বিসিবি সভাপতি পদে পরিবর্তন চান ক্রীড়া উপদেষ্টা
Published: 29th, May 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক আহমেদ। সরকারের চাওয়ায় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় সরাসরি বিসিবি পরিচালক হন তিনি। পরে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পালনের ৯ মাস না যেতেই সরকার বোর্ডে তাকে চাচ্ছে না। যে কারণে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তাকে পদত্যাগ করতে বলেছেন।
বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টার বাস ভবনে বৈঠক করেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেখানে বিসিবি সভাপতিকে পদত্যাগ করতে বলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা আছে বলে জানানো হয়েছে বর্তমান বোর্ড সভাপতিকে।
তবে সাবেক ক্রিকেটার, বিসিবির সাবেক নির্বাচক ও বর্তমান সভাপতি এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেননি বলেও জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, তিনি ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কিছুটা সময় চেয়েছেন।
বিসিবির সভাপতি হওয়ার পর বারবার বিতর্কিত হয়েছেন ফারুক আহমেদ। বিপিএলে দেশি-বিদেশি ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফের পাওনা ঠিকঠাক শোধ করেনি ফ্র্যাঞ্জাইজি। যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। বিপিএলে ফ্র্যাঞ্জাইজি বন্টন নিয়ে ফারুক আহমেদের পছন্দ-অপছন্দ গুরুত্ব পেয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল।
এরপর নিজের পছন্দ মতো ব্যাংকে বিসিবির এফডিআর স্থানান্তর করেছেন ফারুক আহমেদ, এমন অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধ। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দলের হেড কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে ব্যক্তিগত তীক্ততার জেরে চাকরিচ্যুত করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। এসব কারণে তাকে পদত্যাগ করতে বলে থাকতে পারেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে ফারুক আহমেদকে পদত্যাগ করতে বললেও পদত্যাগ করা না করার সিদ্ধান্ত নিতান্ত বোর্ড সভাপতির। কারণ কাগজে-কলমে তিনি নির্বাচিত বিসিবি সভাপতি। সরকারের তাই তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তাকে জোরপূর্বক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলে সেটা সরকারি হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে করে আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ফারুক আহমেদ তাই পদত্যাগ না করলে ক্রীড়া উপদেষ্টা বা বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু করার নেই।
ফারুক আহমেদকে পদত্যাগ করতে বলার মধ্যেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বোর্ড সভাপতির দায়িত্ব দিতে চায় সরকার। এর আগে শোনা গিয়েছিল, বিসিবির নির্বাচনকালীন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে বুলবুলকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ র ক আহম দ য ব ও ক র ড় উপদ ষ ট পদত য গ করত ফ র ক আহম দ সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
এবার হালদায় মিলেছে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম
হালদা নদীতে দুই দফায় নমুনা ডিম ছাড়ার পর এবার পুরোদমে ডিম ছেড়েছে মা মাছ। ভারী বৃষ্টিপাত আর আর পাহাড়ি ঢল নামায় বৃহস্পতিবার মধ্য রাত থেকে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা কার্প জাতীয় মাছগুলো। আর শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত প্রাথমিক হিসেবে ১৪ হাজার কেজির বেশি ডিম সংগ্রহ হয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীরা। প্রায় তিনশ’ নৌকা নিয়ে মাছ ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপড়ের মানুষ। এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেন তারা।
