জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা লাশগুলোর কবর শনাক্ত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব শহীদের স্বীকৃতিসহ হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা।

বুধবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরম খাঁ হলে জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স ও জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স–মিরপুরের আয়োজনে ‘বেওয়ারিশ লাশ দাফন করা শহীদ পরিবারের বিভিন্ন দাবি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা ১১৪টি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করার কথা জানান। এ ছাড়া এই লাশগুলোর কবর শনাক্তে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের কোনো আন্তরিকতা দেখছেন না বলে অভিযোগ তাঁদের। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচার ও ক্ষতিগ্রস্ত শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন এবং আহত ব্যক্তিদের সুচিকিৎসার দাবি জানান তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে শহীদ আসাদুল্লাহর স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ২৩ জুলাই আমরা ছবির মাধ্যমে তাঁর খোঁজ পাই। কিন্তু তাঁর খোঁজ পাওয়ার আগে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে হস্তান্তর করা হয়। তাঁরা সে লাশ মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করে। আমরা সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে জানতে পারি, ২৩ জুলাই যে ৮টি লাশ দাফন করা হয়, তাঁর মধ্যে একজন ছিলেন আমার স্বামী।’

ফারজানা আরও বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আমার স্বামীর কবরের সঠিক সন্ধান পাইনি। এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন। সারজিস আলমের সঙ্গেও দেখা করেছি, কথা বলেছি, তিনিও আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে আশ্বাসের কোনো ফল আমরা দেখতে পাইনি। সরকারের কাছে দ্রুত আমার স্বামীর কবর শনাক্তের বিষয়ে কাজ করার দাবি জানাই।’

শহীদ সোহেল রানার ছোট ভাই নাবিল হোসেন জানান, তিনি ৩৪ দিন পর ভাইয়ের মৃত্যু ও রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘১০ মাস হয়ে গেল অথচ এই সরকার আমাদের ভাইদের কবর খুঁজে দিতে সহায়তা করছে না।’ এ সময় বেওয়ারিশ শহীদদের কবর শনাক্তসহ সরকারের কাছে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন নাবিল।

দাবিগুলো হলো ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে প্রতিটি কবর শনাক্ত করতে হবে। শনাক্ত করার পর প্রতিটি কবরে নামফলক দিতে হবে। কবরস্থানকে নামকরণ করতে হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে গণকবরের বিষয়ে উল্লেখ রাখতে হবে। তাঁরা বলেন, ‘দাবিগুলো পূরণ না হলে আমরা ১ জুলাই থেকে মন্ত্রণালয়ের সামনে অনশন করব।’

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক ইমরান মাহফুজ বলেন, ‘শহীদদের পরিচয় শনাক্তে সরকার কী করছে জানতে চেয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমরা এই চিঠি প্রেরণ করি। ১৫ দিন পর সে চিঠির জবাব এলেও তা সন্তোষজনক ছিল না।’ তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সরকার এ বিষয়ে ভূমিকা গ্রহণ করেনি। অথচ একটি গণ–অভ্যুত্থানের সরকারের এটি প্রথম কাজ হওয়া দরকার ছিল।

জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স–মিরপুরের সমন্বয়কারী মোহাম্মদ রোমেল, শহীদ শেখ শাহরিয়ার বিন মতিনের বাবা আবদুল মতিন, শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেনসহ প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র স ব ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে আরও ২৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালী সীমান্ত দিয়ে ২৩ জনকে ঠেলে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ মঙ্গলবার ভোরে তাঁদের বাংলাদেশের ভেতরে পাঠানো হয়।

কুশখালী সীমান্তের বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থানার খালিশা সীমান্ত। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই ২৩ জনকে আটক করে গতকাল সোমবার স্বরূপনগর এলাকায় রাখা হয়। পরে আজ ভোরে তাঁদের কুশখালী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। এরপর তাঁদের কুশখালী বিজিবি ক্যাম্পে নেওয়া হয়।

এ সম্পর্কে কুশখালী বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে কথা বলছি। বিস্তারিত জানতে হলে ৩৩ বিজিবির সাতক্ষীরার প্রধান কার্যালয়ে কথা বলতে হবে।’

এ বিষয়ে জানতে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশরাফুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে ৩৩ বিজিবির প্রধান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁদের ভারত থেকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। এ বিষয়ে পরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।’

এর আগে ৯ মে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা-সংলগ্ন পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৩ জনকে রেখে যায় বিএসএফ। তাঁদের উদ্ধারের পর যাচাই-বাছাই শেষে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুনসুন্দরবনে বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৩ জনকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর১৩ মে ২০২৫আরও পড়ুনগুজরাট থেকে উড়োজাহাজ-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, জানালেন ভুক্তভোগীরা১২ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অ্যাপ্রোচে মাটি না দেওয়ায় অকেজো ৪০ লাখের সেতু
  • স্বজনের লাশ দেখে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত
  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ঠেলে দেওয়া ২৩ জনকে কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইনে স্থান
  • রংপুর মেডিকেলে লাশের চোখ গায়েব: পরিবার বলছে চুরি, মর্গ দায় দিচ্ছে ইঁদুরকে
  • রমেকে হিমঘর থেকে মরদেহের চোখ উধাও, রংপুরে চাঞ্চল্য 
  • সাতক্ষীরায় আমভর্তি ট্রাক উল্টে ব্যবসায়ীর মৃত্যু
  • ভারতে কারাভোগের পর দেশে ফিরল ৩৬ শিশু
  • ফেনী সীমান্ত দিয়ে ‘পুশ ইন’ হওয়া ৩৯ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর নিজ জেলায়
  • সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে আরও ২৩ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