দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অপ্রকাশিত ঘটনা নিয়ে গল্প– দ্য আর্ট স্পাই
Published: 23rd, May 2025 GMT
মিশেল ইয়ং-এর সারা জাগানো বই ‘দ্য আর্ট স্পাই: দ্য এক্সট্রাঅর্ডিনারি আনটোল্ড টেল অফ ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু রেজিস্ট্যান্স হিরো রোজ ভ্যাল্যান্ড’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চুরি যাওয়া ৬০ হাজারের অধিক শিল্পকর্ম উদ্ধারের জন্য লিজিয়ন ডি’অনার পাওয়া রোজ ভ্যাল্যান্ডের অপ্রকাশিত গল্প ঘিরে সাজানো বইয়ে তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন দিক এবং গুপ্তচরবৃত্তির পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে। গল্পটি মূলত ফ্রান্সের জিউ দে পাউমে জাদুঘরে ঘটে। জাদুঘরে ভ্যাল্যান্ড একজন অবৈতনিক সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি সংগ্রহশালার প্রধান এবং বেতনভুক্ত কিউরেটরের পদে উন্নীত হন। গুরুত্বপূর্ণ এই সংগ্রহশালা ও শিল্পকর্ম ঘিরে আবর্তিত হয় মূল রচনা।
পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক মিশেল ইয়ংয়ের লেখার ধরন উদ্যমী এবং ঔপন্যাসিক। বইটি ছোট ছোট অধ্যায়ে বিভক্ত; যেখানে নাটকীয় ক্লিফহ্যাঙ্গার এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলিকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও সমালোচকদের মতে, বইটি মাঝে মাঝে হ্যাজিওগ্রাফির দিকে ঝুঁকে পড়ে। যেখানে শুধু ভ্যাল্যান্ডের সুন্দর বস্তুর প্রতি আকর্ষণের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁকে একজন মানুষ হিসেবে সম্পূর্ণরূপে বিকশিত করা হয়নি।
১৯৮০ সালে বেলজিয়ামে থাকাকালীন ইতিহাসবিদ লিন এইচ.
নাৎসি বাহিনী ফরাসি ইহুদি ব্যবসায়ী এবং রাষ্ট্র থেকে বঞ্চিত নাগরিকদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত শিল্পকর্ম ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফ্রান্স জার্মানির হাতে পতন হলে জাদুঘরটি দখল করে। ফরাসি জাতীয় সংগ্রহশালার প্রধান জ্যাক জাউজার্ড রোজ ভ্যাল্যান্ডকে যে উপায়ে ভবনটিতে থাকতে বলেন এবং জার্মানদের হাতে চলে যাওয়া সমস্ত শিল্পকর্মের তালিকা সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। তিনি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে কাজটি করেন। যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত যেন জার্মানরা তাঁকে সন্দেহ করতে না পারেন তিনি সেই পটভূমি তৈরি করেন।
অনেক বিবরণে ভ্যাল্যান্ডকে একজন লোভী ও প্রতিরোধ কর্মী হিসেবে চিত্রিত করা হলেও মিশেল ইয়ং আরও সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গিতে জাদুঘরের বাইরে ভ্যাল্যান্ডের ব্যক্তিগত জীবন প্রকাশ করেছেন। যুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে সচিব জয়েস হিরের সঙ্গে ভ্যাল্যান্ডের দীর্ঘ সম্পর্কের বিষয়ে লিখেছেন। জয়েস বহুভাষী হিসেবে ভ্যাল্যান্ডকে জার্মান নথিগুলো বোঝাতে সাহায্য করতেন; যাকে বহির্মুখী এবং মনোমুগ্ধকর প্রতিপক্ষ বলে উল্লেখ করা হয়। ইয়ং দক্ষতার সঙ্গে ভ্যাল্যান্ডের বিবরণের আবেগপূর্ণ উপাদানগুলো তুলে ধরেছেন মনে হলেও অনেকের মতে এটি ভ্যাল্যান্ড সম্পর্কে সম্পূর্ণ নতুন ধারণার জন্য পর্যাপ্ত নতুন উপাদান ও ব্যক্তিগত অন্তর্দৃষ্টি প্রদান এবং তাঁর ব্যক্তিগত জগতে টানতে সক্ষম নয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বই শ ল পকর ম প রক শ ত
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরির ইন্টারভিউয়ে জেফ বেজোস একটা উদ্ভট কিন্তু দুর্দান্ত প্রশ্ন করতেন, কী সেটা
অ্যামাজনের এক্সিকিউটিভ থেকে বিনিয়োগকারী হওয়া ড্যান রোজ তাঁর এক্স হ্যান্ডলে বলেছেন, ‘১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমি যখন অ্যামাজনে কাজ করতাম, তখন জেফ বেজোসের প্রিয় ইন্টারভিউ প্রশ্ন ছিল “আপনি কি ভাগ্যবান?”’
