বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়তে গেলে যে যে তথ্য জানা দরকার
Published: 28th, May 2025 GMT
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছরই হাজারো শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী যেতে আগ্রহী—এমন দেশগুলোর মধ্য অন্যতম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং জার্মানি। এসব দেশের উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত নভেম্বর থেকে শুরু করে জানুয়ারির মধ্যেই বেশির ভাগ বিদেশি শিক্ষার্থী আবেদন করে থাকেন। এ ছাড়া চীন, জাপান দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিও আগ্রহ আছে আমাদের শিক্ষার্থীদের।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পড়তে যাওয়ার জন্য আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সাধারণ কিছু নিয়ম বিশ্বের প্রায় সব দেশে একই। তাই আপনি যদি বিদেশি পড়তে যেতে চান, তবে প্রথমেই কোন দেশে যেতে চান, তা নির্ধারণ করতে হবে। তারপর সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কোর্স, শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ, জীবনযাপনের ব্যয়সহ নানা বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এসব তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সাধারণ আরও কিছু তথ্য মাথায় না রাখলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন যথাসময়ে এবং সুষ্ঠুভাবে হতে সমস্যা হতে পারে।
এইচএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থীদের অনেকে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা ভাবেন। আপনি যে সময় পড়াশোনা শুরু করতে চান, তার অন্তত এক থেকে দেড় বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে হবে। তবে বিশ্বের যেখানেই পড়াশোনা করতে যান কেন আপনার অবশ্যই বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে অর্জিত শিক্ষাগত যোগ্যতার সব সার্টিফিকেট, ভাষাগত দক্ষতা এবং আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র থাকতে হবে।
যুক্তরাজ্যযুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে শিক্ষার্থী হিসেবে পড়তে যেতে হলে বয়স অবশ্যই ১৬ বছরের বেশি হতে হবে। এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাসের পর আপনি স্নাতক পড়তে যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন। এ ছাড়া পোস্টগ্র্যাজুয়েট, মাস্টার্স, বিভিন্ন ধরনের সার্টিফিকেট কোর্স বা ডিপ্লোমা পড়তেও যেতে পারেন। শিক্ষার্থী হিসেবে ভিসার আবেদন করতে হলে অবশ্যই স্বীকৃত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে কোনো একটি কোর্সের অফার থাকতে হবে।
কনফারমেশন অব অ্যাক্সেপট্যান্স ফর স্টাডিজ বা সংক্ষেপে সিএএস আপনাকে ভিসা আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এ ছাড়া এই লেটারে একটি রেফারেন্স নম্বর থাকবে যেটি আপনাকে আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আসা অফার অবশ্যই শর্তহীন হতে হবে। অফার লেটারে যদি কোনো শর্ত থাকে, তাহলে আপনি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
আপনি যে কোর্সে পড়তে যাচ্ছেন, সেটির খরচ এবং যুক্তরাজ্যে আপনার জীবনধারণের খরচ জোগানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থ থাকতে হবে। এর পরিমাণ কত হবে, সেটি নির্ভর করবে আপনি কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করতে যাচ্ছেন এবং কোর্সটির দৈর্ঘ্য কত, তার ওপর।
