আমি চুরি করিনি, দুর্নীতি করিনি, দেশের ক্ষতিও করিনি: শুভ
Published: 29th, May 2025 GMT
দেশের জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ। আসছে কোরবানির ঈদে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর অভিনীত নতুন সিনেমা 'নীলচক্র'। এ ছাড়াও বলিউডের কাজ করছেন তিনি। পাশাপাশি মুজিব: একটি জাতির রূপকার সিনেমাটিতে মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করার কারণে হচ্ছেন আলোচিত ও সমালোচিত। এইসব বিষয় নিয়েই সমকালের সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি
বলিউডে কাজ করে ফিরলেন? কাজটি নিয়ে কতটুকু বলা যাবে?
হ্যাঁ, সনি লিভের জ্যাজ সিটির কাজ শেষ করে ফিরলাম। তবে চুক্তিগত কারণে এখনই সব খোলাসা করে বলা যাচ্ছে না। আড়াই বছর আগে অডিশনের জন্য ডাক পাই। তারপর কয়েক ধাপের প্রক্রিয়া শেষ করে ২০২৪ সালের মে মাসে চুক্তিবদ্ধ হই। গেল ৭ মাস ধরে কাজটির শুটিং ও ডাবিং শেষ করেছি। এটি আমার প্রথম বলিউড প্রজেক্ট, এখন বাকিটা মুক্তির পর দর্শক বলবেন.
এবারের ঈদে আপনার ‘নীলচক্র’ সিনেমা আসছে। ট্রেইলার দেখে দর্শক গল্প নিয়ে একটা ধারণা পেয়েছেন। এই গল্প বেছে নেওয়ার পেছনে কি সময়ের সংকট, নাকি শিল্পীর দায়বোধ কাজ করেছে?
এই গল্প এখনকার। ইন্টারনেট যুগে একটা অসাবধান ক্লিক পুরো জীবন বদলে দিতে পারে– এটাই দেখানো হয়েছে। সাহসী বলেই করেছি, দরকারি বলেই করেছি। অভিভাবক হোন বা তরুণ– যারা অনলাইনে থাকেন, সবারই দেখা উচিত। চোখ বন্ধ রাখলে বিপদ থেমে থাকে না।
অনেকেই বলেন, আপনি আগের চেয়ে কম কথা বলেন এখন। সেটা কি অভিমানে না বিতর্কে?
এটা হয়তো অভিজ্ঞতা। হাজার জনের হাজার মত– সব ক’টায় সাড়া দিতে গেলে, নিজের কাজটাই আর করা হবে না। আমি বিশ্বাস করি, কাজ কথা বলবে। আর অভিমান? সেটা না হয় থাক, নিজের ভেতরেই। আর বিতর্ক? সেটা বিহীন তো জীবন হয় না। যদি আমার বিষয়ে কোনো সত্যনিষ্ঠ এবং যুক্তিযুক্ত বিতর্ক থাকে, আমি তা শোনার জন্য প্রস্তুত।
এই যেমন মুজিব সিনেমা ১ টাকা পারিশ্রমিক নেওয়ায়, অন্তর্জালে সমালোচনা হয়। যারা সমালোচনা করেন তাদের কি উত্তর দিবেন।
আশ্চর্য লাগে এই সমালোচনা শুনে মাঝে মাঝে মনে হয়– আমি বুঝি পারিশ্রমিক না নিয়ে কোনো বড় অপরাধ করে ফেলেছি! চুরি করিনি, দুর্নীতি করিনি, দেশের ক্ষতি করিনি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমাকে ঘিরে এই একতরফা সমালোচনা? আমি যদি বাইরে ১০০ টাকায় কাজ করে এখানে ১০ হাজার টাকা দাবি করতাম–তখন অন্তত সমালোচনার একটা ভিত্তি থাকত। নিজের শ্রমের দাম কি কেউ নিজে ঠিক করে না? আপনিও কি নিজের পছন্দমতো বেতনে চাকরি করছেন না? আর এটাই প্রথম না– কাজের ক্ষেত্রে টাকাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেইনি, আমার কাছে গুরুত্ব পায় টিম, গল্প এসবই। সবশেষ ‘উনিশ ২০’-এর কথাই ধরুন, যেভাবে চুক্তি হয়েছিল, পুরো টাকা নেইনি। চাইলে প্রযোজকের কাছ থেকে শুনতে পারেন।
কিন্তু এটাও বলা হয়, এ পারিশ্রমিকের জন্য গেল সরকার আপনাকে পূর্বাচলে জমি উপহার দিয়েছে?
