ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩
Published: 26th, May 2025 GMT
ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রবিবার (২৫ মে) টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। তিনি জানান, শনিবার রাতে সিরাজগঞ্জ থেকে ডাকাতদের গ্রেপ্তার করে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রহিমপুর গ্রামের সানোয়ার হোসেনের ছেলে সাব্বির (৩৪), আব্দুল হামিদ সরকারের ছেলে সিহাব সরকার (২৭) ও মৃত ইমান আলী শেখের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৭)।
পুলিশ সুপার জানান, তাদের কাছ থেকে যাত্রীদের লুট হওয়া নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও ১৯টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে আল ইমরান পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে। পথে সাভারের নরসিংহপুর, বাইপাইল, আশুলিয়া থেকে কিছু যাত্রী ওঠেন। প্রায় ১০ নারীসহ ৩৮ জন যাত্রী নিয়ে বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা অতিক্রম করে। যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পর যাত্রীবেশী ৮-১০ জন ডাকাত ছুরি, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্রের মুখে চালকের কাছ থেকে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। চলাচলের সময় প্রত্যেক যাত্রীকে তল্লাশি করে মুঠোফোন, নগদ টাকা, সোনা ও অন্য মালামাল লুটে নেয়। তারা বাসটি নিয়ে সাভারের চন্দ্রা-আশুলিয়া পর্যন্ত যায়। পরে রাতভর কয়েকবার বাসটি নিয়ে ওই এলাকা থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত চক্কর দেয়।
পুলিশ সুপার জানান, ডাকাতি কাণ্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
ঢাকা/কাওছার/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আলোচনায় সুব্রত বাইনের স্যাটেলাইট ফোন
তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তারের সময় আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি একটি স্যাটেলাইট ফোনও জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, সহযোগীদের সঙ্গে স্পর্শকাতর তথ্য আদান-প্রদানে এই ফোন ব্যবহার করতেন সুব্রত। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি কীভাবে একজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর হাতে গেছে এবং কতদিন ধরে তা ব্যবহার করছেন, জানতে এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর অন্তত তিনটি হত্যাকাণ্ডে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীর যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ মধ্য বাড্ডায় বিএনপি নেতা সাধন হত্যায় যে অস্ত্র ব্যবহার হয়, তা সুব্রতর ছিল বলে তথ্য মিলছে। এ ছাড়া সুব্রত বাইনের কাছে যে স্যাটেলাইট ফোন পাওয়া গেছে, তার মাধ্যমে কীভাবে ও কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন, তা জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তারা অবৈধ অস্ত্র, গুলি ও অন্যান্য সরঞ্জাম অপরাধ ঘটানোর জন্য নিজেদের কাছে রেখেছিলেন। সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সক্রিয় এই সদস্যরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করে আসছিলেন। প্রাথমিক তদন্তে আসামিদের মামলায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের আরও অনেক সহযোগীকে গ্রেপ্তার এবং আরও বিপুল অস্ত্র-গুলি উদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে রাজধানীর হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় সুব্রত বাইনকে আট দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গ্রেপ্তার মোল্লা মাসুদ, সহযোগী শুটার এমএএস শরীফ ও আরাফাত ইবনে মাসুদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন এ আদেশ দেন।
এর আগে আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট থানার উপপরিদর্শক রিয়াদ আহমেদ। সেখানে বলা হয়, ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় থাকা সুব্রত বাইন ও তাঁর সহযোগী মোল্লা মাসুদ সন্ত্রাসী বাহিনী সেভেন স্টার গ্রুপ পরিচালনা করতেন। সুব্রত বাইন ওই সময়ে খুন-ডাকাতি সংঘটনের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করেন। আসামিরা বিভিন্ন মামলায় সাজা ভোগ করছিলেন। এর মধ্যে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারও সন্ত্রাসী কার্যক্রম শুরু করেন।
নিজের কাছে অস্ত্র রাখার কারণ জানালেন সুব্রত বাইন
এ দিন আদালতে সুব্রত বাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা ছবি নেন, ভিডিও নেন; কিন্তু হলুদ সাংবাদিক হইয়েন না। যেটা সত্যি, তদন্ত করে আপনারা সেটা লেখেন। ১৯৮৯ সাল থেকে আমার বিরুদ্ধে লিখতেছেন। আমারও তো পরিবার আছে। আমার নাম বিক্রি করে যারা চাঁদাবাজি করে, তাদের আপনারা ধরতে পারেন না। আমি কখনও প্রতিবাদ করি নাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজে বাঁচার জন্য অস্ত্র রাখি। কেউ যদি বলে রাখি না, তাহলে সেটা মিথ্যা হবে। আমি নিজেকে জানি। নিজেকে চিনি। ৬১ বছর হয়ে গেছে।’
আসামি সুব্রত বাইনের আইনজীবী দাবি করেন, গণমাধ্যম সৃব্রত বাইনকে সৃষ্টি করেছে। প্রভাবিত হয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীর ওই তালিকা করা হয়। তিনি তিনবার গ্রেপ্তার হন মিডিয়ার কারণে। আয়নাঘরে থাকার পর ৬ আগস্ট ভোরে নরসিংদীর এক রাস্তায় সুব্রতকে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।
এর আগে মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদসহ চারজনকে ঢাকা ও কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে গ্রেপ্তার সুব্রত ও মাসুদ জিজ্ঞাসাবাদে জানান, এম এ এস শরীফের হাতিরঝিলের একটি বাড়িতে তারা নিয়মিত বৈঠক করেন। সেখানে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা আছে। পরে হাতিরঝিল থানার নতুন রাস্তা এলাকা থেকে একই দিন বিকেল ৩টার দিকে আসামি এম এ এস শরীফ ও আরাফাত ইবনে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।