আদালতে ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিত, শেয়ার সূচকের উত্থান
Published: 29th, May 2025 GMT
বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেছেন মার্কিন আদালত। এই খবরে আজ বৃহস্পতিবার এশিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম।
গতকাল বুধবার নিউইয়র্কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত এক আদেশে এই স্থগিতের রায় দেন। আদেশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে নিজের ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন ট্রাম্প।
এ খবরে আজ এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও নাসডাক ফিউচার্সের উত্থান হয়েছে। ফিউচার্সের অর্থ হলো, ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট কোনো সময় শেয়ার বেচাকেনার দর আগাম নির্ধারণ করা। অর্থাৎ আজ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের এই দুটি সূচকের অন্তর্ভুক্ত যেসব শেয়ার আছে, সেগুলোর দাম বাড়বে। এ ছাড়া জাপানের নিক্কেই এশিয়া সূচকের উত্থান হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচকের উত্থান হয়েছে ১ শতাংশ। অন্যান্য শেয়ারবাজারেও সূচকের উত্থান হয়েছে। তবে সূচকের যে খুব বেশি উত্থান হয়েছে, তা নয়।
শুল্ক স্থগিতের খবরে আজ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড ও ডব্লিউটিআই ইন্টারমিডিয়েট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।
তবে বিশ্ববাজারে সোনার দাম আজ আউন্সপ্রতি ২৩ ডলার কমেছে। সোনার দাম কমরেও রুপার দাম বেড়েছে আউন্সপ্রতি ১৫ সেন্ট।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের এশিয়াবিষয়ক প্রধান অর্থনীতিবিদ নিক ম্যারো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এই রায় এশিয়ার অর্থনীতির জন্য মোটামুটি ইতিবাচক। ম্যারোর ভাষায়, ‘যেসব দেশের রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আছে, তাদের জন্য এটি কিছুটা স্বস্তির।’ তবে সবাই যে এই সুবিধা পাবে, তা নয়।
ম্যারো আরও বলেন, যেসব দেশ মূলত গাড়ি ও ইলেকট্রনিক পণ্যের রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল—যেমন দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান—তারা এখনো নির্দিষ্ট খাতে শুল্কের মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। তাঁর মতে, এই রায়ের পরেও ট্রাম্প প্রশাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না, বরং তা আরও বেড়েছে। এদিকে ট্রাম্প প্রশাসন এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