মাতারবাড়ী-মহেশখালীকে সিঙ্গাপুর বানাতে চান প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস সচিব
Published: 27th, May 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কক্সবাজার জেলার মাতারবাড়ী-মহেশখালীকে নতুন সিঙ্গাপুর বানাতে চান বলে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১৪ হাজার কোটি ডলারের মতো বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। কীভাবে এখানে বিনিয়োগ আনা যায়, প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরে সেটি গুরুত্ব পাবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটায় প্রধান উপদেষ্টা জাপানের উদ্দেশে রওনা হবেন। ৩১ মে তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
মাতারবাড়ী-মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগের ওপর প্রধান উপদেষ্টা খুব জোর দিচ্ছেন বলে জানান তাঁর প্রেস সচিব। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে বড় বড় কনটেইনার জাহাজ ভিড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সমস্যা হচ্ছে ১১-১২ মিটারের বেশি ড্রাফটের (গভীরতা) জাহাজ এখানে ভিড়তে পারে না। মাতারবাড়ীতে ২০ মিটার ড্রাফটের জাহাজও ভিড়তে পারবে।
মাতারবাড়ী-মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগের আওতায় সেখানে ছয় লেনের মহাসড়ক ও ছয়টি বন্দর টার্মিনাল হবে বলেও জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, মাতারবাড়ীতে যখন ছয়টি টার্মিনাল হয়ে যাবে, তখন বাংলাদেশ থেকে আর সিঙ্গাপুরে পণ্য পাঠাতে হবে না। সিঙ্গাপুর থেকে বিশ্বের বড় বড় বন্দরে পণ্য পাঠানো হয়। এই কাজ তখন সরাসরি মাতারবাড়ী থেকে হবে।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার পরিকল্পনা হচ্ছে মাতারবাড়ী-মহেশখালীকে নতুন সিঙ্গাপুরে রূপ দেওয়া। একটা বন্দরকে ঘিরে সিঙ্গাপুরের চেহারা পাল্টে গেছে। একইভাবে দুবাইও বদলে যায়। উনি চাচ্ছেন, মাতারবাড়ীতে একটি সুশৃঙ্খল নগর হবে। এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকবে; লজিস্টিক, ম্যানুফ্যাকচারিং ও এনার্জি হাব (কেন্দ্র) হবে। এগুলোর জন্য প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে বিনিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করবেন।
শফিকুল আলম বলেন, ছয়টি টার্মিনাল নির্মাণে ডিপি ওয়ার্ল্ড, আবুধাবি পোর্টসহ অনেক বন্দর ব্যবস্থাপনা কোম্পানি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়েছে। মাতারবাড়ী-মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস কোম্পানি আরামকো তেল শোধনাগার করতে চায়। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের কিছু প্রতিষ্ঠান সেখানে এলএনজি টার্মিনাল করতে চায়।
মাতারবাড়ীর যখন উন্নয়ন হবে, একই সঙ্গে কক্সবাজারেরও উন্নয়ন হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, সরকার খুব দ্রুত কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করছে। বিনিয়োগকারীরা কক্সবাজারে এসে নামবেন এবং কাজ সেরে চলে যাবেন। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় তাঁদের আসতে হবে না। এ ধরনের পরিকল্পনার জন্য বিশাল বিনিয়োগ দরকার। সে জন্য তিনি জাপান সরকার ও দেশটির বড় বড় বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রধান উপদেষ্টার এই সফরে জাপানের কাছ থেকে সরকার ১০০ কোটি ডলারের সহযোগিতা আশা করছে বলেও জানান শফিকুল আলম। তিনি জানান, সরকার আশা করছে, জাপান থেকে প্রায় ৫০ কোটি ডলার আসবে বাজেট সহায়তা হিসেবে। ২৫ কোটি ডলার আশা করা হচ্ছে রেলওয়ের জন্য। আর বাকিটা অন্যান্য খাতের জন্য।
এক লাখ বাংলাদেশিকে জাপান পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রাপ্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে এক লাখ বাংলাদেশিকে জাপানে পাঠানো। তাঁদের কীভাবে পাঠানো হবে এবং কত দ্রুত পাঠানো যায়, এ নিয়ে জাপানের সঙ্গে কথা হবে।
জাপানে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভাষা শিক্ষা একটি সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশিরা যে ভাষা দক্ষতা নিয়ে যাচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে তাঁরা দক্ষ কর্মী হিসেবে কাজ পাচ্ছেন না। ভাষার প্রশিক্ষণ দিয়ে যেন বাংলাদেশিদের পাঠানো যায়, এ বিষয়ের ওপর প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন সভায় কথা বলবেন।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের জন্য একটি অর্থনীতি অঞ্চল তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, সেখানে যেন আরও বেশি জাপানি বিনিয়োগকারীরা আসেন এবং তাঁদের আরও কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়, তা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলবেন। এই সফরে একটি সেমিনারে ৩০০ জাপানি বিনিয়োগকারী থাকতে পারেন, সেখানে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলবেন।
আরও পড়ুনজুলাইযোদ্ধারা বিষপান করেছেন কি না, তদন্ত করছে সরকার৩ ঘণ্টা আগেসংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। দেশটির রাজনীতিবিদ, সরকারের কর্মকর্তা, জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা জাইকার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক হবে। জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনপ্রধান উপদেষ্টার জাপান সফরে সাত সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে২৫ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ত রব ড় ম ত রব ড র জন য সরক র বলব ন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর
চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।
সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।
পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।