শেখ হাসিনা পালানোর আগে কী ঘটেছিল গণভবনে
Published: 26th, May 2025 GMT
গণ–অভ্যুত্থানের সময় গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে গণভবনে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তখন রেগে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে এ তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গত রোববার ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি শুনানিতে ৪ ও ৫ আগস্টের কিছু ঘটনাবলি তুলে ধরেন, যার বর্ণনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগেও উল্লেখ রয়েছে।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের ওই সময়ে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন জাতীয় সংসদের তৎকালীন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তবে ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা এর বিরোধিতা করেন।
গত বছরের ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক খুবই ‘উত্তেজনাপূর্ণ ও ভয়ংকর’ ছিল বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন তাজুল ইসলাম। সেই রাতে শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন মন্ত্রী ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। বৈঠকে রাগারাগি ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
‘ডুবিয়েছে এবং আরও ডুবাবে’
ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, সেদিন (৪ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে সোয়া ১২টার দিকে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়টি তোলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের পর তারিক আহমেদ সিদ্দিক বলেছিলেন, সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে কিছু লোককে মেরে ফেললে বিক্ষোভ এমনিতেই দমন হয়ে যাবে। এ সময় তারিক আহমেদ সিদ্দিক বিমানবাহিনীকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানোর কথা বলেন। তবে হেলিকপ্টার থেকে গুলির কথা বলায় বিমানবাহিনীর প্রধান ভীষণ রেগে যান। শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিমানবাহিনীর প্রধান বলেন, ‘তিনি (তারিক আহমেদ সিদ্দিক) আপনাকে ডুবিয়েছে এবং আরও ডুবাবে।’
‘গ্যাং অব ফোর’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কঠোর অবস্থানে থাকার জন্য শেখ হাসিনাকে সেই রাতে (৪ আগস্ট) পরামর্শ দিয়েছিলেন ‘গ্যাং অব ফোর’। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কোনোভাবেই নরম হওয়া যাবে না, এমন পরামর্শ তাঁরা দিয়েছিলেন।
‘আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো’
গণভবনে ৫ আগস্ট সকালের একটি বৈঠকের কথাও শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বৈঠকে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘ওরা ভালো কাজ করছে, সেনাবাহিনী পারবে না কেন?’ তখন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন বলেন, ‘পরিস্থিতি যে পর্যায় গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এমন কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব না।...অস্ত্র–গোলাবারুদ আর অবশিষ্ট নেই, ফোর্স টায়ার্ড (বাহিনী ক্লান্ত) হয়ে গেছে।’ এরপর সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ওই বৈঠকের এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা রেগে যান এবং বলেন, ‘তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো এবং গণভবনে কবর দিয়ে দাও।’
ওই বৈঠক থেকে সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনাকে গণভবনের অন্য একটি কক্ষে নিয়ে যান বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, ওই কক্ষে শেখ হাসিনার কাছে সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয় এবং তাঁকে পদত্যাগ করতে আবার অনুরোধ করেন সামরিক কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেন, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ডাকে ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচির কারণে গণভবন অভিমুখে ঢাকার চারপাশ থেকে মিছিল আসছে।
একপর্যায়ে শেখ হাসিনাকে ছোট বোন শেখ রেহানা বোঝানোর চেষ্টা করেন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ রেহানা একপর্যায়ে শেখ হাসিনার পা জড়িয়ে ধরেন। কিন্তু শেখ হাসিনা রাজি (পদত্যাগে) হচ্ছিলেন না। পরে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে কথা বলেন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জয়কে সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, প্রাণে বাঁচাতে হলে তাঁর মায়ের পদত্যাগ করা ছাড়া উপায় নেই। সময় গুরুত্বপূর্ণ। আর এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন জয় এবং তাঁর কথায় ক্ষমতা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন শেখ হাসিনা।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনা একটি ভাষণ রের্কড করে টেলিভিশনে প্রচারের ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। তবে সামরিক কর্মকর্তারা তাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
সময়–সংকটের কারণে শেখ হাসিনাকে গোছানোর জন্য ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয় উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, কারণ গণভবন অভিমুখে লাখ লাখ ছাত্র-জনতার মিছিল আসছিল।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ৫ আগস্ট বেলা ১১টায় আইএসপিআর থেকে বিটিভির মহাপরিচালককে জানানো হয়, সেনাপ্রধান বেলা দুইটায় জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। অবশ্য সেনাপ্রধান বক্তব্য দেন বিকেল চারটায়। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের আগে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক আহম দ স দ দ ক ৫ আগস ট পদত য গ র বল ন পর য য় ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।
গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।