আপনার অন্তত এক শিক্ষা বছর বা ৯ মাসের পড়াশোনা ও যুক্তরাজ্যে থাকা-খাওয়ার ব্যয় বহনের অর্থ থাকতে হবে। তবে আপনার কত খরচ পড়বে, সেটি আপনার অফার লেটার বা কনফারমেশন অব অ্যাক্সেপট্যান্সের মধ্যে উল্লেখ করা থাকবে।
পড়তে যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি জানার প্রমাণপত্র থাকতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি ইংরেজি পড়তে, লিখতে, বলতে এবং বুঝতে পারেন। এর জন্য নির্ধারিত কিছু টেস্ট বা পরীক্ষা রয়েছে। উল্লেখযোগ্য একটি পরীক্ষা হচ্ছে আইইএলটিএস। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে এসব টেস্টে অংশ নিতে পারবেন আপনি।
এ ছাড়া আপনাকে কিছু নথি অবশ্যই দেখাতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, পাসপোর্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাঠানো সিএএস বা অফার লেটার, পড়াশোনা ও জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের প্রমাণপত্র, যক্ষ্মা পরীক্ষার সার্টিফিকেট, আপনার পড়াশোনার অর্থায়ন ইত্যাদি। এ ছাড়া অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ভিসা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ আপনার কাছে অন্য নথিও চাইতে পারেন।
আপনি যে বিষয়েই পড়তে যান না কেন, কোর্স শুরু হওয়ার অন্তত ছয় মাস আগে আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সাধারণত তিন সপ্তাহের মধ্যে আপনি আপনার আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানতে পারবেন।
আপনি যুক্তরাজ্যে কত দিন থাকতে পারবেন, তা নির্ভর করবে আপনি কী ধরনের কোর্স করেছেন এবং তার দৈর্ঘ্য কত দিন, তার ওপর। বয়স যদি ১৮ বছর বা তার চেয়ে বেশি হয় এবং আপনার কোর্সটি যদি স্নাতক পর্যায়ের হয়, তাহলে সাধারণত পাঁচ বছর থাকার সুযোগ পাবেন আর তা না হলে সাধারণত দুই বছর থাকার সুযোগ পাবেন।
আপনি আপনার স্ত্রী বা স্বামী এবং সন্তানদেরও আপনার সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে কোর্স যদি ২০২৪ সালের পয়লা জানুয়ারির পর শুরু হয় তাহলে আপনার সঙ্গীকে নিতে হলে আপনাকে অবশ্যই পিএইচডি বা কোনো গবেষণাবিষয়ক উচ্চডিগ্রির শিক্ষার্থী হতে হবে।
ফাইল ছবি.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ধ রণত প রব ন র জন য পর ক ষ আপন ক আপন র ন করত ন আপন
এছাড়াও পড়ুন:
আঠারো শতকের সুফি কবি ও সংগীতজ্ঞ সৈয়দ খাজা মীর দর্দ
আবদালি মারাঠিদের উৎপাত ও অত্যাচারে অন্য কবিরা যখন একে একে দিল্লি ছেড়ে লক্ষ্ণৌ চলে গিয়েছিলেন, তখনো প্রিয় শহর দিল্লি ছাড়েননি সৈয়দ খাজা মীর দর্দ (১৭২০-১৭৮৪ খ্রি.), বরং আমৃত্যু সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন। লক্ষ্ণৌয়ে অবস্থানকারী কবিদের কাব্যবৈশিষ্ট্যের সঙ্গে তাঁর কবিতার যে পার্থক্য ছিল, শুধু সে কারণেই তিনি সেই জায়গায় যাননি তা নয়, তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ ছিল প্রখর, কারও তারিফ করে কখনো কসিদা লিখেছেন বলে শোনা যায়নি, সর্বোপরি তাঁর জীবনদর্শনও ছিল সমকালিক অন্য কবিদের থেকে আলাদা। মধ্যযুগের যে সময়টায় মীর দর্দের জন্ম, সেই সময় উর্দু সাহিত্যে ‘মীর-সওদার যুগ’ বলে পরিচিত—এই দুই কবি পারস্য কবি খাজা শামসুদ্দিন হাফিজ সিরাজি ও শেখ মোসলেহ উদ্দিন সাদির পথ অনুসরণ করে ফারসি কবিতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করেন এবং সফল হন। মির্জা রফী সওদার চেয়েও সাত বছরের অগ্রজ মীর দর্দ এই সবকিছুই নিবিড়ভাবে লক্ষ করেছেন, পারস্য ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ভান্ডার থেকে অনেক কিছু গ্রহণও করেছেন, তবু আমাদের ধারণা, পারিবারিক বংশধারার প্রভাবেই তাঁর জীবনদর্শন ও কাব্যচিন্তা শুরু থেকেই ভিন্ন ছিল।