১ টাকার পারিশ্রমিক আর পূর্বাচলের জমি– এই দুই বিষয়ে যে মুখরোচক গল্পটা ছড়ানো হয়েছে, সেটা যতটা শোনা যাচ্ছে, বাস্তবতা থেকে ঠিক ততটাই দূরে। ফেসবুকে তো যা খুশি বলা যায়– প্রমাণ লাগে না, দায়ও নিতে হয় না। রাজউকের ওয়েবসাইটে গেলে একদম স্পষ্ট দেখা যায়– জমি কীভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ‘শিল্পী কোটায়’ এর আগেও ১৫১ জন শিল্পী প্লট পেয়েছেন– তাদের তো কেউ ‘মুজিব’ সিনেমায় ছিলেন না, কেউ ১ টাকা পারিশ্রমিক নেননি। তাহলে? আর আমি কি প্রথম শিল্পী, যিনি রাজউকের জমি পেয়েছি? আমি নিয়ম মেনে আবেদন করেছি, সরকার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ করেছি– যেমন বাকিরাও করেছেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রেই গল্পটা অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যেন সিনেমা আর জমি কোনো লেনদেনের অংশ! আসলে উদ্দেশ্য পরিষ্কার– তথ্য তুলে ধরা নয়, জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানো। আর বিভ্রান্তি তৈরির জন্য সত্যের চেয়ে মিথ্যাটা বেশি কার্যকর।
আপনার রাজনৈতিক আদর্শ কী?
বেন কিংসলে মহাত্মা গান্ধী হয়েছেন, মরগান ফ্রিম্যান ও ইদ্রিস এলবা ম্যান্ডেলার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন– তাতে কি তারা ওই জাতির, ওই ইতিহাসের প্রতিনিধি হয়ে গেছেন? তাহলে আমার বেলায় এই প্রশ্নটাই বা কেন আসে? ‘মুজিব’ সিনেমায় কাজ করার পর থেকেই নানা গুঞ্জন– আমি নাকি এমপি হচ্ছি, ১ টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছি সুবিধা পাওয়ার জন্য। অথচ বাস্তবটা কী? কেউ যদি মনে করেন, এ সিনেমার বিনিময়ে আমি কোনো বিশেষ সুবিধা পেয়েছি, তাহলে অনুগ্রহ করে অনুসন্ধান করুন, প্রমাণ নিয়ে আসুন, দর্শকদের সামনে তুলে ধরুন। আর একটি বিষয় একেবারেই স্পষ্ট করে বলা জরুরি– অনেক বছর আগেই আমি জানিয়েছি, আমি রাজনীতিতে আসছি না। সেটি ছিল আমার ব্যক্তিগত ও সচেতন সিদ্ধান্ত। কেউ চাইলে সেই সময়কার বক্তব্য রেকর্ড খুঁজেও পাবেন। রাজনীতি আমার পথ নয়। আমি অভিনয়টাকে ভালোবাসি, বুঝি এবং এখানেই থাকতে চাই।
একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে রাষ্ট্রনির্ভর কোনো কাজ করলে– তা নিয়ে রাজনীতিকরণ এখন একরকম ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। আপনি কী মনে করেন, এই প্রবণতা শিল্পের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করে?
শুধু শিল্পী কেন– যে কোনো পেশার মানুষকেই আপনি যদি অযাচিতভাবে রাজনৈতিক ফ্রেমে আটকে দিতে চান, সেটা তার কাজের স্বাধীনতাকে সরাসরি আঘাত করে। এতে ব্যক্তি নয়, ক্ষতি হয় বৃহত্তর সমাজের তাতে শুধু বিভক্তিই বাড়ে, আর দেশ পিছিয়ে পড়ে। প্রত্যেককে তার কাজটা শান্তিতে করতে দিন– এটাই তো এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ। যে যার কাজটা নিষ্ঠা আর সততার সঙ্গে করে গেলে, তাতেই দেশের লাভ।
এরপরও কি অন্য কারও বায়োপিকে কাজ করতে চান?
আমি একজন অভিনেতা। আমার কাজ চরিত্রে ঢুকে তাকে সত্যি করে তোলা। পরিচালক যদি আমাকে কোনো চরিত্রে উপযুক্ত মনে করেন, আমি সবসময় প্রস্তুত।
সামনে নতুন কি পাচ্ছেন দর্শক আপনার থেকে?
সামনে দর্শক ‘নূর’, ‘লহু’, ‘জ্যাজ সিটি’ ও ‘ঠিকানা বাংলাদেশ’ দেখবেন। আর এখন দেশে এবং দেশের বাইরে কথা চলছে। ইনশাল্লাহ দ্রুতই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর ফ ন শ ভ র জন ত র জন য ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি