পাবনার চাটমোহর উপজেলায় জামিনে বের হয়ে এসে মামলা তুলে নিতে জাহিদুল ইসলাম পিন্টু নামের এক বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্যকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। 

বুধবার (২১ মে) রাতে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ও বিএনপি নেতা চাটমোহর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। গত রবিবার (১৮ মে) বিকেলে উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের চাটরা গ্রামের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এই হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম পিন্টু চাটমোহর উপজেলায় পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। হুমকির ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

আরো পড়ুন:

ইশরাকের শপথ ঘিরে রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: ‘রাষ্ট্র নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ নেই’

অভিযুক্ত বাতেন হোসেন ওরফে আব্দুল বাতেন একই উপজেলার জামালপুর গ্রামের মৃত ইসাহক আলীর ছেলে।

বাদী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের গত এপ্রিল মাসে উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নের টেংগরজানি গ্রামের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী জামালপুর গ্রামের মধ্যে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি উভয় গ্রামের অভিভাবকদের মধ্যে গড়ায়। পরে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে বিএনপি নেতা ও ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম পিন্টু মীমাংসার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

এরই জেরে গত ১৬ এপ্রিল রাতে টেংগরজানি গ্রামে যাওয়ার পথে জামালপুর গ্রামের মৃত ইসাহক আলীর ছেলে বাতেন হোসেন ওরফে আব্দুল বাতেনসহ বেশ কয়েকজন রড়, কাঠসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম পিন্টুর ওপর অতর্কিত হামলা করে মারধর করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায়।

পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চাটমোহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এবং অভিযুক্ত কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে জেলহাজতে পাঠায়।

এরপর জামিনে বের হয়ে এসে অভিযুক্তরা গত রবিবার মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন ওই বিএনপি নেতা। তিনি বুধবার রাতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চাটমোহর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এ ব্যাপারে বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম পিন্টু বলেন, “তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে আমাকে যেভাবে মারা হয়েছে, সেটা কোনো সুস্থ মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষকে মারতে পারে না। ওরা ভেবেছিল আমি মারা গেছি। যে কারণে আমাকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখেছিল। কিন্তু তারা এখন জামিনে বের হয়ে এসে আবারো মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে আমাকে মেরে ফেলার হমকিও দিয়েছে। বাধ্য হয়ে আমি জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করেছি।”

অভিযুক্ত বাতেন হোসেনে বলেন, “আমি সামান্য একজন সেলুন কর্মচারী। আমি ঢাকায় থাকি। আমি কীভাবে তাকে হুমকি দেব? এছাড়া মারাপিটের ঘটনার সঙ্গেও আমি জড়িত নই। শত্রুতাবশত আমার নামে মামলা করেছে। আমি বর্তমানে জামিনে আছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।”

জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম বলেন, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/শাহীন/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ জ হ দ ল ইসল ম প ন ট ব এনপ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ, মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ালে আসতে হবে শেয়ারবাজারে

বছরে অন্তত হাজার কোটি টাকার মুনাফা হয় এমন ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারমুখী করতে নতুন মূলধন সংগ্রহের পরিবর্তে এগুলোর মালিকদের নিজের শেয়ার বিক্রি করে তাদের ভালো মুনাফার সুযোগ করে দেওয়ার সুপারিশ করেছে শেয়ারবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স। একই সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে এ সুযোগ অবারিত করার প্রস্তাব করেছে তারা। বর্তমানে এভাবে শেয়ার বিক্রির সুযোগ কেবল সরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য সীমিত করে রাখা আছে।

শেয়ারবাজার সংস্কারে গত বছরের ৭ অক্টোবর পাঁচ সদস্যের করা টাস্কফোর্স গঠন করেছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গত ২০ মে এই টাস্কফোর্স বিএসইসির কাছে আইপিও বিষয়ে তাদের চূড়ান্ত সুপারিশমালায় এমন প্রস্তাব করেছে। ১৭টি ইস্যুতে সংস্কার সুপারিশ চাইলেও আইপিওসহ এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি ইস্যুতে সুপারিশমালা জমা দিয়েছে টাস্কফোর্স। এই সুপারিশগুলোর আলোকে আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি হবে। অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে সেটি চূড়ান্ত করা হবে।  

সংস্কারের সুপারিশ প্রণয়নে গঠিত টাস্কফোর্স আরও প্রস্তাব করেছে– ব্যক্তি খাতের কোনো কোম্পানির মোট ব্যাংক ঋণ হাজার কোটি টাকা ছাড়ালে এবং ঋণ ও মূলধন ৩০ অনুপাত ৭০ শতাংশ বা তার বেশি হলে, ওই কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজনীয় আইনি বিধান করা যেতে পারে। 

শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরের শেয়ারবাজারে যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, তার মধ্যে আইপিওকেন্দ্রিক অভিযোগই বেশি। আবার আইপিওতে আসা কোম্পানির শেয়ারের দাম বহুগুণ বাড়িয়ে মুনাফা লুটতে সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারেও কারসাজি হয়েছিল। এমন প্রেক্ষাপটে আইপিও দুর্নীতির লাগাম টানা এবং মূলধন সংগ্রহের এ বাজারে ব্যক্তি খাতের কোম্পানিকে আকৃষ্ট করার জন্য ব্যাপক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।

টাস্কফোর্স তাদের এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশমালায় প্রস্তাব করেছে, কোনো কোম্পানির আইপিও প্রসপেক্টাস বা তথ্য বিবরণীর তথ্য বা আর্থিক প্রতিবেদনে বড় ধরনের গরমিল পাওয়া গেলে বা অসত্য প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ইস্যু ম্যানেজার ও ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি দায়িত্বশীলদের জেল বা জরিমানা বা উভয় প্রকার শাস্তি আরোপের বিধান করা যেতে পারে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করারও প্রস্তাব করেছে টাস্কফোর্স। এ ছাড়া কোনো অডিটর প্রতিষ্ঠানের কোনো অংশীদার একসঙ্গে দুটি কোম্পানির আইপিও-সংক্রান্ত আর্থিক প্রতিবেদনের অডিট করতে পারবেন না– এমন বিধানও করতে হবে।

খসড়া সুপারিশে আইপিও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় স্টক এক্সচেঞ্জের মতকে চূড়ান্ত করে অনুমোদন করার যে সুপারিশ করা হয়, চূড়ান্ত সুপারিশেও তা বহাল রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, স্টক এক্সচেঞ্জ কোনো আইপিও আবেদনে সায় না দিলে বিএসইসি তা অনুমোদন করবে না। আবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর আপিল করলে সে ক্ষেত্রেও স্টক এক্সচেঞ্জের নিরপেক্ষ দল সন্তুষ্ট না হলে, সে ক্ষেত্রেও অনুমোদন দেবে না বিএসইসি। আবার স্টক এক্সচেঞ্জের অমত সত্ত্বেও যে আইনি ক্ষমতাবলে কোনো কোম্পানিকে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত করার আদেশ প্রদানে বিএসইসির যে ক্ষমতা রয়েছে, তা তুলে নেওয়ারও সুপারিশ করেছে সংস্কার টাস্কফোর্স।

সুপারিশে বলা হয়, আইপিও আবেদন মূল্যায়নে দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের একাধিক আইপিও এক্সপার্ট প্যানেল গড়তে হবে। এ প্যানেল যে বিষয়গুলো দেখবে তা হলো– সংশ্লিষ্ট কোম্পানির ব্যবসা পরিস্থিতি, ব্যবসায় নিজের বাজার অংশ, সংশ্লিষ্ট খাতের প্রবৃদ্ধির ধারা, কোম্পানির মালিকানা, ব্যবস্থাপনা এবং আর্থিক প্রতিবেদনের মান, ঋণ ও দায় শোধের ইতিহাস, কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা ও পারিবারিক বিরোধ, লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা, আইপিও অর্থ ব্যবহার বাস্তবসম্মত কিনা, স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন ইতিহাস ইত্যাদি।

সংস্কার টাস্কফোর্স আইপিওতে স্বচ্ছতা বাড়াতে  স্টক এক্সচেঞ্জকে আবশ্যিকভাবে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী কোম্পানির অফিস ও কারখানা সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদন দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ারে লক-ইন বিদ্যমান তিন বছর বহাল রাখার পাশাপাশি কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেয়ারে এক বছরের এবং আইপিও আসার আগের দুই বছরের মধ্যে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি হলে ওই প্লেসমেন্ট শেয়ারধারীদের ক্ষেত্রেও তিন বছরের লক-ইন রাখার প্রস্তাব করেছে।

আইপিওতে যোগ্য বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সমান ৫০ শতাংশ হারে কোটা বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ কোটার ৫ শতাংশ প্রবাসী বাংলাদেশি, ১৫ শতাংশ উচ্চবিত্ত এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখতেও বলা হয়েছে। তবে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর ক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ১০ শতাংশ ছাড়ে শেয়ার বিক্রির ধারা তুলে নেওয়ার কথা বলেছে টাস্কফোর্স।

বুক বিল্ডিং প্রক্রিয়ায় যৌক্তিক শেয়ারদর নির্ধারণের স্বার্থে যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২ শতাংশের বদলে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ শেয়ারের আবেদন করার বিধানের কথা বলেছে। এ প্রক্রিয়ায় দর নির্ধারণের কারণে আইপিওতে শেয়ার বিক্রির পরিমাণ মূলধনের ১০ শতাংশের কম হতে পারবে না। এমনটি হলে কোটার বাইরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