ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনকেও অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করার বিধান রেখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালায় সংশোধন আনা হয়েছে। এত দিন অভিযুক্ত হিসেবে শুধু ব্যক্তিকেই বোঝাত। পাশাপাশি তদন্ত চলাকালে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রয়োজনে অভিযুক্তকে অথবা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন, এমন ক্ষমতাও বিধিমালায় রাখা হয়েছে।

‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালা-২০১০’-এ এ দুটিসহ মোট ৪৪টি সংশোধনী ও সংযোজন এনে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এই বিধিমালা এখন ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ কার্যপ্রণালি বিধিমালা ২০১০ (সংশোধন), ২০২৫’ নামে অভিহিত হবে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩-এর ২২ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক প্রণীত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কার্যপ্রণালি বিধিমালা-২০১০’-এর ৬৬ বিধিতে উল্লিখিত ক্ষমতাবলে ট্রাইব্যুনাল এই সংশোধনী এনেছেন বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

১০ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল), ১৯৭৩ আইনের সংশোধন এনে অধ্যাদেশ জারি করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখানে সংগঠনের সংজ্ঞায় সংশোধন আনা হয়। সেই সংশোধন অনুযায়ী, সংগঠন বলতে যেকোনো রাজনৈতিক দলকেও বোঝাবে। পাশাপাশি সংগঠন বলতে রাজনৈতিক দলের অধীনস্থ, সম্পর্কিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো সংগঠন অথবা গোষ্ঠীকেও বোঝাবে।

আইনের সংশোধনীতে আরও বলা হয়েছিল, এই আইন বা প্রযোজ্য অন্যান্য আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, যদি ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রতীয়মান হয় যে কোনো সংগঠন এই আইনের ৩ ধারা উপধারা (২)-এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেছে, আদেশ দিয়েছে, চেষ্টা করেছে, সহায়তা করেছে, উসকানি দিয়েছে, মদদ দিয়েছে, ষড়যন্ত্র করেছে, সহযোগিতা করেছে অথবা অন্য যেকোনোভাবে সেই অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছে, তবে সংগঠনটির কার্যক্রম স্থগিত বা নিষিদ্ধ করার, সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণার, এর নিবন্ধন বা লাইসেন্স স্থগিত অথবা বাতিল করার এবং এর সম্পত্তি জব্দ করার ক্ষমতা থাকবে ট্রাইব্যুনালের।

আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ জারির আগে সে দিনই (১০ মে) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এ অবস্থায় ট্রাইব্যুনালের বিধিমালায়ও সংশোধন আনা হলো।

কার্যবিধি সংশোধনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে সংগঠনের বিচার এবং শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। সেই বিচারের পদ্ধতি কেমন হবে, সংগঠনের পক্ষ থেকে কে কে ট্রাইব্যুনালে এই বিচারে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তার বর্ণনাও এই সংশোধনীতে আনা হয়েছে।

গাজী মোনাওয়ার আরও বলেন, তদন্ত চলাকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কোনো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, অথবা তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো প্রসিকিউটর যেকোনো অভিযুক্তকে অথবা সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করতে পারবেন। গ্রেপ্তারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে ট্রাইব্যুনাল অথবা যেকোনো ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করতে হবে।

এই আইনজীবী আরও বলেন, চিফ প্রসিকিউটর চাইলে একাধিক অভিযুক্তকে একসঙ্গে বিচারের আওতায় আনতে পারবেন। অথবা তাঁদের ভাগ ভাগ করে বিচারের আওতায় আনতে পারবেন। অথবা একাধিক অভিযোগ একই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যদি তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাহলে ফরমাল চার্জ দাখিলের মাধ্যমে অনেকগুলো অভিযোগের বিচার একসঙ্গে করতে পারবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব ন স গঠন ক ষমত তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ছোট ফেনী নদীর ভাঙন কি তিন উপজেলার মানচিত্র বদলে দিচ্ছে

ফেনী ও নোয়াখালীর তিন উপজেলায় ছোট ফেনী নদীর ভাঙন তীব্রতর হয়েছে। এতে শত শত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কারণে ভূমি হারাচ্ছে তিন উপজেলা। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে সংকট দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ছোট ফেনী নদীসহ আরও দুটি নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে ফেনী ও নোয়াখালীর তিনটি উপজেলা। এতে কেবল ফেনী জেলারই ১৩ কিলোমিটার অংশে তীব্র ভাঙন হচ্ছে। একইভাবে ভাঙনকবলিত হয়ে পড়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাও। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে এখনো নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার পূর্ণাঙ্গ চিত্র নেই।

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছোট ফেনী নদীর ভাঙন রোধ ও সমুদ্রের লোনাপানির জোয়ার থেকে রক্ষার জন্য সোনাগাজীর কাজীরহাটে নদীর ওপর ১৯৬১ সালে একটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রক্ষণাবেক্ষণ ও সঠিক তদারকির অভাবে নির্মাণের ৪১ বছর পর ২০০২ সালে রেগুলেটরটি নদীগর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালে ৮ মার্চ ছোট ফেনী নদীতে কাজীরহাট রেগুলেটরের ২০ কিলোমিটার ভাটিতে মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১০ সালে রেগুলেটরটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। নির্মাণের ১৪ বছরের মাথায় ২০২৪ সালের ১৭ আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় মুছাপুর রেগুলেটর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে নদীর দুই পাড়েই এখন তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে।

১৯৬১ সালের কাজীরহাট রেগুলেটর ও ২০১০ সালে নির্মিত মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর পাড়ে রেগুলেটর না থাকায় জোয়ারের পানি ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে গত বছরের বন্যার পর থেকে ভাঙন বেড়েছে বহুগুণ।

গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ফেনীর সোনাগাজীতে বিলীন হওয়া মুছাপুর রেগুলেটর এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন। ওই সময় উপদেষ্টা ওই এলাকায় গণশুনানিতে অংশ নেন। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও কার্যত আট মাসেও কোনো পদক্ষেপ দেখছেন না স্থানীয় লোকজন।

নদী ভাঙনের দৃশ্য দেখছেন এক নারী। সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের উত্তর চর সাহাভিখারী গ্রামের বাঁশবাড়িয়া এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছোট ফেনী নদীর ভাঙন কি তিন উপজেলার মানচিত্র বদলে দিচ্ছে