হয়তো ভাবতে পারেন, বিশ্বের অন্যতম ধনী মানুষটা কি তাহলে ভাগ্যেও বিশ্বাসী? নাকি তিনি আশা করতেন নতুন কর্মীদের সৌভাগ্য তাঁর কোম্পানিতেও জাদুর মতো কাজ করবে? সম্ভবত তা নয়।
বেজোস–বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রশ্নটি ছিল কয়েকটা গুণ পরখ করার দারুণ এক উপায়। এর মধ্যে আছে নম্রতা, উদ্যোগ এবং আশাবাদ। চলুন, বিষয়গুলো বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করা যাক।
বেজোস তাঁর কর্মীদের মধ্যে নম্রতা খুঁজতেন। তাঁদের কাছে অতীতের ভুলগুলো জানতে চাইতেন। কারণ, তাঁর বিশ্বাস, যাঁরা ভুল স্বীকার করেন এবং সেখান থেকে শেখেন, তাঁরাই সত্যিকারের বুদ্ধিমান। ‘আপনি কি ভাগ্যবান?’—এই প্রশ্নের মাধ্যমে বেজোস চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে নম্রতা খুঁজতেন।
অ্যামাজনের একজন বিনিয়োগকারী প্যাট্রিক মায়ারের মতে, ‘ভাগ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা নম্রতা মাপার দুর্দান্ত উপায়।’
বেজোসের প্রশ্নটি নিয়ে প্যাট্রিক এক ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ‘কেউ যদি স্বীকার করেন যে তিনি ভাগ্যের জোরে সফল হয়েছেন, তবে এটা তাঁর বিনয়ের লক্ষণ।’
এর মানে হলো আপনি বোঝেন যে আপনার সাফল্য শুধু বুদ্ধি আর পরিশ্রমের কারণে আসেনি। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থাকাও একটা বড় ব্যাপার। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, আপনি কৃতজ্ঞ এবং নিজেকে আরও উন্নত করতে চান।
বেজোসের মতো আরেক মার্কিন বিলিয়নিয়ার মার্ক কিউবেনও বলেন, ‘বিলিয়নিয়ার হতে হলে আপনার যে একটা জিনিস থাকতে হবে, সেটা হলো ভাগ্য।’
সৌভাগ্য মানে উদ্যোগবেজোসের সূত্র অনুযায়ী, যাঁরা নিজেদের ভাগ্যের কথা অস্বীকার করেন, তাঁরা একটু অহংকারী হতে পারেন। কিন্তু যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন, তাঁদের নিয়োগ দেওয়ার আরও একটা কারণ আছে।
বিজ্ঞান বলে, ভাগ্য সব সময় হঠাৎ করে আসে না। ভাগ্যবান মানুষেরা নিজেদের স্বভাব ও কাজের মাধ্যমে নিজেরাই ভাগ্য তৈরি করেন।
একটি পরীক্ষায় বিষয়টি চমৎকারভাবে প্রমাণ করা হয়েছে। পরীক্ষায় কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে একটি পত্রিকা দিয়ে বলা হয়েছিল, এর মধ্যে থাকা ছবিগুলো যত দ্রুত সম্ভব গুণে শেষ করতে হবে।
কেউ কেউ উত্তর দিতে কয়েক মিনিট সময় নিলেন। আবার বাকিরা মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই উত্তর দিয়ে দিলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? যাঁরা সহজে উত্তর দিলেন, তাঁদের কি ভাগ্য সহায়তা করেছে? মোটেও না।
আদতে পরীক্ষকেরা পত্রিকার দ্বিতীয় পাতায় একটি বাক্সে লিখে রেখেছিলেন, ‘এই পত্রিকায় ৪৩টি ছবি আছে। আপনি এখন পড়া বন্ধ করতে পারেন।’
যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতেন, তাঁরা সহজেই বাক্সটি দেখতে পান এবং পাতা না উল্টিয়েই উত্তর দিয়ে দেন।
লোকে যেটাকে ‘সৌভাগ্য’ বলে, তা আদতে চারপাশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং সুযোগের দিকে নজর রাখা। বেজোস ঠিক এটাই চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে দেখতে চাইতেন।
আরও পড়ুনজেফ বেজোস–লরেন সানচেজের বিয়ের পোশাক ও বাগ্দানের আংটির দাম শুনলে চোখ কপালে উঠবে৩০ জুন ২০২৫সৌভাগ্য মানে আশাবাদসবশেষে নিজেকে ভাগ্যবান বলার মানে শুধু এটা নয় যে অতীতে আপনার সঙ্গে ভালো কিছু ঘটেছে। এর মানে হলো, আপনি ভবিষ্যতেও ভালো কিছু ঘটার আশা করেন। এককথায়, যাঁরা নিজেদের ভাগ্যবান বলেন, তাঁরা সাধারণত আশাবাদী হন।
আর মনোবিজ্ঞান বলে, ব্যবসায় ভালো করার জন্য আশাবাদী মনোভাব খুব দরকার।
অবশ্যই, অতিরিক্ত আশাবাদী হওয়াও ঠিক নয়। কারণ, দুশ্চিন্তা আমাদের খারাপ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। কিন্তু বিজ্ঞান বলে, যাঁরা সুযোগের ওপর বেশি মনোযোগ দেন, তাঁরা আরও বেশি সৃজনশীল এবং বুদ্ধিমান হন।
এসব থেকেই বোঝা যায়, বেজোসের প্রিয় প্রশ্নটি অদ্ভুত শোনালেও এর পেছনে যথেষ্ট যুক্তি ছিল। ভাগ্যবান হওয়ার মানে শুধু দৈবক্রমে কিছু পাওয়া নয়। বরং নিজেকে ভাগ্যবান ভাবাটা প্রমাণ করে যে একজন ব্যক্তি নম্র, (ইতিবাচকভাবে) সুযোগসন্ধানী, কর্মঠ এবং ভবিষ্যতের ওপর বিশ্বাস রাখতে ইচ্ছুক।
তো এসব গুণ যাঁর মধ্যে আছে, তেমন প্রার্থীকে চাকরি দিতে কে না চাইবে?
সূত্র: মিডিয়াম
আরও পড়ুনগার্মেন্টসে চাকরি করা সাদিকা যেভাবে করপোরেট জীবনে পা রাখলেন২০ ঘণ্টা আগে