মধ্যযুগের যে সময়টায় মীর দর্দের জন্ম, সেই সময় উর্দু সাহিত্যে ‘মীর-সওদার যুগ’ বলে পরিচিত—এই দুই কবি পারস্য কবি খাজা শামসুদ্দিন হাফিজ সিরাজি ও শেখ মোসলেহ উদ্দিন সাদির পথ অনুসরণ করে ফারসি কবিতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে উর্দু কবিতার ধারায় যুক্ত করেন এবং সফল হন।মাহমুদ আলী খান জামী তাঁর ‘দর্দ কে সো শের’ (প্রকাশকাল: ১৯৫৫ খ্রি., দিল্লি) গ্রন্থে লিখেছেন, খাজা মীর দর্দের দাদা বাদশাহ আলমগীরের শাসনামলে বুখারা থেকে এ দেশে এসেছিলেন, আর বাবা খাজা মাহমুদ নাসির আন্দালিব ছিলেন ‘শায়েরে উর্দু’ এবং ব্যক্তিগত জীবনে একজন সুফি। ভিন্ন মতে, তাঁর বাবার নাম (মাহমুদ নাসির নয়) মুহাম্মদ, আর তিনি উর্দু ভাষার কবি ছিলেন না, ছিলেন ফারসি ভাষার কবি। এঁরা ছিলেন নকশবন্দী ঘরানার পথিকৃৎ খাজা বাহাউদ্দিনের বংশধর ও অনুসারী। সুফি পরম্পরার মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন বলেই মাত্র বাইশ বছর—ভিন্ন মতে, সাতাশ বছর বয়সে জাগতিক মোহ ত্যাগ করে সুফি শুদ্ধাচারী হয়ে ওঠেন দর্দ এবং সুফি তত্ত্বসংক্রান্ত একাধিক বই লেখেন। ফলে তিনি যখন শের ও গজল লেখেন, তখন সেগুলোতে স্বভাবগত কারণেই সুফি মরমি কবিতার সহজগভীর ভাবের ছায়া পড়েছে। নিচে দর্দ কে সো শের বই থেকে—অন্যত্র গজলরূপে গণ্য এবং গীত—প্রথম ৩টি শের পড়লে এ কথার সত্যতা মিলতে পারে :
তোহমতে চন্দ অপনে জিম্মে ধর চলে
জিস লিয়ে আয়ে থে হম সো কর চলে
জিন্দেগি হ্যয় য়া কোই তোফান হ্যয়
হম তো ইস জিনে কে হাথোঁ মে মর চলে
শমা কে মানিন্দ হম ইস বজম মে
চশম নম আয়ে থে দামন তর চলে
অর্থাৎ :
কত অপবাদ বয়ে নিয়ে আমি চলছি
অথচ যে কারণে এসেছি তা–ই করে গেছি
এ কোনো জীবন, নাকি তুফান
তার হাতেই তো আমি মারা যাব
এই সভার প্রদীপ ছিলাম আমি
এখন আমার চোখের জলে আঁচল ভিজে যায়
[অনুবাদ: লেখক]
অল্প বয়স থেকে যিনি এমন ভাবনায় তাড়িত, তাঁর গজলে এই প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। সুফি কবি ও সাধক হিসেবে স্বীকৃত হলেও গজলকার হিসেবে যেরকম গণ্য হননি খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি, ঠিক একই কারণেই গজলকার হিসেবে কেউ কেউ তাঁর নাম সমকালের মীর তকী মীর ও মির্জা রফী সওদার কাতারে রাখতে কুণ্ঠিত। অবশ্য এ ক্ষেত্রে খোদ মীর তকী মীরের একটি মন্তব্য আছে, যা অনেকেই উদ্ধৃত করেন, তা হলো: তিনি নাকি আড়াইজন কবিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতেন, যার মধ্যে একজন তিনি নিজে, অন্যজন মির্জা রফী সওদা আর অর্ধজন হলেন খাজা মীর দর্দ।
তাঁর এমন সহজগভীর ভাষার জন্য বোধ হয় বেশ কিছু অনুসারী তৈরি হয়েছিল, যাঁরা নিয়মিত তাঁর মাহফিলে আসতেন। শুধু ভাবশিষ্যরাই নন, সংগীতশাস্ত্রে পারদর্শী খাজা মীর দর্দ মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর পাক্ষিক আসরে অনুরাগী হিসেবে কখনো কখনো বাদশাহ শাহ আলমও আসতেন।