হালদা বিশেষজ্ঞ, মৎস্য অফিস ও ডিম সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উত্তর চট্টগ্রামে প্রবাহমান হালদা নদীর মদুনাঘাট ছায়ার চর থেকে রামদাস মুন্সির হাট, আজিমের ঘাট, মাচুয়া গোনা, কাগতিয়া, অইডিএফ হ্যাচারি, সিপাহী ঘাট, নোয়াহাট, কেরামতলীর বাঁক এবং অঙ্কুরিঘোনা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন নদীরপাড়ে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারি এবং ট্রেডিশনাল মাটির কুয়াগুলোতে ডিম পরিস্ফুটনে ব্যস্ত সময় পার করছেন পেশাদার ডিম সংগ্রহকারীরা। শুরু থেকেই ডিম সংগ্রহের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে মৎস্য অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নৌ পুলিশ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত দুইটার দিকে জোয়ারের সময় হালদা নদীর আমতুয়া অংশে কার্পজাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছাড়ে। পরবর্তীতে ডিমগুলো হালদা নদীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। যারা প্রথম দিকে ডিম সংগ্রহ করতে নদীতে ছিলেন, তারা অধিক পরিমাণে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন। ডিম সংগ্রহকারীরা গড়ে আড়াই বালতি করে ডিম সংগ্রহ করতে পেরেছেন।’
বৃহস্পতিবার রাত রাত দুইটার দিকে হালদা নদীতে পুরোদমে ডিম ছাড়তে শুরু করে মা মাছ। শুক্রবার বিকেল পষর্ন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করে নদীর দুইপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। রাতে জোয়ারের পানি বাড়তে থাকলে হালদা নদীর আমতুয়া অংশে প্রথমে কার্পজাতীয় মা মাছ পূরোদমে ডিম ছাড়া শুরু করে। পরবর্তীতে নদীর বিভিন্ন অংশে ডিম ছাড়া শুরু করে মা মাছ। এই তথ্যটি জানিয়েছেন রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকতা আলমগীর হোসেন।
জানা যায়, হালদার রাউজান উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে দিনভর নদীর দুইপাড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের ডিম সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা থেকে তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে সাত শতাধিক ডিম আহরণকারী ডিম সংগ্রহ করেছেন। ডিম আহরণকারীরা এক থেকে পাঁচ বালতি পর্যন্ত ডিম পেয়েছেন।
হালদা নদীর সিপাহীঘাট কুম এলাকার প্রবীণ ডিম আহরণকারী মো. ইদ্রিসসমকালকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে নদীতে অবস্থান করছি। রাত দুইটার দিকে ডিম ছাড়ে মা মাছ। আমি দুই থেকে বালতি ডিম সংগ্রহ করেছি। এর আগে ২০০ গ্রাম নমুনা ডিম সংগ্রহ করেছি।’
ডিম সংগ্রহকারী মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমরা নদীতে ১০টি নৌকা নিয়ে ডিম সংগ্রহ করি। প্রতিটি নৌকায় গড়ে দুই থেকে আড়াই বালতি করে ডিম পেয়েছি। এখানে রুই কাতলা মৃগেল ও কালিবাউস মাছের ডিম রয়েছে।’
হালদা নদীর ডিম আহরণকারী সমিতির সভাপতি মো. শফিউল আলম জানান, ছয়টি নৌকা ও দুটি বাঁশের ভেলা করে ১৩ বালতি ডিম সংগ্রহ করেছেন তিনি।
রাউজান উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন বলেন, হালদা নদীতে প্রথমে দুইদফায় নমুনা ডিম ছাড়েন মা মাছ। বৃহস্পতিবার রাতে নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ পুরোদমে ডিম ছেড়েছে। রাউজান ও হাটহাজারী অংশে ৭০০ ডিম সংগ্রহকারী তিন শতাধিক নৌকা নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে ডিম সংগ্রহ করেন।
জানা যায়, বংশ পরম্পরায় ডিম সংগ্রহ করেন হালদাপাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। অভিজ্ঞ এই লোকজন রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউশ মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করে সরকারি হ্যাচারি, মাটি ও সিমেন্টের কুয়ায় এসব ডিম থেকে রেনু ফোটাবেন। এ কাজে সময় লাগবে চার দিন। প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া এসব রেণুর পোনা দ্রুত বড় হয় বলে সারাদেশের মাছ চাষিদের প্রথম পছন্দ। তাই দামও থাকে বেশি। তারপরও এসব রেণু সংগ্রহের জন্য মুখিয়ে থাকেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
হাটহাজারীর গড়দুয়ারার ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশের কারণে কয়েক বছর ধরে আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে আমাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। তবে এবার ভালো ডিম সংগ্রহ হয়েছে। চার দন পর রেণু ফুটবে। নিবিড় পরিচর্যা করতে হবে এখন। তারপর নির্দিষ্ট সময় শেষে পোনা বিক্রি শুরু করা হবে। ফলে দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখবেন ডিম সংগ্রহকারি ও হ্যাচারি মালিকর।’