স্ক্র্যাপ জাহাজের টাংকিতে জ্ঞান হারালেন চার শ্রমিক, একজনের মৃত্যু
Published: 23rd, May 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্ক্র্যাপ জাহাজের (পুরাতন জাহাজ) পোড়া তেলের ডিপোতে কাজ করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন চার শ্রমিক। খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে মুমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। হাসপাতালে নেওয়ার পথে একজনের মৃত্যু হয়। আহতরা হলেন, আরিফ, সুলতান, পেয়ারু, মীর আহমেদ। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে দিকে ফৌজদারহাট ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন সংলগ্ন সিডিএ রোডের মুখে জামাল কোম্পানির কালো তেলের ডিপোতে এই ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনর্চাজ সোহেল রানা।
কুমিরা ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, জামাল কোম্পানির স্ক্র্যাপ জাহাজের কালো তেলের ডিপোতে পুরাতন একটি টাংকিতে ঢোকেন একজন শ্রমিক। এ সময় ওই শ্রমিক কালো তেলের টাংকির ভেতরে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে আটকা পড়লে আরও একজন শ্রমিক তাকে উদ্ধার করতে টাংকির ভেতর নামেন। এভাবে একে একে চারজন শ্রমিক টাংকির ভেতর অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে আটকা পড়েন।
এ ঘটনায় স্থানীয়রা কুমিরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে একটি টিম গিয়ে চারজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
কালো তেলের ডিপোর মালিক জামাল উদ্দিন বলেন, আমি বাইরে আছি। শুনেছি কয়জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি।
কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ডিপোর ভেতরে একটি টাংকির ভেভরে কাজ করতে গিয়ে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে ভেতরে আটকা পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মুমূর্ষ অবস্থায় চার শ্রমিককে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সোহেল রানা বলেন, আহত চারজনের মধ্যে একজন মারা গেছেন। তার নাম জানা যায়নি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফার্সি ভাষার প্রথম মহিলা কবি
ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি রাবেয়া বসরির নাম। তাই যখন আমার দোভাষী রাবেয়া বলখি নামটা উচ্চারণ করল, ভাবলাম সে হয়তো ‘বসরি’ বলতে ‘বলখি’ বলে ফেলেছে। পরে বুঝলাম ভুলটা আমারই। রাবেয়া বসরি আর রাবেয়া বলখি দু’জন আলাদা মানুষ। তাদের বিচরণের ক্ষেত্রও আলাদা। সময়টা এপ্রিল ২০০৪। জাতিসংঘের অধীনে চাকরি নিয়ে প্রথমবারের মতো পা রাখলাম আফগানিস্তানের মাটিতে। প্রথম এক সপ্তাহ রাজধানী কাবুলে ওরিয়েন্টেশনের পর আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো উত্তরাঞ্চলীয় মাজার-ই-শরিফে। এটি বালখ প্রদেশের রাজধানী। মূলত ঐতিহাসিক ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদের জন্যই মাজার-ই-শরিফ বিখ্যাত। স্থানীয় বাসিন্দারা বিশ্বাস করেন এখানেই রয়েছে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলি (রা.)-এর কবর। এই মসজিদ প্রাঙ্গণটি অনেকটা পার্কের মতো। প্রতিদিন শতশত তরুণ-তরুণী এই প্রাঙ্গণে এসে ভিড় জমায়। নওরোজ বা নতুন বছরে এটি হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের মিলনক্ষেত্র। ক’দিন মাজার শরিফে থাকার পর আমাকে পাঠিয়ে দেওয়া হলো প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরের সামাঙ্গান প্রদেশে, যার রাজধানী আইবাক। এই আইবাক আবার মহাকবি ফেরদৌসির শাহনামায় উল্লিখিত সোহরাব-রুস্তমের কাহিনির জন্য বিখ্যাত। এখানেই রয়েছে বিখ্যাত ‘তখত-ই-রুস্তম’। বিশ্বাস করা হয় এই তখত-ই-রুস্তমেই পিতা রুস্তমের সাথে পুত্র সোহরাবের শেষ মল্লযুদ্ধটি হয়েছিল। যাক, বালখের ব্লু মসজিদ বা আইবাকের তখত-ই-রুস্তম নিয়ে অন্য একসময় লেখার ইচ্ছে আছে। ফিরে আসি মূল বিষয়ে।
