেন, ‘সজীবের শ্যালকরা ট্রেন থেকে তাঁকে ফেলে দেয়। তবে রাকিব সেখানে কিছুই করেনি।’

সান্তাহার রেলওয়ে থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি জিআরপি) হাবিবুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগীর স্বজনরা প্রথমে আদমদীঘি থানায় গিয়েছিলেন। সেখানে তাদের জিআরপিতে অভিযোগ জানাতে বলা হয়। তখন আমাদের থানায় এলে তাদের নাকি আবার আদমদীঘি থানা থেকে ফোন করা হয়। এ কারণে তারা সেখানে চলে যান। পরে আর এখানে আসেননি। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র আদমদ ঘ র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতরে মিলল ২৩টি ককটেল, আটক ১

মুন্সীগঞ্জে ড্রেনের ভেতর তিনটি প্লাস্টিকের বালতিতে লুকিয়ে রাখা ২৩টি ককটেল উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় ঘটনাস্থলের পাশে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের বোনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে তারা। পাশাপাশি মোহাম্মদ হাসান নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

রবিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার বৈখর অনির্বাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার ড্রেন থেকে ককটেলগুলো উদ্ধার হয়। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এম সাইফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

অভয়নগরে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ককটেল হামলা, আহত ৩

দিনাজপুরে পুকুর পাড় থেকে গ্রেনেড উদ্ধার 

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনের ঢাকনা খোলেন স্থানীয়রা। এ সময় তারা প্লাস্টিকের বালতিতে তুষ দিয়ে ঢেকে রাখা অবস্থায় কিছু বস্তু দেখতে পান। পাশাপাশি তিনটি ড্রেনের ঢাকনা খুলে তারা একই চিত্র দেখেন। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ড্রেনের ভেতর থেকে তিনটি বালতিতে রাখা ২৩টি তাজা ককটেল উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসানকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

আটক হাসান মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন হোসেন পাটোয়ারীর ভাগ্নি জামাই বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ককটেলগুলো উদ্ধার করে। এ সময় মোল্লাকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন পাটোয়ারির বোন সেলিনা বেগমের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ককটেল তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাসান নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

ঢাকা/রতন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