শের ও গজলের ক্ষেত্রে মীর তকি মীর শেষমেশ যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন সেই জায়গা থেকে বিচার করে তাঁর এই কথাটিকে সদর্থে ধরে নিলে কবিতায় খাজা মীর দর্দের অবদানকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন না করে উপায় নেই। আসলে পারস্য কবিতার ঐতিহ্য ধারণ করে উর্দু গজলে যখন পরবর্তীকালের জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নারীর সঙ্গে আলাপের আবহ তৈরি হচ্ছে, খাজা দর্দ তখন একই উৎস থেকে গ্রহণ করেছিলেন সুফি ঐতিহ্য। সমালোচকদের মতে, তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘দিওয়ান-এ উর্দু’, কিন্তু তাঁর ‘শমা-এ মহফিল’, ‘আহ-এ দর্দ’, ‘দর্দ-এ দিল’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থের প্রাঞ্জল ভাষা ও সুফিহৃদয়ের ভাব সেই সময় ও পরবর্তীকালের কবিদেরকেও প্রভাবিত করেছে। তাঁর একটি অনবদ্য শের হলো: ‘তমান্না তেরি হ্যাঁয় অগর হ্যাঁয় তমান্না/ তেরি আরজু হ্যায় অগর আরজু হ্যায়’ অর্থাৎ, আকাঙ্ক্ষা যদি থাকে, তা তোমারই আকাঙ্ক্ষা/ আশা তোমার জন্য, আদৌ আশা বলে যদি কিছু থাকে’। প্রেমের এমন একনিষ্ঠ নিবেদন খাজা দর্দের শেরেই পাওয়া সম্ভব। নিচে পড়ে নিতে পারি তাঁর আরও একটি জনপ্রিয় শের:
হাজারোঁ খওয়াহিশেঁ অ্যায়সি কে হর খওয়াহিশ পে দম নিকলে
বহুত নিকলে ম্যারে আরমান ল্যাকিন পির ভি কম নিকলে
অর্থাৎ :
এমন হাজার বাসনা আমার, যার প্রতিটি বাসনার জন্য প্রাণ ওষ্ঠাগত
কিছু আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো বটে; কিন্তু তা খুবই সামান্য
তাঁর এমন সহজগভীর ভাষার জন্য বোধ হয় বেশ কিছু অনুসারী তৈরি হয়েছিল, যাঁরা নিয়মিত তাঁর মাহফিলে আসতেন। শুধু ভাবশিষ্যরাই নন, সংগীতশাস্ত্রে পারদর্শী খাজা মীর দর্দ মর্যাদার ক্ষেত্রে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে তাঁর পাক্ষিক আসরে অনুরাগী হিসেবে কখনো কখনো বাদশাহ শাহ আলমও আসতেন।
আরও পড়ুনএকাদশ শতকের সুফি কবি হাকিম সানায়ি গজনভি২৮ আগস্ট ২০২৫মীর দর্দের এমন উচ্চাসনে পৌঁছার অন্য একটি কারণ হলো, তাঁর জন্মের বহু আগে থেকেই গান শোনা ও তার চর্চা বিষয়ে যে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছিল, সে বিষয়ে তাঁর সবিস্তার আলোচনা এবং গানবিষয়ক গান লেখার উদাহরণ। আমাদের অজানা নয়, গান বিষয়ে কওয়ালির প্রতিষ্ঠাতা আমির খসরুর একাধিক বাণী আছে, যেমন: ‘গান হলো আত্মার খোরাক’, ‘দরবেশের কাছে গান হলো ঐশ্বরিক জ্যোতির সমতুল’ ইত্যাদি, আর দর্দ লিখেছেন: ‘অগর ঘিনা নফস কো বড়্কায়ে তো হারাম, অগর দিল কো ইলাহ কি তরফ নরম করে তো হালাল’ অর্থাৎ গান যদি মনকে প্রবৃত্তিতাড়িত হতে উসকে দেয় তাহলে হারাম, আর স্রষ্টামুখী করলে হালাল’। এ বিষয়ে দর্দের যে শের রয়েছে, সেটি আরও সুন্দর :
সামা’ আহলে দিল কো হ্যা সোদমন্দ দর্দ
কে ইস সে নরম হোতা হ্যা পাত্থর কা দিল ভি
অর্থাৎ :
হৃদয়বান মানুষের জন্য গান উপকারী, হে দর্দ
কারণ পাথরের মতো হৃদয়ও তাতে গলে যায়।
উল্লেখ্য যে, গান বিষয়ে আলোচনা করবার সময় এ অঞ্চলের গবেষক ও সুফি-বাউল-ফকিরেরা ইমাম গাজ্জালি, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ও আমির খসরুর বইয়ের তথ্যের উল্লেখ করেন, কিন্তু প্রকাশ ও প্রচারের অভাবে কোথাও সৈয়দ খাজা মীর দর্দের কথা পাওয়া যায় না। জাভেদ হুসেন দর্দের কয়েকটি গজল অনুবাদ করতে গিয়ে তার ভূমিকায় লিখেছেন: ‘দর্দ ছিলেন একজন বড় সংগীতজ্ঞ। সুফি সাধনায় সংগীতের ভূমিকা নিয়ে হুরমতে ঘিনা নামে পুস্তিকা লিখেছেন। উর্দু গজলের গীতিময়তা আজ দেখা যায় তাতে দর্দের ভূমিকা ব্যাপক ও গভীর।’ এই পুস্তিকাটি দুর্লভ, ভবিষ্যতে এটি অনূদিত হলে শায়ের ও গজলকার মীর দর্দের পাশাপাশি সংগীতচিন্তক হিসেবে তাঁর পরিচয়টাও আমরা জানতে পারব।
অন্য আলো–য় লিখতে পারেন আপনিও। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধসহ আপনার সৃজনশীল, মননশীল যেকোনো ধরনের লেখা পাঠিয়ে দিন। পাঠাতে পারেন প্রকাশিত লেখার ব্যাপারে মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া।ই–মেইল: [email protected]