সাহিত্যের একজন ছাত্র হিসেবে আমি যেখানেই যাই, প্রথমেই খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করি সেই জায়গার কবি-সাহিত্যিকের। কিন্তু আফগানিস্তানের মতো একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে, যেখানে কোনো লাইব্রেরি নেই, এসব খবর পাওয়া খুবই কঠিন। তবুও চেষ্টা চালিয়ে গেলাম। এ কাজে আমাকে সাহায্য করলেন আমারই দোভাষী আব্দুল মতিন আমিন। (সর্বশেষ খবর অনুযায়ী মতিন এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। ২০১৪-এর দিকে একবার বাংলাদেশেও এসেছিল।) মতিন আমাকে সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকের সম্বন্ধে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেনি। তবে মধ্যযুগের ক’জন কবির সন্ধান দিল। তার মাধ্যমেই জানলাম এবং পরে আরও অনেকের সাথেই মিলিয়ে নিলাম, যাকে আমরা বাংলাদেশিরা একজন ধর্মীয় গুরু হিসেবে জানি সেই মাওলানা জালালুদ্দিন রুমি আসলে একজন মরমি কবি। স্থানীয়রা তাঁকে কবি জালালুদ্দিন বলখি হিসেবেই জানে। ফার্সি সাহিত্যের তিনি অন্যতম প্রধান কবি। জন্ম আফগানিস্তানের বালখ প্রদেশে। মতিনই আমাকে ফার্সি ভাষার প্রথম মহিলা কবি, রাবেয়া বলখির সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল। প্রথমে অবশ্য আমি তাঁকে রাবেয়া বসরির সাথে মিলিয়ে ফেলেছিলাম, যে কথাটা এই লেখার শুরুতেই উল্লেখ করেছি।
রাবেয়া বলখির জীবৎকাল নিয়ে কিছুটা অস্পষ্টতা আছে। কেউ বলছেন তিনি খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে, কেউ বলছেন দশম শতাব্দীর শুরুতে জন্মেছিলেন, বর্তমান আফগানিস্তানের বালখ বা বলখ শহরে। সে সময়ে দেশটির নাম অবশ্য আফগানিস্তান ছিল না। অনেকেই বলে খোরাসান, আবার কারও কারও মতে ‘তুরান’। রাবেয়ার পিতা ছিলেন বলখের আমির। অনেকটা আমাদের দেশের ছোট রাজা বা জমিদারের মতো। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর ভাই হারিস রাজ্যের ভার গ্রহণ করলেন। রাবেয়া তখন কিশোরী। সে সময়েই তিনি বড় ভাইয়ের দেহরক্ষী তুর্কি বংশোদ্ভূত ক্রীতদাস বাকতাসের প্রেমে পড়ে যান। অল্প বয়স থেকেই রাবেয়া কবিতা লিখতেন। বাকতাসের প্রেমে পড়ার পর যেন তাঁর কবিতায় বান ডেকে গেল। এক পর্যায়ে বিষয়টি তাঁর বড় ভাইয়ের নজরে পড়ে গেল। স্বাভাবিকভাবেই নিজের দেহরক্ষীর, যে কিনা আবার একজন ক্রীতদাস, তার সাথে বোনের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিলেন না। প্রথমে তিনি বোনকে এ ব্যাপারে নিরস্ত করতে চাইলেন। রাবেয়া কিছুতেই তা মানতে রাজি হলেন না। অতঃপর হারিসের মাঝে চিরন্তন আফগান শৌর্য জেগে উঠল। তিনি রাবেয়া এবং তার প্রেমিক– দুজনকেই বন্দি করে রাবেয়াকে একটা হাম্মামখানায় এবং বাকতাসকে একটা শুকনো কুয়ায় নিক্ষেপ করলেন– যেখান থেকে কারও সাহায্য ছাড়া উঠে আসা সম্ভব ছিল না। হাম্মামে বন্দি থাকা অবস্থাতেই রাবেয়ার মৃত্যু ঘটে। সেখানে থেকেই নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে লিখে যান কিছু অমর কবিতা।
রাবেয়ার কবিতা নিয়ে পরবর্তী সময়ে অনেকেই অনেক গবেষণা করেছেন, যাদের অধিকাংশই ইউরোপীয়। এখনও অনেকেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বালখ শহরেই রয়েছে রাবেয়ার মাজার। এ ছাড়া রাজধানী কাবুলে তার নামে একটা স্কুলও রয়েছে– রাবেয়া বলখি উচ্চ বিদ্যালয়।